বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে অবশেষে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রদান করা হয়েছে। ১৯৭২ সালের ৪ মে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা-ইসলামাবাদে হাজির হয়ে কবিকে ‘জাতীয় কবি’ ঘোষণা করে গেজেট প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়েছে।
রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আতাউর রহমান স্বাক্ষরিত এক গেজেট প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, গত ডিসেম্বরে উপদেষ্টা পরিষদের এক সভায় অনুমোদিত প্রস্তাব অনুযায়ী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে বাংলাদেশের জাতীয় কবি ঘোষণা করা হয়েছে এবং এটি সকলের অবগতির জন্য গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়েছে।
১৯৭২ সালের ২৪ মে কলকাতা থেকে সরকারী উদ্যোগে কাজী নজরুল ইসলামকে ঢাকায় আনা হয় এবং তাঁর বসবাসের জন্য ধানমন্ডির ২৮ নম্বর (পুরাতন) সড়কের ৩৩০-বি বাড়িটি বরাদ্দ প্রদান করা হয়। এরপর ১৯৭৬ সালের জানুয়ারিতে সরকার তাঁকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করে এবং একই বছরের ২১ ফেব্রুয়ারিতে একুশে পদকে ভূষিত করে। একুশে পদক বাংলাদেশের দ্বিতীয় বেসামরিক সম্মানসূচক পদক হিসেবে বিবেচিত হয়। ১৯৭৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁর বাংলা সাহিত্য এবং সংস্কৃতিতে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ডি.লিট উপাধি প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এবং ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি বঙ্গভবনে একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে তিনি ডি.লিট উপাধিতে ভূষিত হন।
কবি নজরুল ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট ইন্তেকাল করেন। তাঁর ইচ্ছা ছিল, "মসজিদেরই পাশে আমায় কবর দিও ভাই, যেন গোরে থেকেও মুয়াজ্জিনের আজান শুনতে পাই"। এই ইচ্ছার প্রতি সম্মান জানিয়ে তাঁকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়। তাঁর নামাজে জানাজায় ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ অংশগ্রহণ করেন। জানাজার পর রাষ্ট্রপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম, মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান, রিয়াল এডমিরাল এম এইচ খান, এয়ার ভাইস মার্শাল এ জি মাহমুদ, মেজর জেনারেল দস্তগীর জাতীয় পতাকা-মোড়ানো নজরুলের মরদেহ সোহরাওয়ার্দী ময়দান থেকে বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদ প্রাঙ্গণে নিয়ে যান। বাংলাদেশের জাতীয় শোক দিবস হিসেবে তাঁর মৃত্যুর পর দুই দিন রাষ্ট্রীয় শোক পালন করা হয়।
কাজী নজরুল ইসলামকে জাতীয় কবি হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে ২০১৮ সালে কবি নজরুল ইনস্টিটিউট আইন জারি করা হয়। ১৯২৯ সালের ১০ ডিসেম্বর অবিভক্ত ভারতের কলকাতার এলবার্ট হলে সমগ্র বাঙালি জাতির পক্ষ থেকে নেতাজী সুবাস চন্দ্র বসু, বিজ্ঞানী আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়, এস, ওয়াজেদ আলী, দীনেশ চন্দ্র দাশসহ বহু বরণ্যে ব্যক্তিত্বের উপস্থিতিতে কাজী নজরুল ইসলামকে ‘জাতীয় কাণ্ডারী’ এবং ‘জাতীয় কবি’ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার পর তাঁর জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান উপদেষ্টাগণও তাঁকে ‘জাতীয় কবি’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে স্বীকৃতি প্রদান বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের এক মহত্ত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তাঁর সাহিত্যকর্ম ও বিপ্লবী মনোভাব দেশজুড়ে প্রেরণা যুগিয়েছে এবং সাংস্কৃতিক মেলায় তাঁর অবদান অমর হয়ে থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।