চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় নির্বাচনী সহিংসতা চালানো ৮ সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার
চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় সহিংসতার ঘটনায় হামলার নেতৃত্ব দানকারী কায়েসসহ আট সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাবের।
র্যাব বলছে এ সন্ত্রাসীরা মূলত এলাকার নিয়ন্ত্রণের জন্য অস্ত্র লুকিয়ে রাখত। তবে এদের সঙ্গে ভালো রাজনৈতিক কোনো পরিচয় নেই । মূলত তারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকত।
মঙ্গলবার ও বুধবার ভোরে চট্টগ্রাম মহানগরী, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, বান্দরবান সদর ও ঢাকা মহানগরীর তেজকুনীপাড়া থেকে র্যাবের গোয়েন্দা শাখা, র্যাবের-২, র্যাবের-৭ ও র্যাবের-১৫ পৃথক অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন-নাসির উদ্দিন (৩১) মো. জসিম (২৪), মো. মিন্টু (২৬) মো. মোরশেদ (২৬), কোরবান আলী (৩৭), মো. ইসমাঈল (৫৫), সহিংসতায় নেতৃত্ব দানকারী মো. কায়েস (২২) এবং তার সহযোগী মো. নুরুল আবছার (৩৩)।
র্যাব জানায়, গ্রেপ্তারকৃতদের কেউ জমির দালাল, কেউ নিরাপত্তাকর্মী, গাড়ি চালক, রাজমিস্ত্রী, সিএনজি চালক, কেউ আবার ফুল বিক্রেতা। বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা চালানোর আগে এক হয়, হামলা, সহিংসতা চালিয়ে আত্মগোপনে চলে যায়।
মুলহোতা কায়েস বেশ কয়েকজন ব্যক্তির থেকে ভাড়ায় অস্ত্র সংগ্রহ করত। অস্ত্র সংগ্রহ করে কায়েস তার বিশ্বস্ত সদস্যদেরকে অস্ত্র সরবরাহের দায়িত্ব দিত। তারা গ্রুপের অন্যান্য সদস্যদেরকে বিভিন্ন সময়ে সহিংসতায় অস্ত্র সরবরাহ করত। কাজ শেষ হলে অস্ত্র ফেরত দিলে তারা স্থানীয় কবরস্থান ও পুকুর পাড়সহ বিভিন্ন স্থানে সেসব অস্ত্র লুকিয়ে রাখত। এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের জন্য ৩০-৪০ জনের একটি সন্ত্রাসী দল পরিচালনা করত কায়েস।
অভিযানের সময় সাতকানিয়ার খাগরিয়া থেকে উদ্ধার করা হয় সহিংসতায় ব্যবহৃত ৩টি একনলা বন্দুক, ১টি দোনলা বন্দুক, ১টি ওয়ান শুটারগান, অন্যান্য দেশীয় অস্ত্র ও ৪২ রাউন্ড গোলাবারুদ।
মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
খন্দকার আল মঈন বলেন, গত ৭ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার খাগরিয়া ইউনিয়নে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে শুরু করে সহিংসতায় শতাধিক সশস্ত্র সন্ত্রাসী ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে হামলা ও নাশকতা চালায়। উক্ত হামলায় নিহত হন ২ জন ও অন্তত অর্ধশতাধিক আহত হয়।
তিনি বলেন, এই সহিংসতার ঘটনায় সাতকানিয়ার খাগরিয়া ইউনিয়নের ২টি কেন্দ্রের নির্বাচন স্থগিত করা হয়। সুষ্ঠু নির্বাচন ব্যাহত হওয়ার কারণে গণমাধ্যমসমূহ সহিংসতার ঘটনাটি গুরুত্বের সঙ্গে নেয় এবং সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করতে বিভিন্ন সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরই প্রেক্ষিতে র্যাব চিহ্নিত সন্ত্রাসীসহ জড়িত অন্যান্য সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করে।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেপ্তার মো. কায়েস গত দুই বছর ধরে চট্টগ্রামে একটি কোম্পানীতে চাকরি করছে। পাশাপাশি সাতকানিয়া উপজেলায় বিভিন্ন সময়ে সংঘটিত সহিংসতা ও হামলার ঘটনায় নেতৃত্ব প্রদান করে থাকে। সে এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের জন্য ৩০-৪০ জনের একটি সন্ত্রাসী দল পরিচালনা করত। সে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্র সংগ্রহ করে তার দলের সদস্যদের সরবরাহ করত বলে জানা যায়।
সহিংসতার ঘটনায় তার নেতৃত্বে জসিম, মোর্শেদ, মিন্টু, আবছারসহ আরও শতাধিক সশস্ত্র সন্ত্রাসী সাতকানিয়ার খাগরিয়া ইউনিয়নে বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা চালায়। সহিংসতা পরবর্তীতে সে ঢাকায় আত্মগোপন করে। উক্ত নির্বাচনের সহিংসতায় সাতকানিয়া থানায় বিস্ফোরকদ্রব্য আইনের মামলায় এজাহারভুক্ত আসামী সে। এর আগেও তার বিরুদ্ধে সাতকানিয়া থানায় সহিংসতার মামলা রয়েছে।
খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেপ্তার নাসির একটি কোম্পানীর চট্রগ্রাম বন্দর শাখার কর্মচারী। সে ২০১১-১৩ সাল পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্যে প্রবাসী ছিল। পরবর্তীতে দেশে এসে ঢাকার শাহাবাগে ফুল বিক্রি করত। নির্বাচনের সহিংসতায় সশস্ত্র দলের নেতৃত্ব প্রদান করেছে বলে জানা যায়।
সহিংসতার সময় নাসিরকে মেরুন রংয়ের মাফলার ও মুখে লাল-সবুজ রং এর মাস্ক পরিহিত অবস্থায় একটি একনলা বন্দুক হাতে দেখা যায়। পরবর্তীতে সে বান্দরবানের গহীন জঙ্গলে আত্মগোপন করে।
র্যাবের মুখপাত্র বলেন, গ্রেপ্তারকৃত আবছার ঢাকায় একটি কাভার্ড ভ্যান সমিতির ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে। যখন সাতকানিয়ায় কোনো সহিংসতার খবর পায় তখন সে এলাকায় চলে আসে। সে নির্বাচনের আগে ঢাকা থেকে সাতকানিয়াতে আসে এবং কায়েসের নির্দেশে সাতকানিয়ার খাগরিয়াতে সহিংসতাকালীন সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের বিভিন্ন দিকনির্দেশনা ও নেতৃত্ব প্রদান করে।
র্যাব জানায় মোরশেদকে জিজ্ঞাসাবাদে র্যাব জানায়, সে কায়েসের গ্রুপের একজন অন্যতম সক্রিয় সদস্য। সে পেশায় একজন সিএনজি চালক। তাকে ঘটনার দিনে একটি একনলা বন্দুক হাতে সহিংসতা ও নাশকতা চালাতে দেখা যায়। সহিংসতার পর সে সাতকানিয়াতে আত্মগোপনে থাকে। আগেও তার বিরুদ্ধে সাতকানিয়া থানায় সহিংসতার মামলা হয়েছে।
জসিম সম্পর্কে তিনি বলেন, খাগরিয়ার বাসিন্দা ও পেশায় রাজমিস্ত্রী হলেও চুরি, ছিনতাই এবং ডাকাতিসহ বিভিন্ন সহিংসতায় বিভিন্ন সময়ে অংশ নেয়। সহিংসতাকালীন একটি ছবিতে লাল জ্যাকেট পরিহিত অবস্থায় তাকে কার্তুজ/এ্যামোনিশনের একটি বস্তাসহ গ্রেপ্তার মোরশেদের পাশে দেখা যায়। সহিংসতার পর সে চট্টগ্রাম মহানগরীতে আত্মগোপন করে।
মিন্টুকে জিজ্ঞাসাবাদে র্যাব কর্মকর্তা মঈন বলেন, মিন্টু পেশায় গাড়ি চালক। সে গত ১৩-১৪ বছর ধরে চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় ভাড়ায় মাইক্রোবাস চালিয়ে আসছে। কায়েসের নির্দেশে সে সহিংসতার উদ্দেশে বাহির থেকে অস্ত্র পরিবহন করে। এ ছাড়া তার তত্ত্বাবধানে সহিংসতার উদ্দেশে ৩০-৩৫ জন বহিরাগতকে বিভিন্ন পরিবহনের মাধ্যমে নিয়ে আসা হয়। সহিংসতার সময় তাকে ১টি আগ্নেয়াস্ত্রসহ হামলায় অংশ নিতে দেখা যায়।
র্যাব আরও জানায় কোরবান আলী পেশায় একজন নিরাপত্তাকর্মী। সে উক্ত সহিংসতাকারীদের লাঠিসোঠা ও অন্যান্য দেশীয় অস্ত্র সরবরাহ করার মাধ্যমে সহিংসতায় প্রতক্ষ্যভাবে অংশগ্রহণ করে।
কেএম/এমএমএ/