ড্রাইভিং লাইসেন্স জালিয়াতি চক্রের ১০ সদস্য গ্রেপ্তার
ভুয়া পুলিশ ভেরিফিকেশনসহ বিভিন্ন জালিয়াতি ব্যবসার সাথে জড়িত একটি দালালচক্রের ১০ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগ।
গ্রেপ্তারের পর পুলিশ জানায়, নিয়মকে অনিয়মে পরিণত করে এই দালাল চক্র। বিআরটিএ এর কিছু অসাধু কর্মকতার সাথে যোগসাজসে কোন প্রকার প্রশিক্ষণ ছাড়াই অদক্ষ ড্রাইভারদের ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরি করে দেয় এই চক্র। এর ফলে লাইসেন্স পাচ্ছে অদক্ষ ড্রাইভার, দিন দিন বাড়ছে দুর্ঘটনার সংখ্যা।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- লিটন পাইক, সুজন পাইক, হাসান শেখ ওরফে আকচান, মোহাম্মদ আলী ওরফে মিস্টার, আব্দুল খালেক, আব্দুল্লাহ রনি, সোহেল রানা, সোহাগ, নুরনবী ও হুমায়ুন কবির।
এসময় তাদের হেফাজত থেকে বিপুল পরিমাণ ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদন ফাইল, শিক্ষানবিস ড্রাইভিং লাইসেন্স এর আবেদন ফরম, ডোপ টেস্ট ফাইল, ২টি মনিটর, ২টি সিপিইউ, ২টি কিবোর্ড, ১টি কালার প্রিন্টার, লেমিনেটিং মেশিন ১টি, ১৪টি মোবাইল ফোন ও ৬টি সীল জব্দ করা হয়।
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ধারাবাহিক অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগের সংঘবদ্ধ অপরাধ ও গাড়ি চুরি প্রতিরোধ টিম। গোয়েন্দা পুলিশ জানায়, প্রতারকেরা নিজেদের পরিচয় দিতো বাংলাদেশ রোড এন্ড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) এর কর্মকর্তা হিসেবে।
বুধবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে চক্রটি গ্রেপ্তারের পর ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার।
এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, দেশে বেশ কয়েকটি মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটে। যেখানে বেরিয়ে আসে চালকদের অদক্ষতা, অসাধু উপায়ে খুব সহজেই ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার বিষয়গুলো। এরপর বিষয়টি নিয়ে তদন্তে নামে গোয়েন্দা পুলিশ। মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনাগুলোর তদন্ত করতে গিয়ে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। এরই ধারাবাহিকতায় রাজধানীতে বাংলাদেশ রোড এন্ড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) এর ভুয়া অফিস পরিচালনাকারী একটি চক্রের সন্ধান পায় গোয়েন্দা পুলিশ।
তিনি আরো বলেন, গত সোমবার দিবাগত রাতে দারুসসালাম থানার মিরপুর মাজার রোড এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদন ফাইলসহ লিটন, সুজন ও হাসানকে গ্রেপ্তার করা হয়।
হাফিজ আক্তার বলেন, গোয়েন্দা পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে জব্দকৃত ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদন ফাইল পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রতিবেদনটি পরীক্ষা করে দেখেন। পুলিশ ভেরিফিকেশন বিপি (বাংলাদেশ পুলিশ) নম্বর দেখে গোয়েন্দা পুলিশ বুঝতে পারে বাংলাদেশ পুলিশের বিপি নম্বরের সাথে এর কোন প্রকার সামঞ্জস্যতা নেই। তখন বিষয়টি গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসা করলে তারা স্বীকার করে তাদের অন্যান্য সহযোগীদের সহযোগিতায় বিআরটিএ’র কিছু অসাধু কর্মকর্তাকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে আবেদন ফাইলগুলো অফিসের বাহিরে নিয়ে আসা হয়।
তিনি বলেন, তারা জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া সিল মোহর যুক্ত স্বাক্ষরিত পুলিশ ভেরিফিকেশন রিপোর্ট তৈরি করে গ্রাহকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স বানিয়ে দেয়। গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিদের দেওয়া তথ্য মতে রাজধানীর মিরপুরে দিয়াবাড়ী বিআরটিএ অফিস ও এর আশে পাশের এলাকায় অভিযান চালিয়ে এই জালিয়াতি চক্রের অন্যান্য সদস্যদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
কেএম/এএস