শারিরীক শিক্ষা উপ-পরিচালককের জন্য আটকে গেল কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুটবল প্রতিযোগিতা!
লেখা ও ছবি : কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তঃবিভাগ ফুটবল টুর্নামেন্টের জন্য বিভাগগুলোতে চিঠি দিলেও পূর্বের একটি অনাকাংখিত ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন জমা না দেওয়ায় আটকে আছে টুর্নামেন্ট।
ফলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা সবাই।
খোজ নিয়ে জানা গিয়েছে, সর্বশেষ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্ত:বিভাগ ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হয়েছিল তিন বছর আগে-২০১৯ সালের ৭ সেপ্টেম্বর থেকে।
২০২০ ও ২০২১ সালে করোনাভাইরাসের আক্রমণে মহামারি রোগের কারণে আর কোনো ফুটবল বা অন্য কোনো প্রতিযোগিতা আয়োজন করতে পারেননি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ও খেলোয়াড় এবং ক্রীড়াপ্রেমী ছাত্র, ছাত্রীরা।
অবশেষে এই বছর নিয়মানুসারে আন্ত:বিভাগ ফুটবল টুর্নামেন্টের জন্য প্রতিটি বিভাগে বিভাগীয় প্রধান বরাবর চিঠি প্রদান করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অশোভন আচরণসহ তাকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগে শারিরীক শিক্ষা দপ্তরের উপ-পরিচালক মনিরুল আলমের বিরুদ্ধে গঠন করা হয়েছে তদন্ত কমিটি।
খোদ শারিরীক শিক্ষা বিভাগের উপ-প্রধানের আচরণজনিত তদন্তের সুরাহা না হওয়ায় স্বাভাবিকভাবে ফুটবল টুর্নামেন্ট স্থগিত রাখতে হয়েছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ক্রীড়া কমিটিকে।
রেজিস্টার দপ্তর সূত্রে এই বিষয়ে জানা গিয়েছে, ১৪ মার্চ, ২০২২ শারিরীক শিক্ষা দপ্তরের উপ-পরিচালক মনিরুল আলমের বিরুদ্ধে নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অশোভন আচরণসহ হুমকি দেওয়ার অভিযোগ আছে।
জানা গিয়েছে, নির্ধারিত সময় পার হয়ে গেলেও একটি খেলা শুরু না করায় এবং প্রতিপক্ষ দল মাঠে উপস্থিত না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা তার সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি অশোভন আচরণ করেছেন।
এ সময় তিনি এক পর্যায়ে তাদের সঙ্গে মারমুখী ভঙ্গিতে উচ্চবাচ্য করেছেন। বলেছেন, ‘আমি যেভাবে বলি সেভাবে খেলা চলবে, কার সাহস ও ক্ষমতা আছে দেখি তোমাদের খেলা চালায়? আমার যখন ইচ্ছা, তখন খেলা চালাব। এখন কোনো খেলা চলবে না।’ এরপর তিনি মাঠ ছেড়ে চলে গিয়েছেন।
ফলে দুই দিন পর ১৬ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর নৃবিজ্ঞান বিভাগের ৪০ জন শিক্ষার্থী স্বাক্ষরিত লিখিত অভিযোগ প্রদান করা হয়েছে।
এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস (এআইএস) বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মিজানুর রহমানকে আহ্বায়ক, অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক স্বর্ণা মজুমদারকে সদস্য ও রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ আমিরুল হক চৌধুরীকে সদস্য সচিব করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
তাদের কমিটি প্রতিবেদন প্রকাশ এখনো না করায় ঘটনাটির কোন সুরাহা না হওয়ায় আটকে গেল মনিরুল আলমের সমস্যায় কেন্দ্রীয় ফুটবল টুর্নামেন্ট।
ফলে স্বাভাবিকভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ছাত্র, ছাত্রী ও খেলোয়াড়রা।
তবে এই বিষয়ে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক এআইএসের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেছেন, ‘আমরা আমাদের তদন্তের প্রতিবেদন তৈরি করেছি। এই সপ্তাহের মধ্যে জমা দিয়ে দেব। এরপর প্রশাসন বাকী পদক্ষেপ নেবেন।’
তবে এতদিনেও এই তদন্তের সুরাহা না হওয়ার অন্যায় ঘটনাটিকে প্রশাসনের অনীহা হিসেবে দেখছেন খেলাপ্রেমীরা। তাদের মতে, ফলে ভুক্তভোগী হচ্ছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
এই বিষয়ে এইচ. এম. পিয়াস নামের একজন ছাত্র বলেছেন, “যতটুকু শুনেছি, বিগত কোনো এক টুর্নামেন্টে দুই পক্ষের ঝগড়ার কারণে এতদিন আমাদের খেলা বন্ধ ছিল। শারীরিক শিক্ষা দপ্তরে আমরা যাওয়ার পর কর্মকর্তারা বলেছেন, ‘ভিসি স্যারের হস্তক্ষেপের কারণে তোমাদের টুর্নামেন্ট হচ্ছে না।’ আবার টুর্নামেন্ট হবে শুনলাম, খুব আশাবাদী ছিলাম। টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করব। পরে আর হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় সবকিছুর আয়োজন করতে পারে কিন্তু এই ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজনের ক্ষেত্রে দেরী কেন?”
ইমদাদুল ইসলাম নামের আরেকজন বলেছেন, “ফুটবল টুর্নামেন্টের জন্য প্রত্যেক বিভাগের অংশগ্রহণের জন্য চিঠি এসেছে। তারপর থেকে আমরা নিয়মিত অনুশীলন করে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ একদিন শুনি, ফুটবল প্রতিযোগিতা হচ্ছে না। কেন? আর কবে হবে? যদি তারা টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে না পারেন, তাহলে কেন বিভাগগুলোতে চিঠি দিয়েছেন? আবার ঘোষণা না দিয়ে টুর্নামেন্ট ক্যান্সেল করেছে? এই প্রশ্নগুলোর কোনোটির কোনো উত্তর আমাদের জানা নেই । একটা গুঞ্জনও শুনেছিলাম, ভিসি স্যার নাকি চাননি। তাই হচ্ছে না।’
ফুটবল টুর্নামেন্ট কেন হচ্ছে না জানতে চাইলে অিভিযুক্ত শারিরীক শিক্ষা দপ্তরের উপ-পরিচালক মনিরুল ইসলাম বলেছেন, ‘আমার বিরুদ্ধে করা অভিযোগের সুরাহা না হলে টুর্নামেন্ট করবে না ক্রীড়া কমিটি।’
বিভাগে, বিভাগে টুর্নামেন্টের জন্য চিঠি কেন দেয়া হয়েছে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘আমি ভিসি স্যারের আশ্বাসে চিঠি দিয়েছি।’
এ বিষয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ক্রীড়া কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মোঃ শামিমুল ইসলাম বলেন, “ক্রীড়া কমিটি মনে করেছে তদন্তের বিষয়টি সমাধান হওয়া দরকার যেহেতু শিক্ষার্থীরা করেছে। আমরা উপাচার্যের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছি ও সমাধান চেয়েছি। তিনি বলেছেন, ‘যেহেতু আমরা একটা তদন্ত কমিটি করে ফেলেছি ফলে এখন আমি তাদেরকে ডেকে বলব এ বিষয়টি যত দ্রুত সম্ভব সমাধান করে দিতে।’ তার এই আশ্বাসের পর আমরা ফুটবল টুর্নামেন্টের জন্য বিভাগগুলোতে চিঠি দিয়েছি কিন্তু দৃশ্যমান কোন সিদ্ধান্ত না হওয়ায় আমরা পেন্ডিং করেছি। কমিটি আবার বসেছি এবং উপাচার্যের আবার সময় চেয়েছি কিন্তু তদন্ত কমিটির রিপোট না পাওয়ায় উপাচার্যের সময়ও পাইনি। যে ঘটনা ঘটেছে আমরা মনে করি, কালক্ষেপণ না করে তা সমাধান করা উচিত।”
এতদিন পরেও কেন তদন্তের সুরাহা হয়নি জানতে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ. এফ. এম. মঈনকে একাধিকবার ফোন করলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
ওএফএস।