ভুয়া পরিচয়ে সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি নিয়ে চুরি
ভুয়া পরিচয় ব্যবহার করে সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি নিয়ে ভাষানটেকে রজনীগন্ধা টাওয়ারে রাঙাপরী জুয়েলার্স হতে ৩০০ ভরি স্বর্ণ, ইমিটেশন গহনা ও নগদ অর্থ চুরি করে পালিয়ে যায় একটি চক্র। এ ঘটনায় মঞ্জুরুল হাসান শামীম (৩৮) নামে একজনকে গ্রেপ্তার করছে গোয়েন্দা মিরপুর বিভাগের জোনাল টিম।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) পুলিশ বলছে, বিদেশে বসে ৭ বছর ধরে এসব চুরির নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাদের গডফাদার। ওই গডফাদারের নাম ফ্রান্স প্রবাসী নাসির। মূলত তার নেতৃত্বে এ চক্রটি বিভিন্ন জায়গায় স্বর্ণ চুরি করে থাকে। নাসিরের নামে থেকেও কয়েকটি চুরির মামলা রয়েছে।
রবিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজন এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার।
তিনি বলেন, শনিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) গাজীপুর জেলার কড্ডা ও মুন্সিগঞ্জ জেলার বজ্রযোগিনী এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে আসমী মো. মঞ্জুরুল হাসান শামীম (৩৮)কে গ্রেপ্তার করা। এ সময় তার নিকট থেকে চোরাইকৃত স্বর্ণ বিক্রয়লব্ধ অর্থ ও ইমিটেশন গহনা উদ্ধার করা হয়।
হাফিজ আক্তার আরও বলেন, গত ৫ ফেব্রুয়ারি রাত ১টার সময় ভাষানটেক থানার পুরাতন কচুক্ষেত রজনীগন্ধা টাওয়ারের নিচতলার রাঙাপরী জুয়েলার্স হতে একটি সংঘবব্ধ চোর চক্র আনুমানিক ৩০০ ভরি স্বর্ণ, ইমিটেশন গহনা ও নগদ অর্থ চুরি করে পালিয়ে যায়। মূলত তারা চুরি করার নেশায় মিথ্যা নাম-পরিচয় ব্যবহার করে সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি নেয়।
ডিবি জানায়, এ ঘটনায় গোয়েন্দা মিরপুর বিভাগের জোনাল টিম গোয়েন্দা তথ্য ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে সংশ্লিষ্ট আসামিকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।
হাফিজ আক্তার বলেন, গ্রেপ্তারকৃত জানিয়েছে তারা একটি চক্রের ২ জন সদস্য। মাসুদ ও ইলিয়াস মিথ্যা নাম ও পরিচয় ব্যবহার করে ওই মার্কেটে যথাক্রমে সিকিউরিটি গার্ড ও সুইপারের চাকরি নেয়। চাকরি অবস্থায় তারা দোকানে চুরির পরিকল্পনাকে বাস্তবায়ন করার জন্য কাজ করতে থাকে। এরপর তারা একে অপরের ও অন্যান্য সদস্যের সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদান করতে থাকে। পরিকল্পনা মাফিক ঘটনার আগের দিন চক্রের অন্য এক সদস্য শাহীন মাস্টার ওই মার্কেটে ১টি দোকান ভাড়া করে মালামাল তোলার নাম করে বক্স টেবিল ব্যবহার করে এবং কৌশলে তালা ভাঙার সরঞ্জামাদি মার্কেটে প্রবেশ করায়।
ডিবি পুলিশ জানায়, চুরির ঘটনার দিন আনুমানিক রাত ১টার দিকে চক্রের আরও ২ সদস্য শ্রীকান্ত ও তালা ভাঙার মিস্ত্রী রাজা মিয়া মার্কেটে প্রবেশ করে মাসুদ ও ইলিয়াসসহ চোরাই কাজ সম্পন্ন করে ভোর ৫টার সময় মার্কেট হতে বের হয়ে যায়। এবং তাদের পূর্বে ভাড়াকৃত বাসা কেরানীগঞ্জ এলাকার হাসনাবাদ চলে যায়।
হাফিজ আক্তার বলেন, গ্রেপ্তারকৃতরা সেখানে শাহীন মাস্টার ও গ্রেপ্তারকৃত আসামি মঞ্জুরুল হাসান শামীম পূর্ব হতেই চক্রের অন্য সদস্যদের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। ভাড়া বাসায় সকল সদস্যের উপস্থিতিতে প্রকৃত স্বর্ণ, ইমিটেশন গহনা ও নগদ অর্থ আলাদা করা হয়। শ্রীকান্ত চোরাইকৃত স্বর্ণ তার পূর্ব পরিচিত এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রয় করে বিক্রয়লব্ধ টাকা নিয়ে পুনরায় ভাড়া বাসায় ফিরে আসে।
তিনি বলেন, এরপর চোরাই স্বর্ণ বিক্রয়লব্ধ অর্থ, ইমিটেশন গহনা ও চোরাই নগদ অর্থ নিজেদের মধ্যে আনুপাতিক হারে ভাগ করে যে যার মত ওই বাসা ত্যাগ করে আত্মগোপনে চলে যায়।
পুলিশ জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায় যে, ওই চক্রের মূল হোতা ফ্রান্স প্রবাসী নাসির। সে শামীমের মাধ্যমে পরিকল্পনার বাস্তবায়ন ও প্রাথমিক অর্থের যোগান দিয়ে থাকে। প্রত্যেক সদস্যের আলাদা আলাদা দায়িত্ব নির্ধারণ করা থাকে এবং তারা সে অনুযায়ী নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করে থাকে।
ইতিপূর্বে তারা ঢাকা মহানগর ও এর আশপাশ এলাকায় একাধিক চুরি করেছে বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
কেএম/এমএমএ/