আট মাস পর মায়ের কোলে শিশু ইমরান
অপহরণ হাওয়া চার বছরের শিশু ইমরানকে উদ্ধার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ওয়ারী বিভাগ। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অপরাধে অপহরণকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গতকাল শুক্রবার (১১ ফেব্রুয়ারি) কুমিল্লা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তির নাম ইসমাইল হোসেন ওরফে জীবন ওরফে আকাশ।
ডিবি পুলিশ জানায়, ইসমাইল মূলত একজন প্রতারক। সে একেক সময় একেক নামে পরিচয় দিত। অবশেষে ডিবি পুলিশের এক ছায়া তদন্তে তার আসল রহস্য বেরিয়ে এসেছে। এরপর বিশেষ এক অভিযান পরিচালনা করে প্রতারক ইসমাইলকে গ্রেপ্তার
করা হয়।
দীর্ঘ আট মাস পর শিশু ইমরানকে উদ্ধার করা হয়। সে নাম বলতে পারে না। এমনকি তার মা, দাদি ও পরিবারের সদস্য কাউকে চিনতে পারে না। এ এক মর্মান্তিক ঘটনা! মা সন্তানকে চেনে কিন্তু সন্তান মাকে চিনতে পারে না। অবশেষে বেরিয়ে এল আসল ঘটনা। পরে শিশুটি এক সময় এক এক নাম বলে। যখন শিশুটির মা তাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করল তখন শিশুটিও তার মাকে কাছে পেয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে কান্না শুরু করল।
শনিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ডিবি দক্ষিণ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিবি পুলিশের ওয়ারী বিভাগের ডিসি আশরাফ হোসেন এ তথ্য জানান।
ডিবি পুলিশের ওয়ারী বিভাগের ডিসি আশরাফ হোসেন বলেন, ডিবি পুলিশের এক ছায়া তদন্তের মাধ্যমে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে দীর্ঘ আট মাস পর বিক্রি হওয়া শিশু ইমরানকে উদ্ধার করা হয়। মামলাটি তদন্তকালে তারা জানতে পারেন, শিশুটির নানী হামিদা খাতুন রাজধানীর দক্ষিনখানের জামতলা এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। তার মেয়ে রাশিদা ঋতুন বাসা বাড়িতে কাজ করেন। ছয় বছর পূর্বে মেয়ে রাশিদা খাতুনের পার্শ্ববর্তী থানার মো. মাজারুল ইসলামের সঙ্গে পারিবারিক ভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের দুই বছর পর ইমরানের জন্ম হয়। সন্তান জন্মের তিনমাস পর তার স্বামী যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিলে বেঁচে থাকার তাগিদে তারা দক্ষিনখান এলাকায় বসবাস শুরু করেন। বসবাসকালে আসামি ইসমাইল হোসেন রাশিদাকে বিভিন্নভাবে উত্যক্ত করে এবং অনৈতিক প্রস্তাব দেয়। অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তার বাচ্চাকে অন্য জায়গায় বিক্রি করে দেয়।
তিনি আরও বলেন, আসামি ইসমাইল অসৎ উদ্দেশে বিভিন্ন সময় চকলেট ও চিপস কিনে শিশুটির সঙ্গে ঘনিষ্ট হওয়ার চেষ্টা করত। একপর্যায়ে শিশুর মা বাড়িতে না থাকায় কৌশলে গত বছরের ১৫ জুন শিশু ইমরানকে ভাড়া বাসা থেকে অপহরণ করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যান।
ডিসি আশরাফ বলেন, এরপর অনেক খুঁজে ইমরানের কোন সন্ধান না পাওয়ায় ভিকটিমের মা রাশিদা পাগল প্রায় হয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাঘুরি করে। এরপর সে আসামি ইসমাইলকে সন্দেহ করে এবং তার মােবাইল নম্বর সংগ্রহ করে। রাশিদা আসামির সঙ্গে ফোনের মাধ্যমে যােগাযােগ করলে আসামি জানায়, তার ছেলেকে কাগজপত্র করে বিক্রি করে দিয়েছে। তার ছেলেকে পাওয়ার জন্য বিভিন্ন সময় আাসামির সঙ্গে যোগাযােগ করলে সে অনৈতিক প্রস্তাব দিত এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করত। রাশিদা ছেলেকে ফিরে পাওয়ার জন্য দীর্ঘ ৮ মাস ধরে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেও তার অপহৃত ছেলেকে উদ্ধার করতে পারেনি।
ডিবি ওয়ারী বিভাগের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘রাশিদা ও তার পরিবারে লেখাপড়া না থাকায় এবং কারও নিকট থেকে সঠিক পরামর্শ না পাওয়ায় দীর্ঘদিন যাবত তার ছেলেকে উদ্ধারের বিষয়ে কোনো আইনগত পদক্ষেপ নিতে পারেনি। একজন সন্তান হারানাে মায়ের আহাজারিতে যখন আকাশ বাতাশ ভারী হয় তখন বিষয়টি আমাদের দৃষ্টিতে আসে। আমরা দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করি।’
ডিবি পুলিশ জানায়, শিশু ইমরানকে উদ্ধার করার জন্য ডিবি ওয়ারী বিভাগের সংঘবদ্ধ অপরাধ ও গাড়ি চুরি প্রতিরােধ টিমের টিম লিডার মাহফুজুর রহমানের নেতৃত্বে প্রযুক্তির সহায়তায় প্রতারক ইসমাইল হােসেনকে কুমিল্লা থেকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।
ডিসি আশরাফ হোসেন বলেন, আসামির তথ্যের ভিত্তিতে নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলা এলাকার যাত্রাবাড়ী গ্রাম থেকে শিশু ইমরানকে উদ্ধার করা হয়।আসামি ইসমাইল হােসেনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া।
এমএইচ/এমএমএ/