অর্থনৈতিক স্থবিরতা কাটানোর বাজেট বৃহস্পতিবার
করোনা পরবর্তী অর্থনৈতিক স্থবিরতা কাটাতে দেশের ৫১তম বাজেট উপস্থাপন হচ্ছে আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৯ জুন)। কর্মসংস্থান সৃষ্টি, সামাজিক নিরাপত্তা খাত ও কৃষিখাত এবং নিত্যপণ্যের লাগাম টেনে ধরতে বরাদ্দ বাড়িয়ে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন হচ্ছে।
'কোভিডের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকায় প্রত্যাবর্তন’ স্লোগান নিয়ে আওয়ামী লীগের টানা তৃতীয় মেয়াদে এবং অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল তার মেয়াদে চতুর্থবারের মতো জাতীয় সংসদে বৃহস্পতিবার (৯ জুন) বিশাল ভর্তুকির এ বাজেট উপস্থাপন করবেন।
টাকার অংকে এবারের বাজেটের আকার হচ্ছে ছয় লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। যা বিদায়ী অর্থবছরের চেয়ে ৭৪ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা বেশি এবং জিডিপির (মোট দেশজ উৎপাদন) ১৫ দশমিক ৪০ শতাংশ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিভিন্নখাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে চ্যালেঞ্জ নিয়েই নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত এ বাজেট কার্যকর করতে হবে।
অর্থমন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বাজেটে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে সরকার প্রায় দুই কোটি ৫৬ হাজার টাকা বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দের প্রস্তাব রেখেছে। অন্যান্য খাতেও ব্যয় বাড়ানো হচ্ছে। এজন্য চলতি অর্থবছরের ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে আগামী বছরের জন্য ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করা হবে।
এবারের বাজেটে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ধরা হচ্ছে সাড়ে ৭ শতাংশ। টাকার অংকে নতুন জিডিপির আকার হচ্ছে প্রায় ৪৪ লাখ ১২ হাজার ৮৪৯ কোটি টাকা। আর মূল্যস্ফীতির হার ধরা হচ্ছে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। আগামী অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি দাঁড়াচ্ছে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা।
বাজেটের এ ঘাটতি জিডিপির ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। এটি জিডিপির ৯ দশমিক ৮ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে মোট রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য রয়েছে ৩ লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা। এটি মোট জিডিপির ১১ দশমিক ৩ শতাংশ। নতুন বাজেটে এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা।
বাজেটে ঘাটতি পূরণে আগামী অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ নেওয়া হবে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নেওয়া হবে ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়া হবে ৩৫ হাজার কোটি
টাকা। এ ছাড়া অন্যান্য খাত থেকে নেওয়া হবে ৫ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া বৈদেশিক উৎস থেকে ঋণ ও অনুদান (নিট) গ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৯৫ হাজার ৪৫৮ কোটি টাকা।
জানা গেছে, দ্রব্যমূল্যের লাগাম টানতে নতুন বাজেটে বেশি করে ভর্তুকি বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। এরমধ্যে অর্থনীতির প্রাণ কৃষিখাতকে বেশি করে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এরপর কর্মসংস্থান বাড়ানোর উপরও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। কারণ দারিদ্র্যের হার সাড়ে ২০ শতাংশ থেকে অনেক বেড়ে গেছে।
সবার জন্য সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অবকাঠামো শক্ত করতেও বিভিন্নভাবে বরাদ্দ বাড়ানোর উদোগ নিয়েছে সরকার। চাল ছাড়া প্রায় সব নিত্য পণ্য আমদানি করে চাহিদা মেটাতে হচ্ছে। কিন্তু ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাবে ভোজ্যতেল, ডাল, গম, চিনিসহ প্রায় জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। ডলারের বাজারও লাগামহীন হয়ে গেছে। কয়েক দফা টাকার অবমূল্যায়ন করেও ঠেকানো যাচ্ছে না। ৮৬ টাকা ডলার কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে ৯১ টাকায় পৌঁছে গেছে। এরফলে পণ্যমূল্যের দাম বেড়ে গেছে। তাই মূল্যস্ফীতি অনেক বেড়ে গেছে।
এ অবস্থা থেকে যেভাবে হোক বের হয়ে আসতে হবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও শীর্ষ ব্যবসায়ীরা। তাই বিভিন্নখাতে ব্যাপকহারে ভর্তুকির কথাও ভাবছে সরকার। অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামালও সম্প্রতি বলেছেন, ‘ভোক্তা থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী সবাইকে স্বস্তি দিতেই নতুন বাজেট প্রণয়ন করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এবারের বাজেট প্রণয়ন সরকারের জন্য বেশ চ্যালেঞ্জিং হবে। কারণ করোনাপরবর্তী দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল করতে এবার ব্যতিক্রমী বাজেট ঘোষণা করতে হবে। আমদানি পণ্যে কর ছাড় দিতে হবে। এ ছাড়া করোনার কারণে পিছিয়ে পড়া মানুষকে নতুন করে বাড়তি সুরক্ষা দিতে বাজেটে থাকতে হবে বিশেষ উদ্যোগ। নজর রাখতে হবে মূল্যস্ফীতির দিকে।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘বিভিন্ন কারণে বাজার অস্থিতিশীল হয়ে গেছে। তাই যেভাবে হোক ভর্তুকি বাড়িয়ে চ্যালেঞ্জ নিয়ে বাজেট দিতে হবে। বিশেষ করে কৃষিখাত, সামাজিক নিরাপত্তাখাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। বিভিন্ন পণ্যেও প্রণোদনা দিতে হবে। চলমান সংকট মুহূর্তে অপ্রয়োজনীয় ব্যয় অবশ্যই কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।’
জেডএ/এনএইচবি/এসএন