উত্তরখন্ডে ভারত সরকার ফিল্ম সিটি বানাবে
চলচ্চিত্র নির্মাতাদের জনপ্রিয় শুটিং গন্তব্য ‘উত্তরখন্ড’। শীঘ্রই রাজ্যটিতে একটি ফিল্ম সিটি বা চলচ্চিত্র নির্মাণের শহর তৈরির দায়িত্ব পেয়েছে রাজ্য সরকার। পাহাড়ি অঙ্গরাজ্যটিতে তাদের একটি উপযুক্ত জায়গায় জমি খোঁজার জন্য বলা হয়েছে।
সিঙ্গেল উইন্ডো ক্লিয়ারেন্স সিস্টেমে বিশেষ একক সুবিধা লাভ পদ্ধতিতে উত্তরখন্ডের রাজ্য সরকারের মাধ্যমে অঙ্গরাজ্যটি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শুটিংয়ের জন্য জনপ্রিয় হয়েছে। পুস্কর সিং ধামী তাদের মুখ্যমন্ত্রী।
রাজ্যটি ভারতের উত্তরের, হিমালয় একে দুভাগ করেছে। প্রাচীন তীর্থকেন্দ্রগুলো ছড়িয়ে আছে। হিন্দুদের পবিত্র নদী ‘গঙ্গা’, আমাদের ‘পদ্মা’র জন্ম উত্তরখন্ডের হিমালয়ের পাহাড়গুলোতে। তারা বলেন, গঙ্গোত্রীর পাহাড়গুলো। গঙ্গা নদীর পূর্ণ্যস্থানের একটি এখানে পড়েছে, নাম ‘গঙ্গা আরতি’। তীর্থকেন্দ্রগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত কেদারনাথ, এক প্রাচীন শহর। গঙ্গোত্রী পর্বতগুলোতের দুটি নিয়ে গড়া প্রাচীন শহরটি। সবচেয়ে নামকরা কেদারনাথ তীর্থ। সেখানেই মন্দির। একটি বাঁধও আছে। এখন রুদ্রপরাগ শহরের একটি তীর্থকেন্দ্র। তুষারে আবৃত্ত পাহাড়গুলোর পাশে শহরটি। কেদারনাথ মন্দিরের জন্য শহরটিও ভুবনবিখ্যাত। হিন্দুদের চারটি সর্ববিখ্যাত তীর্থকেন্দ্রের মধ্যে কেদারনাথই সবচেয়ে দুর্গম। হিমালয়ের পাহাড়গুলোর মধ্যে মন্দির কেদারনাথ, মাটি থেকে ১১ হাজার ৭৫৫ ফিট ওপরে। ফলে অসম্ভব কঠিন তাতে প্রবেশ। ‘জিম করবেট ন্যাশনাল পার্ক’ এখানেই। বিভিন্ন ধরনের স্থানীয় বন্যপ্রাণীর বাস। বিখ্যাত ঋষিকেষও এখানে, একটি ইয়োগা শিক্ষাকেন্দ্র।
ভারত সরকারের স্পেশাল প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি বা বিশেষ প্রধান সচিব অভিনব কুমার সরকারের পক্ষে উত্তরখন্ড রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পুস্কর সিং ধামীর দিল্লীর ক্যাম্প অফিসে তার তথ্য ও যোগাযোগ বিভাগের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সভা করেছেন। মঙ্গলবারের সভায় তিনি তাদের চলচ্চিত্র শহরটির জন্য উপযুক্ত অবকাঠামো নির্মাণ, মৌলিক শুটিংগুলো করার উপায় রাখার ব্যবস্থা, প্রযোজনা সংশ্লিষ্ট সুবিধাদি রাখাসহ সঠিক অ্যাকশন প্ল্যান বানাতে বলেছেন, জানানো হয়েছে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।
অভিনব কুমার তাদের কাজগুলো করতে একটি জাতীয় পর্যায়ের চলচ্চিত্র প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের সঙ্গে আলোচনা ও সহযোগিতা নেবার নির্দেশ দিয়েছেন এবং তাদের একটি শাখা উত্তরখন্ডের চলচ্চিত্র শহরে রাখতে বলেছেন।
আরো একটি পরিকল্পনা তৈরি করতে হতে পারে তাদের বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় মোবাইল থিয়েটারগুলো কীভাবে কাজ করবে ও তাদের কিভাবে সরকারীভাবে অনুদান দেওয়া হবে সেজন্য। পরিকল্পনায় থাকবে সীমান্ত এলাকাগুলোর মানুষদের বিনোদনে কাজ করা প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তিদের সহযোগিতাও।
উত্তরখন্ডের নানা আঞ্চলিক ভাষা ও তাদের জীবনযাপনের ওপর নির্ভর করে বানানো ছবিগুলো এবং ছবির মানুষদের সাহায্য করতে সেগুলো জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শনের জন্যও কাজ করতে বলা হয়েছে। ইউনিভার্সিটি অব উত্তরখন্ডে চলচ্চিত্র ও চলচ্চিত্র নির্মাণের কোসগুলো যুক্ত হতে পারে বলে তাদের ভাষ্যে আছে।
ভারতীয় হিন্দি ভাষার চলচ্চিত্রগুলোর দৃশ্য ধারণে উত্তরখন্ডের বিভিন্ন বিখ্যাত জায়গার উপস্থিতি শুরু বিমান রায়ের ১৯৫৮ সালের প্যারা-নরমাল রোমান্স বা অস্বাভাবিক ভালোবাসার ছবি ‘মধুমতি’তে। সিনেমাটিতে অভিনয় করেছেন বম্বের সুপারস্টার ও হিন্দি সিনেমার প্রথম কিংবদন্তী অভিনেতা দিলীপ কুমার ও সেই সোনালী সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেত্রী, নৃত্যশিল্পী এবং সংসদ সদস্য বৈজয়ন্তীমালা। দুই সুপারস্টারের ছবির শুটিং করা হয়েছে আলমোরার পাহাড়ি এলাকাগুলোতে।
বিখ্যাত অন্য ছবিগুলোর মধ্যে আছে-করণ জোহরের ‘স্টুডেন্ট অব দি ইয়ার’-২০১২ ও ’১৯ সালের সিরিজ, ‘রক অন’র পরিচালক (ভারত সরকারের সেরা ছবি হয়েছে অসাধারণ শৈল্পিক ক্যামেরার কাজের জন্য) ও হিন্দি ভাষার অভিনেতা অভিষেক কাপুরের ‘কেদারনাথ’। উত্তরপ্রদেশের শ্রী নারায়ণ সিংয়ের বিখ্যাত ‘বাত্তি গুল মিটা চালো’ নামের ২০১৮ সালের ছবিটিও। বার্লিন ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ‘দিল সে’ নিয়ে ১৯৯৮ সালে যাওয়া চিত্রনাট্যকার, পরিচালক, অভিনেতা, সিনেমার বিখ্যাত ডায়লগ লেখক ও কাস্টিং ডিরেক্টর উত্তরপ্রদেশের তিগমানশু ধুলিয়ার বিখ্যাত ‘প্রাণ সিং তোমার’ এখানে শুটিং করে নাম করেছে।
ভারতের ‘মুম্বাই ফিল্ম সিটি’ আছে মহারাষ্ট্রে। হিন্দি ছবির ভুবন। দক্ষিণের রাজ্য তামিলনাড়ুর ছবিগুলোও অত্যন্ত বিখ্যাত। তাদের সিনেমা সিটি আছে রাজধানী চেন্নাইতে। নাম ‘এম. জি. আর. ফিম্ম সিটি’। একটি সমন্বিত চলচ্চিত্র নির্মাণ শহর। সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও বিখ্যাত অভিনেতা এবং চলচ্চিত্র নির্মাতা এম.জি. রামচন্দ্রন’র নামে শহরটি গড়ে তোলে রাজ্য সরকার।
তেলেঙ্গানা রাজ্যের রামুজি ফিল্ম সিটি দেশের একমাত্র থিমেটিক চলচ্চিত্র নির্মাণের শহর, রাজধানী হায়দেরাবাদে। এটিই বিশ্বের সবচেয়ে বড় সমন্বিত চলচ্চিত্র শহর বা ইনটিগ্রিটেড ফিল্ম সিটি। বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্টুডিও সিনেপ্লেক্সটির জন্য তাদের গিনেজ বুকের সার্টিফিকেট রয়েছে। একটি সমন্বিত চলচ্চিত্র স্টুডিও কমপ্লেক্স আছে। তৈরি করেছেন নিজের নামে ভারতের চলচ্চিত্র প্রযোজক ও গণমাধ্যম বিনিয়োগকারী চেরকুরি রামুজি রাও।
২০২০ সালে ২০ কোটি মানুষের ও সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য উত্তরপ্রদেশ দেশের সবচেয়ে বড় চলচ্চিত্র শহর নির্মাণের ঘোষণা করেছে। সাম্প্রতিক রাজ্য হিসেবে উত্তরখন্ডও একটি চলচ্চিত্র শহর নির্মাণের ঘোষণা করলো।
ছবি : দিলীপ কুমার-বৈজয়ন্তীমালার ছবি উত্তরখন্ডে শুটিং করা মধুমতি, সম্প্রতি শুটিং করা একটি সিনেমা, মুম্বাইয়ের একটি শুটিং স্পট, এমজিআর ফিল্ম সিটি, রামুজি ফিল্ম সিটি ও উত্তরপ্রদেশের পরিকল্পনা ছবির শহরের জন্য।
ওএস।