কার্ব মার্কেটে ডলারের মূল্য সর্বোচ্চ ১১৯ টাকা
বাজারে সহজে ডলার পাওয়া যায় না, তাই বেশি দামে কিনে বেশি দামেই বিক্রি করা হচ্ছে । প্রতি ডলার কেনা হচ্ছে ১১৪ টাকা আর বিক্রি করা হচ্ছে প্রায় ১১৯ টাকা।
ডলারের বাজার সম্পর্কে একটি মানি এক্সচেঞ্জের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, আজকে এটা রেট, কালকের টা কাল। কত হবে বলা যায় না। পাগলা ঘোড়ার মতোই ছুটছে আন্তর্জাতিক লেনদেনে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারের দাম।
সংকটের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের বেঁধে দেওয়া দর হচ্ছে ৯৪ দশমিক ৮০ টাকা। তা থেকে ২৫ টাকা বেশিতে খোলাবাজারে কিনতে হচ্ছে এই মুদ্রা। দেশের ইতিহাসে এর আগে এই ঘটনা কখনো ঘটেনি বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
বুধবার (১০ আগস্ট) মতিঝিলের এক মানি এক্সচেঞ্চের ডলারের রেট কত জানতে চাইলে তিনি ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, বাজারে ডলার নেই, কেউ বিক্রি করলে ১১৪ রেট। কেনার রেট জানতে চাইলে জানান, ১১৮ দশমিক ৫০ টাকা। এই দৃশ্য শুধু এই একটি মানি এক্সচেঞ্চের না। মতিঝিলসহ গুলশানের দিকেও একই চিত্র।
খোলা বাজারের ডলার ব্যবসায়ী ও মানি এক্সচেঞ্জের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এমন বেশকিছু কর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেশিরভাগ মানি এক্সচেঞ্জেই এখন নগদ ডলারের সংকট চলছে। বিক্রির চেয়ে তারা কিনছে বেশি। তবে বিক্রি করার লোক নেই। আবার এতদিন যারা রাস্তায় ডলার কেনাবেচা করতেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের ভয়ে তারাও সরাসরি কেনাবেচা করছেন না।
বুধবার কার্ব মার্কেট বা খোলা বাজারে নগদ ডলার কিনতে গ্রাহককে গুনতে হচ্ছে ১১৮ থেকে ১১৯ টাকা। সোমবার যা ছিল ১১৪ থেকে ১১৫ টাকা। খোলা বাজারে সাধারণ গ্রাহক বিক্রি করলে প্রতি ডলার পাচ্ছে ১১৫ টাকা থেকে ১১৬ টাকা।
পল্টনের ডলার ব্যবসায়ী হেলাল জানান, খোলা বাজারে ডলারের চাহিদা বেশি, সরবরাহ কম। তীব্র সংকট চলছে ডলারের। বিক্রেতারা বলেন, বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে থেকে এনে নগদ ডলার কেনা-বেচা করি। যারা বিদেশ যান তাদের খুচরা কিছু ডলার লাগে। ব্যাংকে গেলে বিভিন্ন ঝামেলা হয়।
তাই আমাদের কাছ থেকে সহজে ডলার কিনতে পারে। কোনো কাগজপত্র লাগে না। চাইলেই পেয়ে যাচ্ছে তারা।
তিনি জানান, সকালে শুরুতে ১১৬ টাকা রেটে ডলার বিক্রি করা হয়েছে। বেলা বাড়তে থাকায় কমতে থাকে সরবরাহ। তাই শেষ সময়ে প্রায় ১২০ টাকা রেটে বিক্রি করা হয়েছে। কালকে কতো হবে বলা যাবে না। এদিকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতেও বাংলাদেশ ব্যাংকের চেয়ে ১৫ টাকা পর্যন্ত বেশি দামে ১১০ টাকা রেটে নগদ ডলার বিক্রি হচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত মে মাসের শুরুর দিকে ডলারের দর ছিল ৮৬ টাকা ৪৫ পয়সা। এরপর আমদানি ব্যয় বৃদ্ধির অজুহাতে বিভিন্ন অজুহাতে বাড়ছে ডলারের দাম। গত ১৭ মে দেশে খোলা বাজারে ডলার প্রথমবারের মতো ১০০ টাকা পেরিয়ে যায়। এরপর আবার কমে আসে। পরে গত ১৭ জুলাই ফের ১০০ টাকা অতিক্রম করে।
এদিকে, ডলার কারসাজির অভিযোগে গত সোমবার দেশি-বিদেশি ৬টি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের প্রধানকে অপসারণ করতে নির্দেশ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকগুলো হলো-বেসরকারি খাতের ব্র্যাক ব্যাংক, ডাচ-বাংলা ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক ও সাউথইস্ট ব্যাংক এবং বিদেশি খাতের স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক।
ডলারের কারসাজি রোধে খোলা বাজার ও এক্সচেঞ্জ হাউজগুলোতে ধারাবাহিক অভিযান পরিচালনা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত সপ্তাহ পর্যন্ত কারসাজির অপরাধে পাঁচ মানি চেঞ্জারের লাইসেন্স স্থগিত করা হয়েছে। পাশাপাশি ৪২টিকে শোকজ করা হয়েছে। এ ছাড়া, লাইসেন্স ছাড়া ব্যবসা করায় ৯টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বলা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, কেউ নিয়ম অমান্য করলে শাস্তি পেতে হবে।
জেডএ/এমএমএ/