গার্ড নিয়োগে ভেরিফিকেশনের পরামর্শ ডিবি’র
সিকিউরিটি কোম্পানির কর্মী নিয়েও নিরাপত্তা ঝুঁকি
বাসাবাড়ি ও অফিসে নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে পুলিশের সহায়তা নেওয়ার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে সহায়তা প্রদানের জন্য পুলিশের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ।
সম্প্রতি রাজধানীর ভাষানটেক রজনীগন্ধা টাওয়ারে একটি জুয়েলারি দোকানে চুরির ঘটনা ধরা পড়ার পর জানা গেছে, নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে চাকরি নিয়েই এই চুরির ঘটনা ঘটানো হয়েছে। এ ঘটনার সূত্রে জানা গেছে, একটি চক্র নিয়মিতভাবেই এই অপরাধ সংঘটিত করে আসছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশের পক্ষ থেকে এমন নির্দেশনা এলো।
জানা যায়, ভাষানটেক রজনীগন্ধা টাওয়ারের রাঙাপরী জুয়েলার্স-এর নিরাপত্তা কর্মী হিসেবে চাকরি নিয়েছিল মঞ্জুরুল হাসান শামীম। তাকে সরবরাহ করেছিল ফাস্ট সিকিউরিটি কোম্পানি নামের একটি প্রতিষ্ঠান। একটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগের পরও নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়ায় এ নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
মঞ্জুরুল হাসান শামীম
সিকিউরিটি গার্ড সেজে চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংশয়ে রয়েছেন স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সিকিউরিটি গার্ড যদি এমন হয়, তাহলে তো রাতের বেলায় আমাদেরও ঘুম হবে না। কারণ সবকিছু সিকিউরিটি গার্ডের উপর রেখে আমরা চলে আসি। তাদের দাবি, নিরাপত্তা সংকটে রয়েছেন তারা।
এ বিষয়ে রিজভী জুয়েলার্সের মালিক ইনামুল হক বলেন, সিকিউরিটি গার্ড আমাদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেয় এবং তারা বিশ্বস্ত। গার্ড যদি স্বর্ণ চুরি বা বিভিন্ন অপরাধের সাথে সংযুক্ত থাকে তাহলে আমরা তাদের কিভাবে বিশ্বাস করবো। তিনি বলেন, ভাষানটেকে চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমরা সতর্ক হয়েছি।
ওই চুরির ঘটনায় জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানের ৩০০ ভরি স্বর্ণ, ইমিটেশন গহনা ও নগদ অর্থ খোয়া যায়। তবে গোয়েন্দা পুলিশ ওই চক্রকে চিহ্নিত করে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে।
সিকিউরিটি গার্ডের এমন অপরাধের হাত থেকে রক্ষা পেতে বেশ কয়েকটি পরামর্শ দিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ।
গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, সিকিউরিটি গার্ড নিয়োগের আগে তাদের অতীতের বিষয়গুলি যাচাই-বাছাই করা। এবং যেই কোম্পানি থেকে গার্ড নেওয়া হচ্ছে সেই কোম্পানির ব্যাকগ্রাউন্ড জেনে নেওয়া। সন্দেহ হল পুলিশকে ইনফর্ম করা। তাছাড়া ভেরিফিকেশন করে সিকিউরিটি গার্ড নিয়োগ দেওয়া।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিশেষজ্ঞ তৌহিদুল হক বলেন, এ ধরনের অপরাধ আমাদের বাংলাদেশে খুব কমই হয়। তবে কিছু কিছু ঘটনা ঘটছে। এমন ঘটনা রোধে পুলিশ প্রশাসনকে এবং সংশ্লিষ্ট এজেন্সিকে সচেতন থাকতে হবে।
তিনি বলেন, সিকিউরিটি গার্ড নিয়োগের ক্ষেত্রে আমার তিনটি পরামর্শ রয়েছে। সেগুলো হলো যে এজেন্সি থেকে সিকিউরিটি গার্ড নেওয়া হবে সেই এজেন্সির বায়ো ডাটা রাখা এবং নিয়ন্ত্রিত সিকিউরিটি গার্ডের পরিচয় সংশ্লিষ্ট থানায় দেওয়া। তাছাড়া সিকিউরিটি গার্ডের জাতীয় পরিচয় পত্র রাখা। সম্ভব হলে সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে মার্কেট অথবা বাড়ির এরিয়া নজরে রাখা।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে শক্তিশালী আইন না থাকার কারণে অপরাধীরা কারাগারে যায় এবং বের হয়ে আসে। তারা বের হয়ে এসে আবার এমন অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হয়। যদি একটি শক্তিশালী আইন প্রয়োগ করা হয় সেক্ষেত্রে হয়তো এমন অপরাধের প্রবণতা কমে আসবে।
কেএম/এপি/এএস