টিসিবিতে ৪ কেজি ছোলা ছাড়া মিলছে না ডাল-তেল-চিনি
টিসিবির পণ্য কিনতে গিয়ে একপ্রকার বাধ্য হয়েই ক্রেতাদের নিতে হচ্ছে চার কেজি ছোলা। চার কেজি চোলা না কিনলে দেওয়া হচ্ছে না ডাল, তেল ও চিনি। আর এই নিয়মের কারণে কম দামে টিসিবির পণ্য কিনতে আসা অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
সোমবার (২৫ এপ্রিল) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে টিসিবির অফিসের সামনেই বিএম এন্টারপ্রাইজের ট্রাকসেলে এ চিত্র দেখা গেছে।
কম দামে টিসিবি পণ্য কিনতে আসা আনোয়ারা বেগম ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, লন বাবা লন, আমার ছোলা লন। এতো ছোলা কি করব। এক ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে দুই কেজি করে চিনি ও ডাল দিলেও চার কেজি ছোলা ধরিয়ে দিল। বেশি টাকা আটকে গেল। তেল তো বেশি দিল না। মাত্র দুই লিটার। সব মিলে ৬৬০ টাকা নিল।
এভাবে শুধু আনোয়ারাই নয়, দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার পর যারাই পণ্য পাচ্ছেন তারাই অভিযোগ করে বলছেন, চার কেজি ছোলা করব কি? শাহাদত হোসেন নামে এক ক্রেতা বলেন, ‘ঘণ্টাখানেক অপেক্ষার পর ট্রাক থেকে চার কেজি ছোলাসহ অন্য পণ্য দিল। ৬৬০ টাকা নিল। কিন্তু এতো ছোলা কি করব? ঈদের সময় এতো তো লাগবে না। আবার তেল তো বেশি দিল না।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ট্রাকের আলম বলেন, ‘বেশি করে আনা হয়েছে। তাই চার কেজি করে দেওয়া হচ্ছে।’ এই চিত্র শুধু কারওয়ান বাজারেই নয়, রাজধানীর মোহাম্মদপুর, আদারবসহ ১৫০ ট্রাকসেলের একই চিত্র।
দুপুর ১২টার আগে থেকে অনেকে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকলেও শঙ্কা প্রকাশ করে বলছেন, শেষ পর্যন্ত পাব তো। অনেকেই বলছেন, লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার পরও অনেক দিন পাওয়া যায় না। রাজধানীতে প্রতিদিন ১৫০টি ট্রাকসেলে ৫৫ টাকা কেজি চিনি, ১১০ টাকা লিটার তেল, ৬৫ টাকা কেজি ডাল ও ৫০ টাকা কেজি ছোলা বিক্রি করা হচ্ছে।
সাকিল হোসেন নামে এক ক্রেতা বলেন, ‘ফাকা পেয়ে প্রথম লাইনে দাঁড়িয়েছি। তারপরও ঘণ্টাখানেক পর পেলাম। কিন্তু বেশি ছোলায় মনটা খারাপ হয়ে গেল। কারণ এতো ছোলা লাগে না। তেল দিলে ভালো হতো। মোহাম্মদপুরের ট্রাক সেলেরও একই চিত্র। লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার পর তেল, ডাল, চিনি ও ছোলা পেলেও খুশি নয় তারা। কারণ বেশি ছোলার দরকার নেই। তারপরও ট্রাক থেকে বেশি করে দেওয়া হচ্ছে।
রাজধানীতে প্রতি ট্রাকে ২৫০০ কেজি ও লিটার করে পণ্য মোট তিন লাখ ৭৫ হাজার কেজি ও লিটার পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। এ ছাড়া সারাদেশে এক কোটি পরিবারকেও কম দামে ডাল, তেল , চিনি ও ছোলা দেওয়া হচ্ছে। যা বাজারের চেয়ে অনেক কম দামে বিক্রি করা হচ্ছে।
সার্বিক ব্যাপারে জানতে চাইলে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মুখপাত্র এবং তেজগাঁও আঞ্চলিক কার্যালয়ের অফিস প্রধান মো. হুমায়ুন করিব ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ‘সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী রমজান মাস উপলক্ষে সারাদেশে এক কোটি পরিবারকে সাশ্রয়ী মূল্যে ডাল, চিনি, ছোলা ও তেল দেওয়া হচ্ছে। এরমধ্যে ৮৭ লাখ ১০ হাজার কার্ডধারীদের বিভিন্ন এলাকায়, বরিশালে ৯০ হাজার ও রাজধানীতে ১২ লাখ পরিবারকে ট্রাকসেলে পণ্য দেওয়া হচ্ছে। ৬ মার্চ থেকে বিভিন্ন এলাকায় প্রথম কিন্তির পর দ্বিতীয় কিস্তিতে মালামাল দেওয়া শুরু হয়েছে। চলবে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত। এ পর্যন্ত চার কোটি লিটার তেল, ৪০ হাজার মেট্রিক টন করে ছোলা, ডাল, চিনি দেওয়া হয়েছে। রমজান উপলক্ষে আগে খেজুরও দেওয়া হয়েছে। বাজারে পেঁয়াজের দাম কমতে থাকায় ট্রাকসেলে তা বন্ধ রয়েছে।’
দুপুর গড়িয়ে গেলেও ট্রাক স্পটে যায় না কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সকাল সাড়ে ৭টার পর ডিও লেটারের কাজ শুরু হয়। যারা আগে টাকা দেয় তারা আগে পায়, দুপুর ১টা থেকে ২টা পর্যন্ত চলে মাল দেওয়ার কাজ।
টিসিবি থেকে এত পণ্য দেওয়া হচ্ছে তারপরও চাহিদা কমছে না। লাইন দীর্ঘ হচ্ছে। অনেকে তারপরও পাচ্ছে না কম দামের এসব পণ্য? এমন প্রশ্নের জবাবে হুমায়ুন কবির বলেন, ‘গত বছরে চাহিদার ১০ থেকে ১২ শতাংশ পূরণ করেছে টিসিবি। এবার দ্বিগুণেরও বেশি ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ হবে। এর ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, আগে প্রতি ট্রাকে দুই হাজার কেজি ও লিটার দেওয়া হত। এবারে তা ৩৫০০ কেজি ও লিটার ছাড়িয়ে গেছে।
টিসিবির প্রধান কার্যালয়ে বিক্রয় কেন্দ্র থেকে আগে এ সব পণ্য দেওয়া হলেও বর্তমানে বন্ধ কেন? এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘লোকবলের সংকট। আগে আটটি অফিস থাকলে বর্তমানে ক্যাম্প অফিসসহ ১২টি অফিস করা হয়েছে। তারপরও লোকবল কম রয়েছে।’
জেডএ/আরএ/