মুভি রিভিউ
মৃধা বনাম মৃধা: সপরিবারে দেখার মতো চলচ্চিত্র
‘মৃধা বনাম মৃধা’ মুক্তি পেয়েছে গেল বছরের ২৪ ডিসেম্বর। রনি ভৌমিক পরিচালিত ছবিটি মুক্তির পর থেকেই দর্শকমহলে বেশ আলোচনা শুরু হয়েছে। বাংলা সিনেমাপ্রেমীরা অনেকেই বলছেন, ছবিটি সিনেমা হলে ফিরিয়ে এনেছে পরিবার নিয়ে ছবি দেখার চল। মুক্তির পর থেকেই এতো এতো আলোচনা যে ছবিকে ঘিরে, কেমন ছিল সেই ছবি? চলুন, একটু আলোচনায় আসা যাক; বোঝা যাক চলচ্চিত্রটির খুঁটিনাটি কিছু দিক।
বাবা এবং ছেলের সম্পর্কের রসায়নই ‘মৃধা বনাম মৃধা’ ছবির মূল বিষয়বস্তু। আর আট-দশটা বাঙালি মধ্যবিত্ত পরিবারে বাবার মূর্তি যেমন হয়ে থাকে, তেমনই এক বাবার দেখা মিলবে এই ছবির শুরুতে। স্ত্রী বিয়োগের পর আশরাফুল মৃধা একাই বাড়ির খুঁটিনাটি সবকিছু খেয়াল রেখে চলেছেন। এমনকি বেশি রাত অবধি তার পুত্র এবং পুত্রবধূর কক্ষের লাইট জ্বালানো থাকার কারণে বিদ্যুৎ বিল বেশি আসবে কিনা তা নিয়েও পিতার মাথাব্যাথা। পিতার এসব ছোটখাটো বিষয়েও নাক গলানোর কারণে দিনে দিনে ক্রমশ জটিল হতে থাকে পিতা-পুত্রের সম্পর্ক। দুজনের একজনও যখন নিজেদের ইগোর কাছে মাথা নত করে না, তখন জল গড়ায় বহুদূর! ঘটনাচক্রে সেই জটিলতা গিয়ে ঠেকে আদালতের কাঠগড়া অবধি। গল্পের একদম শেষার্ধে এসে যা দেখেছি তা খানিকটা অযৌক্তিকই মনে হয়েছে। মধ্যবিত্ত বাঙালি পরিবারের গল্প নিয়ে গড়া এই ছবি আমাদের একটা বার্তা তো অবশ্যই দিচ্ছে ছবি শেষে। ক্ষেত্রবিশেষে চিত্রনাট্যের দিকে আরও একটু মনোযোগী হলে ‘মৃধা বনাম মৃধা’ আমার কাছে ২০২১ এর সেরা ছবির একটিই হতো। সেই মনোযোগ যেমন প্রয়োজন ছিল সংলাপ রচনার ক্ষেত্রে, তেমনি প্রয়োজন ছিল ছবির গল্পের শেষার্ধে।
চিত্রগ্রহণ এবং সম্পাদনার জন্য খুব বেশি কসরত হয়তো করতে হয়নি। বড়পর্দায় ‘মৃধা বনাম মৃধা’ দেখতে গিয়ে ঠিক সেরকম সিনেমাটিক ফিল আপনি পাবেন না। বিশেষভাবে উল্লেখ করার মতো কোন শটও নেই। তবুও কেন সিনেমা হলে দর্শক টানছে ‘মৃধা বনাম মৃধা’? উত্তর একটাই, এটি একটি পারিবারিক ছবি। কনসেপ্টের জোর থাকার কারণে দর্শক মহলে অনেকটাই সাড়া ফেলতে পারছে ছবিটি।
খুব বেশি অভিনয়শিল্পীর দেখা মেলেনি ছবিটিতে। কাহিনী মোতাবেক দরকারও হয়নি বেশি চরিত্রের। এখানে অবসরপ্রাপ্ত আইনজীবী এক পিতার চরিত্রে অভিনয় করেছেন তারিক আনাম খান। তারিক আনাম খানের ছেলের চরিত্রে অভিনয় করেছেন সিয়াম। সিয়ামের স্ত্রী চরিত্রে ছিলেন নোভা ফিরোজ। সিনেমার দ্বিতীয়ার্ধে এসে আইনজীবী চরিত্রে দেখা মিলে সানজিদা প্রীতীর। অভিনয়শিল্পীরা যে যার জায়গা থেকে বেশ ভালোই করেছেন। বাবা-ছেলে চরিত্রে তারিক আনাম খান এবং সিয়ামের অভিনয় দেখে বেশ কিছু দর্শকের চোখে পানিও দেখলাম!
বাণিজ্যিক চলচ্চিত্র ছাড়াও সিয়াম যে একটু ভিন্নধারার ছবিতেও নিজেকে প্রকাশ করছেন, সেটি অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। বর্তমানে বাংলাদেশী ছবিতে ভালো অভিনেতা-অভিনেত্রী খুবই প্রয়োজন। ভালো গল্পের ছবিও অনেক সময় দেখা যায় দুর্বল অভিনয়ের কারণে দর্শকপ্রিয় হতে পারছে না। আশা করবো, সিয়াম ভবিষ্যতেও তার নিজ ধারা বজায় রাখবেন। অন্যদিকে, পুত্রবধূ চরিত্রে নোভা ফিরোজের অভিনয়ও ছিল সাবলীল। বেশি সময় জুড়ে পর্দায় সানজিদা প্রীতি পর্দায় ছিলেন না। তবে যেটুকু সময় ছিলেন নিজের চরিত্রের মাঝেই বুঁদ হয়ে ছিলেন তিনি।
ছবিটিতে সংগীতায়োজন করেছেন ইমন সাহা। বাবা, ছেলে এবং পুত্রবধূর মধ্যে যখন কিছুটা মধুর সম্পর্ক যায় সেই সময়কার একটি গানের সংগীতায়োজন বেশ উপভোগ্য ছিল। গানের দৃশ্যায়ণও নান্দনিক ছিল।
সিনেমা হলে সবধরনের দর্শকই যায় এবং যেতে চায়। কখনও কখনও বাংলাদেশী ছবি দেখার আগ্রহ থাকলেও কোনটা দেখবো সেটা ভেবে পাই না আমরা। সিনেমা হলে পরিবার নিয়ে গিয়ে বাংলাদেশি ছবি দেখার চল এখন খুব একটা দেখাও যায় না। কিন্তু ‘মৃধা বনাম মৃধা’ আপনি আপনার পরিবারকে সঙ্গী করে সিনেমা হলে বসে দেখতে পারবেন। এখানেই রয়েছে রনি ভৌমিক পরিচালিত প্রথম ছবি ‘মৃধা বনাম মৃধা’-এর মূল স্বার্থকতা। সবশেষে বলবো, প্রাণ ফিরুক চলচ্চিত্রাঙ্গনে, জোয়ার আসুক নতুনত্বের।