দুই কিংবদন্তির জন্মদিন আজ
কিংবদন্তি প্রয়াত অভিনেতা আলী যাকের ও আনোয়ার হোসেনের জন্মদিন রবিবার (৬ নভেম্বর)।
১৯৪৪ সালের ৬ নভেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার রতনপুরে জন্মগ্রহণ করেন আলী যাকের। ২০২০ সালের ২৭ নভেম্বর মৃত্যুবরণ করেন তিনি। বেঁচে থাকলে ৭৮ বছরে পা রাখতেন এই গুণীজন।
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনেই নাট্যচর্চা শুরু করেছিলেন আলী যাকের। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে আরণ্যকের ‘কবর’ নাটকে অভিনয় করেছিলেন তিনি।
এরপর নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের সঙ্গে যুক্ত হন এবং মৃত্যুর আগে এই নাট্যদলের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে গেছেন।
‘অচলায়তন’, ‘বাকী ইতিহাস’, ‘সৎ মানুষের খোঁজে’, ‘তৈল সংকট’, ‘এই নিষিদ্ধ পল্লীতে’, ‘কোপেনিকের ক্যাপ্টেন’সহ বেশ কয়েকটি মঞ্চ নাটকের নির্দেশনাও দিয়েছেন এই নাট্যজন। অভিনয়, নির্দেশনার বাইরে তিনি ছিলেন একজন নাট্যসংগঠক; পাশাপাশি যুক্ত ছিলেন লেখালেখির সঙ্গে।
দীর্ঘ কর্মজীবনে সংস্কৃতি অঙ্গনে অবদানের জন্য ১৯৯৯ সালে সরকার তাকে একুশে পদকে ভূষিত করে। এ ছাড়া, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার, বঙ্গবন্ধু পুরস্কার, মুনীর চৌধুরী পদক, নরেন বিশ্বাস পদকসহ বিভিন্ন সম্মাননা পেয়েছেন আলী যাকের। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের অন্যতম ট্রাস্টি আলী যাকের যুক্তরাজ্যের রয়্যাল ফটোগ্রাফিক সোসাইটিরও সদস্য ছিলেন।
আলী যাকেরের স্ত্রী সারা যাকেরও মঞ্চ আর টেলিভিশনের এক সময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী। তাদের বিয়ে হয় ১৯৭৭ সালে। তাদের দুই ছেলেমেয়ে ইরেশ যাকের ও শ্রিয়া সর্বজয়াও অভিনয়শিল্পী।
অন্যদিকে কিংবদন্তি অভিনেতা আনোয়ার হোসেন ১৯৩১ সালের ৬ নভেম্বর জামালপুর জেলার সরলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন তার বাবা-মায়ের তৃতীয় সন্তান।
আনোয়ার হোসেন স্কুলজীবনে প্রথম অভিনয় করেন। ১৯৫৭ সালে আনোয়ার হোসেন ঢাকায় চলে আসেন। এ বছরই পরিচয় ঘটে পরিচালক মহিউদ্দিনের সঙ্গে। এর পর পরই তিনি অভিনয় শিল্পে জড়িয়ে পড়েন। তার অভিনীত প্রথম সিনেমা ‘তোমার আমার’। এরপর একের পর এক সিনেমায় অভিনয় করতে থাকেন এই বরেণ্য শিল্পী।
অভিনেতা আনোয়ার হোসেন অভিনীত সিনেমাগুলোর মধ্যে রয়েছে-‘নবাব সিরাজউদ্দৌল্লাহ’, ‘নাগর দোলা’, ‘জীবন থেকে নেওয়া’, ‘সূর্যস্নান’, ‘লাঠিয়াল’, ‘জোয়ার এলো’, ‘কাঁচের দেয়াল’, ‘নাচঘর’, ‘দুই দিগন্ত’, ‘বন্ধন’, ‘পালঙ্ক’, ‘অপরাজেয়’, ‘পরশমণি’, ‘শহীদ তিতুমীর’, ‘ঈশা খাঁ’, ‘অরণ বরুণ কিরণমালা’, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘রংবাজ’, ‘নয়নমনি’, ‘রূপালী সৈকতে’, ‘ধীরে বহে মেঘনা’, ‘ভাত দে’ উল্লোখযোগ্য। নায়ক হিসেবে তার শেষ সিনেমা ‘সূর্য সংগ্রাম’।
১৯৭৫ সালে প্রথম প্রদানকৃত জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার বিজয়ী অভিনেতা ছিলেন আনোয়ার হোসেন। নারায়ণ ঘোষ মিতা পরিচালিত ‘লাঠিয়াল’ চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে পুরস্কারটি জিতে নেন তিনি।
এরপর ১৯৭৮ সালে আমজাদ হোসেনের ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ সিনেমায় সহ-অভিনেতা হিসেবে প্রশংসিত হন তিনি এবং একইসঙ্গে দ্বিতীয়বার পান এই রাষ্ট্রীয় পুরস্কার। এ ছাড়া, ২০১০ সালে তাকে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার-এ আজীবন সম্মাননায় দেওয়া হয়।
এএম/এমএমএ/