ইরানি পরিচালকের অভিযোগ নিয়ে যা বললেন অনন্ত জলিল
‘দিন : দ্য ডে’ সিনেমা মুক্তির পর থেকেই নানা বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন ঢাকাই সিনেমার প্রযোজক ও অভিনেতা অনন্ত জলিল। মিশা সওদাগরের সঙ্গে তর্কযুদ্ধের পর এবার এই সিনেমার নির্মাতা ইরানি পরিচালক মুর্তজা অতাশ জমজমের সঙ্গে ঝামেলায় জড়ালেন অনন্ত জলিল। পরিচালক দাবি করেছেন সিনেমার নির্মাণের টাকা পরিশোধ করেনি অনন্ত। তাই তার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিকভাবে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন মুর্তজা অতাশ জমজম।
বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) ইনস্টাগ্রামে এক পোস্টের মাধ্যমে অনন্ত'র বিরুদ্ধে চুক্তি ভঙ্গের নানা অভিযোগ করেছেন এই নির্মাতা। তিনি জানান, তেহরানে অভিযোগ নিবন্ধন এবং বাংলাদেশের আদালতে তিনি মামলা করতে যাচ্ছেন।
অভিযোগে তিনি লিখেন, ‘অনন্ত জলিল আমাদের সঙ্গে চুক্তি এবং প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছেন। ছবিটির অর্ধেক প্রযোজনা আমাদের। বাকিটা তার। তিনি আমাদের অর্ধেক প্রযোজিত ছবি নষ্ট করে দিয়েছেন। ‘ডে’ (রুজ) ছবিটি নিয়ে চুক্তিতে যেসব পরিকল্পনা করা হয়েছিল তার কিছুই ঘটেনি। তিনি আমাদের প্রযোজনা নষ্ট করে দিয়েছেন। তিনি তার মতো করে ছবিটি চালিয়েছেন। নিজের মতো করে। এটা সরাসরি আমাদের প্রধান চুক্তির লঙ্ঘন। অথচ আমি এই আয়োজনের প্রধান প্রযোজক।’
এর প্রেক্ষিতে অনন্ত জলিল মুখ খুলেছেন। একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে অনন্ত বলেন, ‘ ‘দিন : দ্য ডে’ সিনেমা নিয়ে পরিচালকের অভিযোগ ও আমার বক্তব্য। আজ বিকাল থেকে দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা আমাকে ফোন দিয়ে জানতে চাইছেন যে, কোরবানি ঈদে মুক্তিপ্রাপ্ত আমার সিনেমা ‘দিন : দ্য ডে’র পরিচালক ইরানি নাগরিক মুর্তজা অতাশ জমজম সিনেমাটি নিয়ে আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ করেছেন। তার অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিস্তারিত বিষয় আমি এই পোস্টের মাধ্যমে তুলে ধরছি।
দিন : দ্য ডে’র শুটিং শুরু হয় ২০১৯ সালে ইরান থেকে। শেষ হয় ২০২০ সালে। বাংলাদেশসহ আরও কয়েকটি দেশে আমরা সিনেমাটির শুটিং করি। আমি শুরুতেই বলে এসেছি, এ সিনেমাটি প্রযোজনা করেছে ইরান। আমার সঙ্গে চুক্তি আছে যে, সিনেমাটির বাংলাদেশে যেসব কাজ হবে (শুটিং, ডাবিং) সেটার ব্যয়ভার আমি বহন করব এবং আমি সেটাই করেছি। চুক্তি অনুযায়ী ইরানসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে শুটিংয়ের খরচ বহন করবে ইরানি প্রযোজক। ইরান যে সিনেমাটির মূল প্রযোজক সেটা পরিচালকই তার স্ট্যাটাসে দেওয়া একটি বাক্যের (আমি ছিলাম সিনেমাটির মূল প্রযোজক) মাধ্যমে স্বীকার করেছেন। এর মাধ্যমে একটা বিষয় পরিষ্কার হয় যে, সিনেমাটিতে আমি শুধু বাংলাদেশের খরচ বহন করেছি এবং এটাই ছিল চুক্তি। ২০১৯ সাল থেকে আজ পর্যন্ত দেশি-বিদেশি বিভিন্ন পত্রিকা, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশন চ্যানেল- সব জায়গাতেই সাক্ষাৎকারসহ বিভিন্ন প্রচরণায় আমি বলেছি 'দিন : দ্য ডে' সিনেমার মূল প্রযোজক ইরানি। আমি শুধু বাংলাদেশের শুটিংকৃত অংশটুকুর খরচ বহন করেছি।’
অনন্ত জলিল লিখেন, ‘সিনেমার নামের ক্ষেত্রে আমি বাংলায় একটি নাম ব্যবহার করেছি। তাও ‘ডে’-এর বাংলা, অর্থাৎ ‘দিন’। ইরানি প্রযোজকের দেওয়া নামও (ডে) কিন্তু সিনেমায় রয়ে গেছে। এটাও আমাদের মৌখিক আলোচনায় ছিল। যেহেতু সিনেমাটি বাংলাদেশে মুক্তি দেওয়া হবে, তাই বাংলা নাম থাকাটাই যুক্তিযুক্ত। আর আন্তর্জাতিকভাবে মুক্তির জন্য সঙ্গে ইংরেজি নামও রয়েছে। সুতরাং নাম নিয়ে প্রশ্ন তোলাটা অবান্তর। তিনি (ইরানি নির্মাতা) যে গল্পের কথা বলেছেন, সেটা আমরা দু’জনেরই আইডিয়া। সিনেমার গল্প আমি এবং মুর্তজা সাহেব দু’জনেই আলোচনা করে ঠিক করেছি। ইরানে শুটিং শুরুর পর ইরানি প্রযোজক আমাদেরকে সম্মানের সঙ্গে পাঁচতারকা হোটেলে রেখেছেন। আমরাও বাংলাদেশে শুটিংয়ের সময় ইরানি ইউনিটকে ঢাকার সোনারগাঁ হোটেলে রেখেছিলাম। সম্মান এবং আতিথিয়েতায় কোনো ঘাটতি রাখিনি। এ সিনেমার পরিচালক যেহেতু মুর্তজা অতাশ জমজম, তাই শুটিংয়ের যাবতীয় ইক্যুপমেন্ট, অর্থাৎ এইট-কে রেজুলেশনের ক্যামেরা তিনি ইরান থেকেই সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন। যেহেতু এইট-কে রেজুলেশনের ক্যামেরা বাংলাদেশে নেই। ইরানসহ অন্যান্য দেশের শুটিংয়ের ফুটেজ, এমন কী বাংলাদেশে শুটিংয়ের ফুটেজও তিনি শুটিং শেষে ইরান নিয়ে গেছেন, লাইনআপ করার জন্য। ২০২০ সালে শুটিং শেষে তিনি আমাকে এডিট করা একটা লাইনআপ পাঠালেন। আমি সেটা দেখে গল্পে বেশ কিছু জায়গায় অসামঞ্জস্যতা দেখে বলেছি, আমাকে একটা কপি দেন, আমি সেটা ঠিক করে দিচ্ছি। যেহেতু ইরান গিয়ে এডিটিং করা সম্ভব নয়, তাই আমি ঠিক করি ভারতের হায়দ্রাবাদের অন্নপূর্ণা স্টুডিওতে কাজটি করব। সেই ফুটেজের কপি তিনি নিজেই সঙ্গে করে অন্নপূর্ণা স্টুডিওতে নিয়ে আসেন। আমাদের সঙ্গে ৪-৫ দিন হায়দ্রাবাদে অবস্থান করে তিনি নিজ দেশ ইরানে ফিরেও যান। আমরা সিনেমাটিতে ডলবি সাউন্ড ব্যবহার করতে চাইলাম। যেহেতু ডলবি সাউন্ড ব্যবহার করলে তাদের (ডলবি কোম্পানির) লাইসেন্স লাগে, আর ডলবি আমেরিকান কোম্পানি, ইরান সেটা ব্যবহার করতে পারবে না, তাই আমি বলেছি আমার দেশে (বাংলাদেশ) ডলবি সাউন্ড ব্যবহার করব। বিষয়টিতে তিনি রাজি হয়েই সশরীরে ভারতের হায়দ্রাবাদের অন্নপূর্ণা স্টুডিওতে সিনেমাটির ফুটেজ নিয়ে আসেন। যদি কোনো অর্থ পাওনা থাকত তাহলে তিনি কী ফুটেজ নিয়ে আসতেন? এ ছাড়া সিনেমাটির সম্পূর্ণ ফুটেজ এখনো তার কাছেই রয়ে গেছে যেহেতু তিনি সিনেমাটির মূল প্রযোজক এবং পরিচালক, তাই তার কাছে সেটা থাকাটাই স্বাভাবিক।’
তিনি আরও লিখেন, ‘আমি একটা কথা স্পষ্ট বলতে চাই, চুক্তিতে যেভাবে যা কিছু উল্লেখ ছিল সে অনুযায়ীই আমি কাজ করেছি। যদি আমার কাছে তিনি ১০০ টাকাও অর্থাৎ কোনো অর্থ পাওনা থাকতেন তাহলে তিনি কী আমাকে সিনেমার সম্পূর্ণ ফুটেজ দিতেন? কিংবা ফুটেজ না পেলে আমি কী মুক্তি দিতে পারতাম? যেহেতু তার কাছেই শুটিংয়ের পর সম্পূর্ণ ফুটেজ ছিল এবং এখনো রয়েছে! নিশ্চয় তার অনুমতি এবং সম্পূর্ণ সম্মতিতেই আমি সিনেমাটি মুক্তি দিয়েছি। এখন তার অবান্তর অভিযোগ মূলত আমাকে ও আমার দেশ অর্থাৎ বাংলাদেশকে ছোট করার অপপ্রয়াস বলে আমি মনে করি। আরও উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, ২০২১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি আমরা যখন বাংলাদেশে হোটেল লা মেরিডিয়ানে এ সিনেমার গান ও প্রাথমিক ট্রেলার উদ্বোধন করি, তখনো তিনি উপস্থিত ছিলেন এবং সিনেমাটি যে আমরা বাংলাদেশে মুক্তি দেব, সে ব্যাপারে কোনো আপত্তি জানাননি। আমি এটাও বলেছি যে, ইরান যদি সময়মতো মুক্তি দিতে না পারে তাহলে আমি বাংলাদেশে মুক্তি দেব। এসব নিয়েও তখন কোনো আপত্তি করেননি তিনি। ইরান সময়মতো মুক্তি দিতে পারছে না বলে, তিন বার আমরা মুক্তির তারিখ ঘোষণা দিয়েও সেটা পরিবর্তন করি। বাংলাদেশে মুক্তির সময় পরিবর্তনের কারণে আমার ইমেজ ক্ষুণ্ন হচ্ছে জেনেও শুধু তাদের প্রতি সম্মান জানিয়ে আমি সেটা মেনে নিয়েছি। শুরু থেকেই সবসময় আমাদের মধ্যে ভালো সম্পর্ক ছিল এবং সেটা এখনো আছে বলে আমি মনে করি।’
‘দিন : দ্য ডে’ সিনেমায় অনন্ত'র সঙ্গে অভিনয় করেন বর্ষা। এতে ইরান, আফগানিস্তান, তুরস্কসহ বিভিন্ন দেশের শিল্পীরা অভিনয় করেছেন। যৌথ প্রযোজনা হিসেবে সিনেমাটি ইরান ও বাংলাদেশে একই সময়ে মুক্তির কথা থাকলেও সেটি আর হয়নি।
এএম/এসজি