তেলের দাম কমেছে শুধু ঘোষণাতেই, বাজারে প্রভাব নেই
ভোজ্যতেলের দাম লিটারে সাত টাকা কমানোর ঘোষণা দিলেও বাজারে তার কোনো প্রভাব পড়েনি। আজ সোমবার থেকে নতুন দাম কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বাজারে তেল বিক্রি হচ্ছে আগের দামেই। অর্থাৎ খুচরা পর্যায়ে প্রতি লিটার ২০৫ টাকা, পাঁচ লিটার ৯৭০-৯৮০ টাকা বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। একইভাবে পাইকারি বাজারেও আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে।
পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, নতুন ডিও লেটার দিলে কম দামের তেল পাওয়া যাবে। তাতে আরও দুই থেকে তিন দিন সময় লাগবে, ক্রেতাদের সেই পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
সোমবার (২৭ জুন) রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মোহাম্মদপুরসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে ভোজ্যতেলের এই চিত্র পাওয়া গেছে।
গত রমজানের শেষে দিকে সয়াবিন তেলের বাজার হঠাৎ করেই অস্থির হয়ে উঠে। ঈদের আগ মুহূর্ত বাজার থেকে তেল উধাও হয়ে যায়। আর ঈদের পর ৫ মে এক লাফে তেলের দাম প্রকারেভেদে ৩৮টাকা থেকে ৪২টাকা বাড়ে লিটার প্রতি। তখন দাম বৃদ্ধির জন্য মিলমালিক, পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা একে অপরকে দায়ী করেন।
এরপর গত ৯ জুন বাজেট অধিবেশনের দিন সন্ধ্যায় ভোজ্য তেলের দাম আরেক দফা বাড়িয়ে প্রতি লিটারের দাম নির্ধারণ করা হয় ২০৫ টাকা। অর্থাৎ দাম বাড়ে লিটারে সাত টাকা। দফায় দফায় ভোজ্যতেলের এমন দাম বৃদ্ধিতে সাধারণ ক্রেতারা একেবারে নাকাল হয়ে যান।
ভোক্তাদের স্বার্থ নিয়ে কাজ করা কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ক্যাব জানায়, বিশ্ববাজারে তেলের দাম ২৬ শতাংশের মতো কমেছে। কারণ চলতি বছরের মার্চে বিশ্ববাজারে প্রতি টন সয়াবিন তেলের দাম ছিল এক হাজার ৯৫৬ ডলার। এপ্রিলে কমে প্রতি টন এক হাজার ৯৪৭ ডলার বিক্রি হয়। আর বর্তমানে টনপ্রতি এক হাজার ৪৬৪ ডলার দামে বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ এক মাসে তেলের দাম কমেছে ২৬ শতাংশ। অথচ মিলমালিকরা সোমবার থেকে তেলের দাম লিটারে কমিয়েছে ৩ শতাংশেরও কম। বাজেট ঘোষণার দিন লিটারে ৭ টাকা বাড়ানো হলেও ১৮ দিন পর দাম কমানোর ঘোষণা দিয়েছে ৬ টাকা। আবার এই দাম কমানোর প্রভাব বাজারে দেখা যায়নি সোমবার।
কারওয়ান বাজারের হাজী মিজান এন্টারপ্রাইজের জাকির হোসেন ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, আগের দামেই বিক্রি করা হচ্ছে সয়াবিন তেল। দাম কমেনি। কমতে আরও দুই থেকে তিন দিন সময় লাগবে।
তিনি আরও বলেন, ‘মিল থেকে ডিলারের কাছে আসবে। তারপর আমরা কম দামের অর্থাৎ নতুন রেটের তেল ভোক্তাদের কাছে বিক্রি করতে পারব। বর্তমানে এক লিটার ২০০ থেকে ২০৫ টাকা, ৫ লিটার ৯৭০ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে। মিল থেকে কমলে আমরাও কম দামে বিক্রি করব।’
একই কথা জানান কারওয়ান বাজারের মায়ের দোয়া জেনারেল এন্টারপ্রাইজের মালিক। তিনি বলেন, ‘আগের দামেই এক লিটার ১০৫ টাকা, ৫ লিটার ৯৮০ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে। মিলমালিকরা দাম কমার ঘোষণা দিলেও আমরা হাতে পায়নি।’
মোহাম্মদপুর কৃষিমার্কেটের সিটি এন্টারপ্রাইজের আবু তাহেরও জানান, নতুন দামের তেল পাওয়া যায়নি। ডিলাররা তা দেয়নি। দিলেই কম দামে বিক্রি করা হবে। আগের বেশি দামে কেনা তেলই বিক্রি করা হচ্ছে। শুধু এই দুই বাজার নয়, রাজধানীসহ সারাদেশের একই চিত্র। মিলমালিকরা ঘোষণা দিলেও কম দামে কোথাও কোনো তেল বিক্রি করা হচ্ছে না। আগের বাড়ানো দামেই তেল বিক্রি করা হচ্ছে বিক্রেতাদের কাছে।
উল্লেখ্য,বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ রবিবার (২৬ জুন) সচিবালয়ে ভোজ্যতেলের দাম কমানোর ব্যাপারে কোনো ঘোষাণা দেননি। তবে কয়েক দিন পরই কমবে বলে জানান। এরপর মিলমালিকরা আগে লিটারে ৭ টাকা বাড়িয়ে এবার ৬ টাকা কমানোর ঘোষণা দিয়েছে। তার প্রভাব বাজারে এখনো দেখা যায়নি।
জেডএ/এনএইচবি/এমএমএ/