জ্বালানির উত্তাপে বাজার গরম
জ্বালানির দাম বৃদ্ধির প্রভাবে দুই দিনের ব্যবধানে সবজির বাজার একেবারে অস্থির হয়ে গেছে। প্রায় সবজির কেজিতে বেড়েছে ১০ থেকে ২০ টাকা। মাছের বাজারেও উত্তাপ ছড়িয়েছে। প্রায় মাছের কেজি ২০ থেকে ৫০ টাকা, ইলিশ মাছের কেজিতে বেড়েছে ২০০ টাকা। চিনি, আটার দামও বেড়েছে। সয়াবিন তেলের দাম বৃদ্ধির পাঁয়তারা চলছে।
বিক্রেতারা বলছেন, এমন কোনো পণ্য নেই যে দাম বাড়েনি। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে উৎপাদন ও পরিবহন খরচ বেড়ে গেছে। তাই বেশি দামে কিনে বাড়তি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে। ক্রেতারা বলছেন, হঠাৎ করে দেশে বাজে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এমন কোনো জিনিস নেই যে দাম বাড়েনি। আমরা চলব কীভাবে?
সোমবার (৮ আগস্ট) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমনই তথ্য জানা গেছে।
সবজির কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা
জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির আগে ঢেঁড়শ, পটল, ধুন্দুল, পেঁপের কেজি ২০ থেকে ৩০ টাকা কেজি ছিল। তিনদিনের ব্যবধানে তা ৪০ থেকে ৫০ টাকা হয়ে গেছে। অন্যান্য সবজির দামও অনেক বেড়ে গেছে।
কারওয়ান বাজারের সবজি বিক্রেতা নাইম ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘আগে যে দামে সবজি বিক্রি করা হতো বর্তমানে প্রতি কেজি ১০ থেকে ২০ টাকা বেশি দামে কেনা। তাই বাড়তি দামেই বিক্রি করা হচ্ছে। গাজর ১২০ টাকা কেজি, করলা ১০০ টাকা, শসা ৫০ টাকা, বেগুন ৫০ থেকে ৬০ টাকা, চিচিঙ্গা ৫০ টাকা, শিম ২৩০ টাকা, টমেটো ১২০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে।’
মরিচ বিক্রেতা সাইদুর বলেন, ‘এখনো কমেনি মরিচের দাম। ক্ষেত পানিতে ডুবে গেছে। তাই দাম বেশি। ১৬০ থেকে ২০০ টাকা মরিচের কেজি। কমার সম্ভাবনা নেই।’ লেবুর হালি ১০ থেকে ২০ টাকা, লাল ও পাট শাক ১০ টাকা করে আঁটি, পুঁই ও লাউশাক ১৫ টাকা আঁটি বিক্রি করছে খুচরা বিক্রেতারা।
পেঁয়াজে এখনো স্বস্তি
মরিচের কেজি ১৬০ টাকা থেকে ২০০ টাকা হলেও পেঁয়াজের বাজারে স্বস্তি বলে জানান বিক্রেতারা। পাল্লা ২২০ টাকা, আর প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৪৫ থেকে ৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। রসুনও আগের মতো ৭০ থেকে ১১০ ও আদা ১০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতারা বলছেন, দেশে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ থাকায় বাড়েনি দাম।
ইলিশের কেজিতে বেড়েছে ২০০ টাকা
কম সরবরাহের অজুহাতে মাছের দামও চড়া ছিল। বর্তমানে তেলের তাপ যোগ হওয়ায় কেজিতে ২০ থেকে ৫০ টাকা বেড়েছে। কারওয়ান বাজারের মাছ ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন বলেন, কয়েকদিনের ব্যবধানে সব মাছের দাম বেড়েছে। ইলিশ মাছের কেজিতে ২০০ টাকা বেড়েছে। এজন্য ৯০০ টাকার মাছ ১১০০ টাকা, ১৫০০ টাকার মাছ ১৭০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে। অন্যান্য মাছের দামও কেজিতে ২০ থেকে ৫০ টাকার বেশি বেড়েছে।
এই বিক্রেতার কথার সত্যতা জানা গেল ক্রেতা সমস্বর কুমারের সঙ্গে কথা বলে। তিনি বলেন, ‘এত দাম বাড়বে ভাবতে অবাক লাগছে। ৪০০ টাকার কাচকি মাছ ৫০০ টাকার কম দিচ্ছে না। অন্যান্য মাছের দামও বেশি। অন্যান্য বাজারে দাম বেড়েছে বলে বিক্রেতারা জানান। দাম বেড়ে রুই ও কাতল ২৩০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজি, নদীর চিংড়ি ১৪০০ টাকা, বেলে ১০০০ টাকা, আইড় ১০০০ টাকা, পুঁটি ৮০০ কেজি, বোয়াল ৫০০, পাবদা ৬৫০, কাচকি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। কমছে না দাম।’
মাছ বিক্রেতা আবুলও বলেন, তেলের দাম বাড়ার কারণে পরিবহন ভাড়া বেড়ে গেছে। তাই মাছের দাম বাড়তি। ১২০০ টাকা কেজি কাজলি, ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা চিংড়ি, কাচকি ৭০০, বাইম ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা কেজি। আর রুই, কাতলা ২৮০ থেকে ৪৫০ টাকা করে কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। মাছ ব্যবসায়ীরা বলছেন, যেহেতু তেলের দাম বেড়েছে, তাই মাছের বাজার চড়া হবে। এটা স্বাভাবিক করতে সরকারকে ভেবে দেখা দরকার।
চালেও লেগেছে জ্বালানির তাপ
সরকার দাম কমানোর জন্য চালে শুল্ক কমালেও জ্বালানির তাপে বাজারে কেজিতে এক থেকে দেড় টাকা বেড়ে গেছে। মিনিকেট চাল ৬৮ থেকে ৭০ টাকা কেজি, বাসমতি ৮০ থেকে ৮২ টাকা, আটাশ চাল ৫২ থেকে ৫৪, চিনিগুড়া ১০০ থেকে ১১০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। তবে প্রায় দোকানেই মোটা চাল পাওয়া যায় না। কোনো কোনো দোকানে পাওয়া গেলেও ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। হাজি ইসমাইল রাইস স্টোরের জসিম বলেন, ‘শুল্ক কমালেও জ্বালানির তাপে কেজিতে বেড়েছে এক থেকে দেড় টাকা। আর কমবে না চালের দাম।’
বেশি দাম আদায়ে মুখিয়ে সয়াবিন তেল
সম্প্রতি সয়াবিন তেলের দাম কমিয়ে ১৮৫ টাকা লিটার করা হলেও জ্বালানির দাম বৃদ্ধির অজুহাতে বাড়ানোর পাঁয়তারা চলছে। এজন্য মিল থেকে বাজারে সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। তাই রুপচাঁদা, তীর ও খোলা তেল বাজারে সরবরাহ নেই।
জানতে চাইলে রামগঞ্চ জেনারেল স্টোরের জাকির হোসেন ও আব্দুর রব স্টোরের নাইম বলেন, ‘কয়েকদিন না যেতেই অন্যান্য জিনিসের মতো সয়াবিন তেলের দামও বৃদ্ধির পাঁয়তারা চলছে। এজন্য ডিলাররা আমাদের রুপচাঁদা, তীর তেল দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। তবে যা আগে তা আগের দামে ১৮৫ টাকা লিটার বিক্রি করা হচ্ছে। তবে খোলা তেল একেবারে পাওয়া যায় না। তাই আমরা বিক্রিও করিনা।’
ডিম ও মুরগির দামও চড়া
ঈদের পর কিছুটা কমলেও জ্বালানির প্রভাবে মুরগির দাম কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়ে গেছে। আল্লাহর দান চিকেন হাউজের আল করিম ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘পাকিস্তানি মুরগির কেজি ২৭০ থেকে ২৮০ টাকা কেজি, দেশি মুরগি ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা ও ব্রয়লার ১৬৫ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। ডিম আগে ১২০ টাকা ডজন বিক্রি করা হলে বর্তমানে ১৩০ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে।’
খাসির মাংসের কেজি ১০০০ টাকায় উঠার পর আর নামেনি। আগের মতোই হাজার টাকা ও গরুর মাংস ৬৫০ টাকা কেজি বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। তারা বলছেন, বাজারে সরবরাহ কম। অন্যদিকে তেলের দাম বাড়িয়েছে সরকার। তাই বেশি দামে কিনে বেশি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে মাংস।
উল্লেখ্য, সরকার জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ। এর মধ্যে কেরোসিন ও ডিজেলের লিটার করা হয়েছে ১১৪ টাকা, অকটেন ১৩৫ টাকা ও পেট্রলের দাম ১৩০ টাকা লিটার করে ভোক্তাদের কাছে বিক্রি করা শুরু হয়েছে।
জেডএ/এসজি/