‘মুদ্রাবাজারের স্থিতিশীলতা জরুরি’
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের তুলনায় বাংলাদেশে মোট দেশজ উৎপাদন-জিডিপির প্রবৃদ্ধি ভালো করছে। তবে করোনার পর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাবে অর্থনীতি চাপের মধ্যে আছে। আমদানির তুলনায় রপ্তানি ও প্রবাসী আয় কম হচ্ছে। এফডিআইও কম আসছে। মুদ্রা বাজারের অস্থিরতা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। টাকার অবমূল্যায়ন বারবার করার পরও স্থিতিশীলতা ফিরছে না।
শনিবার (৪ জুন) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্টস, বাংলাদেশ-আইসিএবি ভবনের সম্মেলন কক্ষে গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন।
আইসিএবি এর সভাপতি শাহাদৎ হোসেনের সভাপতিত্বে ‘সাম্প্রতিক সময়ে সামষ্টিক অর্থনীতি: বাংলাদেশ প্রেক্ষিত’ শীর্ষক এ গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। আইসিএবি ও ইআরএফ এর যৌথ উদ্যোগে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
পিআরআই এর নির্বাহী পরিচালক অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘মুদ্রা বাজারের স্থিতিশীলতা দরকার। যে দিকে যেতে চাই তাকে সেদিকে যেতে দেওয়া দরকার। ৮৩ থেকে ৮৪ টাকার মধ্যে রেখে লাভ কি হচ্ছে। বাজারে তো অনেক বেশি। আবার বাংলাদেশ ব্যাংক রেট বেধে দিলেও তা ঠিক থাকে না।
মুদ্রানীতিতে এর একটা নীতি থাকা দরকার। এটাকে মানুষের কাছে আকর্ষণীয় করতে হবে। মুদ্রা বাজারে স্থিতিশীল রাখতে হবে। নজর দিতে হবে। ৯-৬ শতাংশ সুদে ব্যাংকিং হচ্ছে। কিন্তু আপ-ডাউন তো হচ্ছে সবকিছুর। এটারও সুযোগ দেওয়া উচিৎ ‘অর্থনীতিবিদ ও বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘বিশ্বের অন্যদের তুলনায় জিডিপির প্রবৃদ্ধি ভালোই ছিলো। কিন্তু সম্প্রতি ইউক্রেন-রাশিয়ার ডুদ্ধের ফলে ধাক্কা খাচ্ছি তাতে কোনো সন্দেহ নেই। শ্রীলঙ্কার মতো তুলনীয় নয় তবে শিক্ষণীয় আছে। অর্থনীতি চাপের মধ্যে আছে তা অস্বীকার করার কিছু নেই। বিনিয়োগ দরকার। এর কোনো বিকল্প সেই। কারণ বিনিয়োগ ছাড়া প্রবৃদ্ধি হবে না। পদ্মা সেতু জাতীয় প্রতীক হয়ে গেছে। এটাকে যাতায়াত থেকে অর্থনীতিতে আনতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘রেমিট্যান্সে গুরুত্ব দিতে হবে। দক্ষ কর্মীর অপেক্ষায় বসে থাকলে হবে না। অদক্ষ দিয়ে যা আসে সে দিকেই নজর দিতে হবে। ডলারের দাম ৮৫ থেকে ৯৫ টাকা হয়ে যাচ্ছে। ১২ টাকার ব্যবধান। এটা দুর করতে হবে। সার্জিক্যাল অপারেশনে যেতে হচ্ছে।’
তবে বিআইডিএস এর মহাপরিচালক ড. বিনায়েক সেন বলেন, ‘বাংলাদেশে এ মুহুর্তে অর্থনীতি নিয়ে দুঃচিন্তার কোনো কারণ নেই। কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন চারটি ড্রাইভার ভালো অবস্থায় রয়েছে। কৃষির মধ্যে ধান, রপ্তানি আয়, নন-রপ্তানিমুখী উৎপাদন ও রেমিট্যান্স। তুলনামূলক এই চার ড্রাইভারই ভালো। তবে ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে আমদানি মূল্য বেড়ে গেছে। এতে আমদানি ব্যয়ও বেড়ে গেছে।
তিনি আরও বলেন, ‘হত দরিদ্র নিয়ে অনেকে বলছেন, ৪ কোটি। তাহলে রিকশাওয়ালার আয় বেড়ে ৫০০ টাকা হলো কীভাবে। কমে ২০০ টাকা তো হয়নি। এই টাকায় দিনে ১০ কেজি চাল কিনতে পারে তারা।'
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্চ এর সভাপতি ও সাবেক কৃষি সচিব মো. ইউনুসুর রহমান বলেন, কৃষির দিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। কোনোক্রমেই ভর্তুকি কমানো যাবে না। সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ রাড়াতে হবে। মুদ্রাবাজারে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে হবে। ডলারের রেট বাংলাদেশ ব্যাংক নির্ধারণ করার পরও তার থেকে ৭/৮ টাকা বেশিতে কিনতে হচ্ছে। এভাবে পলতে থাকলে হুণ্ডির পথ খোলা হয়ে যাবে।’
ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আবুল কাশেম খান, ‘ডুয়িং বিজনেস সহজ হওয়ার পরিবর্তে কঠিন হচ্ছে। ট্রেড লাইসেন্স করতে গিয়ে মাথা ব্যথা হয়ে যাচ্ছে। নিজে এ কাজ করলে মনে হয় না ইজি নিজনেস হচ্ছে।’
জেডএ/এমএমএ/