বৃষ্টির পানি সংরক্ষণে বিজিএমইএ, ওয়াটারএইড কাজ করছে
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের শিল্পকারখানাগুলোতে বৃষ্টির পানি সংগ্রহ ও সংরক্ষণ ব্যবস্থাপনা চালু করে সবুজ পরিবেশনীতি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। তাতে নেতৃত্ব দিচ্ছে তৈরি পোশাক কারখানা ও টেক্সটাইল শিল্পখাত।
ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে পানির ব্যবস্থাপনায় তাদের টেকসই পদ্ধতি পরিবেশে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে-রাজধানীতে আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে উল্লেখ করেছেন বক্তারা।
তারা বলেছেন, বাংলাদেশে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরতায় শিল্পখাতে এভাবে অনেক বেশি পানির ব্যবহার পরিবেশের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক ও ক্ষতিকর হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধিতে প্রয়োজনীয় পানি সরবরাহের দীর্ঘমেয়াদী টেকসই উন্নয়ন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
‘শিল্পখাতে বৃষ্টির পানি সংগ্রহ ও সংরক্ষণ-পানি ব্যবস্থাপনায় টেকসই পদক্ষেপ’ শীর্ষক গোলটেবিলটি ‘ওয়াটারএইড বাংলাদেশ’ ও ‘বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারারস অ্যান্ড এক্সপোর্টারস অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ)’ যৌথভাবে আয়োজন করেছে। ওয়েস্টিন ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৃষ্টির পানি সংগ্রহ ও সংরক্ষণ ব্যবস্থাপনায় শিল্প ও ব্যবসায়িক খাতে টেকসই পানি ব্যবস্থাপনার আলোচনাটি এভাবে সারা দেশে শুরু করতে বৈঠকটি আয়োজন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা। পানির টেকসই সাপ্লাই চেইন ও পরিবেশগত প্রভাবে সম্ভাব্য সুযোগ এবং চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে আলোচনা করেছেন বক্তারা। পাশাপাশি, পোশাক কারখানায় বৃষ্টির পানি সংগ্রহের সর্বোত্তম অনুশীলনগুলো উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেছেন।
‘শিল্পখাতে বৃষ্টির পানি সংগ্রহ ও সংরক্ষণ-পানি ব্যবস্থাপনায় টেকসই পদক্ষেপ’ গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথি বিজিএমইএ’র সভাপতি ফারুক হাসান।
‘গেস্ট অব অনার’ ছিলেন ওয়াটারএইডের বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিন জাহান।
গোলটেবিলে সভাপতিত্ব ও স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন-ওয়াটারএইড বাংলাদেশের পলিসি অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি শাখার পরিচালক পার্থ হেফাজ শেখ।
অতথিদের মধ্যে ছিলেন-বাংলাদেশ অ্যাপারেল ইয়ুথ লিডারস অ্যাসোসিয়েশনের (বায়লা) সভাপতি আবরার হোসেন সায়েম।
বিজিএমইএ’র সভাপতি ফারুক হাসান বলেছেন, ‘প্রগতিশীল মালিকদের সংগঠন হিসেবে বিজিএমইএ টেকসই পানি ব্যবস্থাপনায় বৃষ্টির পানি সংগ্রহ ও সংরক্ষণে বাংলাদেশের গার্মেন্ট কারখানাগুলোকে সক্রিয়ভাবে উৎসাহিত করে চলেছে। এই খাতের শিল্পকারখানাগুলোতে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের বিষয়ে ব্যাপারে ব্যবসায়িকভাবে গুরুত্বারোপ করা প্রয়োজন এবং মাটির নীচের পানির ওপর নির্ভরতা কমাতে কাজ করা উচিত। বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনে সরকারী, বেসরকারী প্রতিষ্ঠান ও উন্নয়ন সংস্থাগুলোকে প্রয়োজনীয় সহায়তা করা উচিত।’
ওয়াটারএইড বাংলাদেশের দেশীয় প্রতিনিধি হাসিন জাহান বলেছেন, ‘ভূগর্ভস্থ পানি কমে যাওয়ায় সারা দেশে পানি নিয়ে আসন্ন সঙ্কট সমাধানে বৃষ্টির পানি সংগ্রহ ও সংরক্ষণ নিয়ে সবার কাজ করা উচিত।’
তিনি আরো জানান, ‘শিল্পখাতের কারখানাগুলোর ছাদের ওপর পর্যাপ্ত জায়গা রয়েছে, যেগুলো সহজেই বৃষ্টির পানি সংগ্রহ ও সংরক্ষণাগার হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এই কাযকর উদ্যোগ ব্যবসায় ক্রমবর্ধমান পানির প্রয়োজন ও সংশ্লিষ্ট সমস্যা মিটিয়ে এই খাতে টেকসই উন্নয়ন সমাধান নিয়ে আসতে পারে।’
হাসিন জাহান বিজিএমইএকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেছেন, ‘বাংলাদেশের গামেন্ট কারখানার মালিকদের বৃষ্টির পানি সংগ্রহ ও সরক্ষণ ব্যবস্থা গ্রহণে উৎসাহিত করে আমাদের পানি সম্পদ রক্ষায় সহায়তায় অনন্য নজির স্থাপন করায় বিজিএমইএকে ধন্যবাদ।’
তিনি বলেছেন, ‘পানি ও পরিবেশ সুরক্ষায় বিভিন্ন প্রচেষ্টা জোরদার করতে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোসহ বেসরকারি খাতের সঙ্গে কাজ করতে ওয়াটারএইড বাংলাদেশ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
‘বাংলাদেশ অ্যাপারেল ইয়ুথ লিডারস অ্যাসোসিয়েশন (বায়লা)’র সভাপতি আবরার হোসেন সায়েম বলেছেন, ‘টেকসই ব্যবস্থাপনা ও পানি সংরক্ষণ প্রক্রিয়ায় শিল্পখাতের অনেক স্মার্ট প্রতিষ্ঠান কাজ করা শুরু করেছে। আমাদের ভবিষ্যৎ বিপর্যয় প্রতিহত করতে ভূগর্ভের পানির ওপর নির্ভরতা কমাতেই হবে। তাই শিল্পখাতের প্রতিষ্ঠানগুলোকে বৃষ্টির পানি সংগ্রহ ও সরক্ষণ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি গ্রহণ করছে।’
তিনি আরো বলেছেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতিতে সম্ভাব্য চালিকাশক্তি তরুণ প্রজন্ম। তাই, তরুণদের মাঝে বৃষ্টির পানি সংগ্রহ ও সংরক্ষণ নিয়ে উন্নয়নধর্মী আধুনিক প্রচারণা চালানো অত্যন্ত জরুরী। তাতে তারা যেন অ্যাডভোকেসি করতে পারেন ও ভবিষ্যত পানি সঙ্কট হ্রাসে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারেন-নিশ্চিত করতে হবে।’
‘শিল্পখাতে বৃষ্টির পানি সংগ্রহ ও সংরক্ষণ - পানি ব্যবস্থাপনায় টেকসই পদক্ষেপ’ গোলটেবিলটিতে অতিথি, উন্নয়ন সহযোগী, জাতীয় পর্যায়ের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও সাপ্লাই চেইন সংশ্লিষ্ট অংশীজনরা; গণমাধ্যম এবং শিক্ষা ক্ষেত্রের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেছেন।
ওয়াটারএইড বাংলাদেশের দেশীয় প্রতিনিধি হাসিন জাহানের কাছে বিজিএমইএ’র ‘সাসটেইনেবিলিটি প্রতিবেদন’ হস্তান্তর এবং ওয়াটারএইড ও আইটিএন-বুয়েটের অংশীদারিত্বে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট পেশাদারদের মধ্যে বৃষ্টির পানি সংগ্রহ ও সংরক্ষণ সনদগুলো বিতরণের করে জনগুরুত্বসম্পন্ন ও অত্যন্ত মূল্যবান এই আলোচনা অনুষ্ঠানটি শেষ হয়েছে।
ওএস।