রাজধানীতে মানব পাচারকারী চক্রের ৩ সদস্য গ্রেপ্তার
রাজধানীর বিমানবন্দর এলাকা থেকে আন্তর্জাতিক মানব পাচারকারী চক্রের ৩ সক্রিয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
র্যাব জানায়, সুন্দরী ও কমবয়সী গরিব নারীদের টার্গেট করে বিদেশে পাচার করত এ চক্রটি। বর্তমানে দুবাই-এ অবস্থানরত মহিউদ্দিন ও শিল্পীর পরিকল্পনা ও নেতৃত্বে মানব পাচার অপরাধ সংঘঠিত হচ্ছে।
সোমবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) উত্তরায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১ এর অধিনায়ক আবদুল্লাহ আল মোমেন এ তথ্য জানান।
রবিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) গোপন তথ্যের ভিত্তিতে রাতে র্যাব-১ বিমানবন্দর থানার মনোলোভা রেস্টুরেন্টের বিপরীত পার্শ্বে পাকা রাস্তায় অভিযান পরিচালনা করে এ আন্তর্জাতিক মানব পাচারকারী চক্রের সক্রিয় সদস্যদর গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন-মো. আজিজুল হক, মো. মোছলেম উদ্দিন ওরফে রফিক এবং মো. কাউছার।
এ সময় তাদের থেকে ৩টি পাসপোর্ট, ৩টি মোবাইল ফোন, নগদ ২৭ হাজার টাকা জব্দ ও ৩ জন নারী ভিকটিমকে উদ্ধার করা হয়।
অধিনায়ক আবদুল্লাহ আল মোমেন বলেন, কমবয়সী দরিদ্র নারীরা পাচারকারীদের মূল টার্গেট। বিদেশে চাকরীর প্রলোভন দেখিয়ে পাচারকারীরা সহজ সরল মানুষগুলোকে ফাঁদে ফেলে নিয়ে যাচ্ছে অন্ধকার জগতে। তাদের অপরাধের জালে জড়িয়ে অবৈধ পথে বিদেশ পাড়ি দিতে গিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিচ্ছে অধিকাংশ নারীরা। এসব নারীদেরকে বিদেশে লোভনীয় ও আকর্ষণীয় বিভিন্ন পেশায় চাকরির কথা বলা হলেও তাদেরকে বিক্রি করে দেওয়া হয় এবং জোরপূর্বক সম্পৃক্ত করা হয় ডিজে পার্টি, দেহ ব্যবসাসহ বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডে।
তিনি বলেন, এ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক মানব পাচারকারী চক্রের বিদেশী নাগরিকসহ অসংখ্য মানব পাচারকারী চক্রের সদস্যকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হয়েছে। এসকল মানব পাচারকারী চক্রের নিকট হতে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-১ গোয়েন্দা নজরদারী অব্যাহত রেখে সম্প্রতি রাজধানীসহ বেশ কিছু এলাকায় মানব পাচারকারী চক্রের তথ্য পায়। তথ্যের ভিত্তিতে বিশেষ এক অভিযান পরিচালনা করে আন্তর্জাতিক এ মানব পাচারকারী চক্রের সক্রিয় সদস্যদের গ্রেপ্তার করে।
আবদুল্লাহ আল মোমেন আরো বলেন, বর্তমানে দুবাই-এ অবস্থানরত মহিউদ্দিন ও শিল্পী এর পরিকল্পনা ও নেতৃত্বে এ ধরনের অপরাধ সংঘঠিত হচ্ছে বলে তারা জানতে পেরেছে।
মহিউদ্দিনের সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গের যোগসাজসের প্রমাণ পাওয়া গেছে। পলাতক আসামি নূর নবী রানা ও মনজুর হোসেন মানব পাচারকারী চক্রের দেশীয় মূল হোতা। মো. আজিজুল হক এই মানব পাচারকারী চক্রের অন্যতম সমন্বয়ক। আজিজুল হকের মাধ্যমে মহিউদ্দিন ভিকটিমের বিদেশে যাওয়ার খরচের টাকা প্রেরণ করত।
তিনি বলেন, পলাতক আসামি তাহমিনা বেগম এবং আসামি রফিক ও কাউছার কমবয়সী সুন্দরী মেয়েদের টার্গেট করত। অতঃপর বিভিন্ন কোম্পানী ও গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে চাকরী দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে এই প্রতারক চক্র মেয়েদেরকে বিদেশ গমনে প্রলুব্ধ করে এবং কোনো তরুণী বিদেশ যেতে রাজী না হলে হুমকি প্রদান করেন।
এ ছাড়া এ চক্র প্রবাসে গমনেচ্ছুক বহুবিধ পুরুষ ভিকটিম হতে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেছেন।
আবদুল্লাহ আল মোমেন বলেন, আন্তর্জাতিক পাচারকারী এ চক্রটি প্রায় ৮০ জন নারীকে এভাবে পাচার করেছে। পাচার হওয়া নারীদেরকে উদ্ধার এবং অন্যান্য অপরাধীদেরকে গ্রেপ্তারের অভিযান অব্যাহত আছে।
অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান র্যাবের এই কর্মকর্তা।
কেএমএইচ/এমএমএ/