মাজারের আড়ালে কৌশলে মাদক ব্যবসা করত পিচ্চি মনির!
র্যাবের হাতে গ্রেপ্তারকৃত মো. আব্দুল্লাহ মনির ওরফে পিচ্চি মনির মাদক ব্যবসা চালানোর জন্য বাবার নামে খুলেছেন 'চাতক শাহ মাজার'। এ মাজারের আড়ালে চালিয়ে যেত রমরমা মাদক ব্যবসা। এ ছাড়া ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় ভাড়াটিয়া ছদ্মবেশে মাদকের গোপন কারবার করত সে।
আজ শুক্রবার (১১ ফেব্রুয়ারি) কাওরান বাজার মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ তথ্য জানান।
বৃহস্পতিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) রাতে রাজধানীর হাজারীবাগ থানা এলাকার মধুবাজারের একটি ফ্ল্যাট থেকে পিচ্চি মনির ও তার সহযোগীক গ্রেপ্তার র্যাব-২।
এসময় তাদের থেকে ২টি বিদেশি পিস্তল, ম্যাগাজিন, ১২ রাউন্ড তাজা গুলি, ১৮ হাজার ৭৭০ পিস ইয়াবা, ৬ গ্রাম আইস ও মাদক বিক্রয়লব্ধ নগদ ৪ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা জব্দ করা হয়।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত রাতে র্যাব-২ রাজধানীর হাজারীবাগ থানা এলাকার মধুবাজারের একটি ফ্ল্যাটে অভিযান করে মাদক ব্যবসার অন্যতম হোতা আব্দুল্লাহ মনির ওরফে পিচ্চি মনিরকে বিদেশি অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃত মনির মাদক ও অস্ত্র ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি স্বীকার করেছে।
র্যাব মুখপাত্র বলেন, গ্রেপ্তারকৃত পিচ্চি মনিরের পরিবার জীবিকার জন্য ১৯৯৫ সালে ঢাকায় আসে এবং লালবাগের শহীদনগরে বসবাস শুরু করে। মনিরের পিতা জীবিকা নির্বাহের জন্য ফলের ব্যবসা শুরু করেন। মনির তাকে সহযোগিতা করত। এক সময় মনির এলাকার বখাটে ছেলেদের সঙ্গে চুরি, ছিনতাই ইত্যাদি অপরাধের মাধ্যমে তার অপরাধ জগতে হাতেখড়ি দেয়। ধীরে ধীরে সে এলাকার বখাটেদের নিয়ে লালবাগ, কামরাঙ্গীরচর ও কেরানীগঞ্জ থানা এলাকায় একটি অপরাধ চক্র গড়ে তোলে। এই চক্রটি ব্যবহার করে সে মাদক ব্যবসা শুরু করে।
তিনি আরও বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে মনির র্যাবকে জানায়, সে ২০১২ সাল থেকে কামরাঙ্গীরচর এলাকায় তার বন্ধুর সঙ্গে অংশীদারীত্বে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত হয়। প্রথমে স্থানীয় মাদক ডিলারদের কাছ থেকে অল্প অল্প করে মাদকদ্রব্য ক্রয় করে খুচরা মাদক সেবনকারীদের নিকট বিক্রয় করত। ২০১৬ সালে কক্সবাজারের ইয়াবা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তার নেটওয়ার্ক তৈরি করে। এরপর টেকনাফ ও কক্সবাজার থেকে নিয়মিত মাদকদ্রব্য ইয়াবা সরবরাহ করত। মাঝেমাঝে সে ও তার সিন্ডিকেটের সদস্যরা ঢাকা থেকে কক্সবাজার গমন করে মাদকের চালান নিয়ে আসত। মূলত তারা মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করে অর্থ লেনদেন করত। শতকরা ২০ শতাংশ হারে অ্যাডভান্স পেমেন্টের মাধ্যমে ইয়াবা ঢাকায় চলে আসত।
র্যাব জানায়, মাদকের ডেলিভারি ও লেনদেন গ্রেপ্তারকৃত মনিরের ভাড়া বাসায় বা সুবিধামতো স্থানে সম্পন্ন হতো। গ্রেপ্তারকৃত মনির ঢাকায় বিভিন্ন জায়গায় ভাড়াটিয়া ছদ্মবেশে মাদকের গোপন কারবার করত। সে প্রতিমাসে কয়েকটি চালান টেকনাফ, কক্সবাজার থেকে ঢাকায় আসত। পরে মিরপুর-১৩, ইসলামবাগ, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, হাজারীবাগ, কেরানীগঞ্জ, কামরাঙ্গীরচর, আজিমপুরসহ আরও কয়েকজন খুচরা ব্যবসায়ীদের মাদক সরবরাহ করত। প্রত্যেক খুচরা বিক্রেতার জন্য ভিন্ন ভিন্ন মোবাইল ফোন ব্যবহার করত। কৌশলগত কারণে খুচরা বিক্রেতাদের একে অপরের কাছে অপরিচিত রাখত।
কমান্ডার মঈন খান বলেন, ২০২০ সালের ডিসেম্বরে মোহাম্মদপুর থানার হাতিরপুল এলাকায় তার দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে ভাড়া করা বাসায় থাকতেন। সেখান থেকে অস্ত্র ও ইয়াবাসহ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মীরা গ্রেপ্তার করেন। সে এক একটি এলাকায় এক-দুই বছরের বেশি অবস্থান করত না।
র্যাব কমান্ডার আরও বলেন, গ্রেপ্তারকৃত মনির নিজ বাড়িতে কোটি টাকার স্থাপনা নির্মাণ করেছে। সে তার বাবার কৃতি সন্তান, তা জনসাধারণকে জানানোর উদ্দেশ্যে এবং এলাকায় প্রচারের উদ্দেশ্যে সে মাদক ব্যবসার অবৈধ টাকা দিয়ে তার বাবার কবরে একটি মাজার নির্মাণ করেছে।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, গ্রেপ্তারকৃত মনির ২০১৮ সাল হতে অস্ত্র ব্যবসা শুরু করে। সে ২০১৮ সালে অবৈধ পিস্তলসহ আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয় এবং ৭ মাস কারা অন্তরীণ ছিল। পরবর্তীকালে সে ২০২০ সালে অস্ত্র ও মাদক মামলায় আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়। এ সময় সে এক বছর কারাবরণ করেছে। তার নামে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় অস্ত্র ও মাদক সংক্রান্ত সর্বমোট ৩টি মামলা রয়েছে।
এমএইচ/টিটি