অর্থমন্ত্রীর ব্রিফকেস রহস্য
বাজেট পেশের জন্য ব্রিফকেস হাতে গাড়ি থেকে নামেন অর্থমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে ঢোকেন সংসদে। দীর্ঘদিনের রেওয়াজ এটি। কিন্তু কী থাকে এই ব্রিফকেসে? টাকার হিসাব, না-কি বাজেটের নথি? না-কি এটি কেবলই ফ্যাশন। বাজেট পেশের জন্য অর্থমন্ত্রীর সংসদে ঢুকার এই রীতি শুধু আমাদের দেশে না। বিশ্বের অনেক দেশেই এ রীতি মেনে চলতে দেখা যায় অর্থমন্ত্রীদের। বলা যায়, এই ব্রিফকেসকে বাজেটের প্রতীক হিসেবে ধরা হয়।
এই ব্রিফকেস নিয়ে অনেক কথাই প্রচলন আছে। জানা যায়, ১৮ দশকের থেকে বাজেট ব্রিফকেসের এই রীতি শুরু হয়। আর শুরুটা যুক্তরাজ্য থেকে। এ ব্রিফকেস খুলে অর্থমন্ত্রীকে বাজেট পেশ করতে বলা হতো। ১৮৬০ সালে প্রথম ‘লাল একটি স্যুটকেসে’ করে বাজেটসংক্রান্ত নথি নিয়ে আসেন ব্রিটেনের বাজেটপ্রধান উইলিয়াম ই গ্ল্যাডস্টোন। সেই স্যুটকেসের ওপর সোনা দিয়ে রানির মুখের আদলের ছাপ দেওয়া ছিল। ওই একই ব্যাগ বহু সরকারের আমলেই ব্যবহার করা হয়।
প্রথা অনুযায়ী ‘লাল ব্রিফকেস’ হাতে বাজেট পেশ করতে সংসদে ঢোকেন অর্থ বিভাগের প্রধান। তবে এই রহস্যময় ব্রিফকেসের রং সব সময় লাল ছিল না, অনেক সময়ই তা বদলেছে। রং যা–ই হোক না কেন, বাজেট যেনো ব্রিফকেসেই থাকে।
বাজেটের সঙ্গে ব্রিফকেসেরে একটি যোগসূত্র আছে। বাজেট শব্দটি এসেছে পুরোনো ফরাসি শব্দ ব্যুজেট (বোগেট) থেকে। ব্যুজেটের অর্থ হলো থলে বা ব্যাগ। অতীতে থলেতে ভরে দেশের আয়-ব্যয়ের হিসাব আইনসভা বা সংসদে আনা হতো বলে একে ‘বাজেট’ নামে অভিহিত করা হয়।
তবে অক্সফোর্ড ইংলিশ ডিকশনারির বর্ণনা একটু অন্য রকম। এতে বলা হয়েছে, ষোড়শ শতাব্দীতে ‘একজনের বাজেট খোলার’ কথাটি ব্যবহৃত হয় এমন অর্থে—কেউ এমন কিছু প্রকাশ করছে, যা গোপন, সম্ভবত কিছুটা সন্দেহজনকও। অনেকটা থলে থেকে কৌশল বের করার মতো।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা আকবর আলি খানের সর্বশেষ বই ‘বাংলাদেশে বাজেট: অর্থনীতি ও রাজনীতি’–তে ব্রিফকেসের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। বইটি থেকে জানা যায়, শিল্পবিপ্লবের পর ইংল্যান্ডের অর্থনীতি অনেক বড় হয়ে যায়। বাজেটবিষয়ক প্রস্তাবগুলো শুধু একটা মানিব্যাগে সংকুলান করা সম্ভব হচ্ছিল না। মানিব্যাগের জায়গায় তাই আসে ব্রিফকেস।
অর্থমন্ত্রীর এই ব্রিফকেস নিয়ে অনেক কথা থাকতেই পারে। থাকতে পারে রহস্য। আশা করা যায় এবারের বাজেটেও অর্থমন্ত্রীর হাতে থাকবে একটি ব্রিফকেস।