শিশু লিজা হত্যা, আসামি গ্রেপ্তার
হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুরের আলোচিত শিশু তাকমিনা আক্তার লিজা ক্লুলেস হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। পুলিশ জানায়, প্রেমের গোপন সম্পর্ক দেখতে পাওয়ায় দীর্ঘদিনের ক্ষোভ থেকে মামা চকলেটের প্রলোভন দেখিয়ে শিশু লিজাকে হত্যা করা হয়।
এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ৩ জনকে গ্রেফতার করছে জেলা পিবিআই। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, বাহার উদ্দিন, খাদিজা আক্তার তাজরীন ও আমেনা খাতুন আঞ্জুদ।
বৃহস্পতিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) হবিগঞ্জ জেলার পিবিআই'র পুলিশ সুপার মো. আল মামুন শিকদার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
হবিগঞ্জ পিবিআই জানায়, গত বছরের ৭ জুলাই ঈদ-উল-আজহার দিন সকালে সেলিনা বেগম তার মেয়ে তাকমিনা আক্তার লিজাকে পাশের গন্ধব্যপুর গ্রামের একটি দোকান থেকে নুডুলস ও প্রয়োজনীয় কিছু দ্রব্য সামগ্রী কিনে আনার জন্য পাঠান। পরবর্তীতে তার মেয়ে নুডুলস নিয়ে বাড়ি ফিরে না আসলে আশেপাশের সম্ভাব্য সকল স্থানে ও আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে খোঁজাখুজি করে মেয়ের কোন সন্ধান না পেয়ে সেলিনা বেগম মাধবপুর থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি করেন।
এরপর ওই বছরের ২৫ জুলাই দুই মহিলা গ্রামের বাঁশ ঝাড়ের ভিতর কাঠ কুড়াতে গিয়ে লিজার অর্ধ-গলিত মৃতদেহ দেখতে পান এবং ভিকটিমের মা সেলিনা বেগমকে সংবাদ দেন। তাৎক্ষনিক ভাবে সেলিনা বেগম ঘটনাস্থলে হাজির হয়ে তার মেয়ের অর্ধ-গলিত মৃতদেহ শনাক্ত করেন।
এই ঘটনায় লিজার বাবা বাদী হয়ে মাধবপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এরপর পিবিআই হবিগঞ্জ ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার মো. আল মামুন শিকদার এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে মামলাটি তদন্ত করা হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) মো. শাহনেওয়াজ তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ও সোর্সের মাধ্যমে আসামীদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হন।
এসআই মো. শাহনেওয়াজ বলেন, মামলাটি তদন্তকালে প্রাপ্ত তথ্য প্রমানে জানা যায় যে, গ্রেফতারকৃত আসামী খাদিজা আক্তার তাজরীন এর ছোট ভাই তাকবীর হাসানের সাথে পার্শ্ববর্তী বাড়ির সিরাজের মেয়ে শান্তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। একদিন সন্ধ্যায় তাদের বাড়ির পাশে শান্তা এবং তাকবীর দেখা করার সময় লিজা তাদের দেখে ফেলে এবং ঘটনাটি শান্তার মাকে জানায়। শান্তার মা বিষয়টি জানার পর শান্তাকে গালি-গালাজ করে এবং শান্তার মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়। একপর্যায়ে শান্তার সাথে তাকবীরের প্রেমের সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায়। এরই প্রেক্ষিতে তাকবীর লিজার উপর ক্ষুদ্ধ হয় এবং লিজাকে শায়েস্তা করার জন্য সুযোগ খুঁজতে থাকে।
তিনি বলেন, গত বছরের ৭ জুলাই আনুমানিক সকাল সাতটার দিকে শিশু লিজা পাশের গন্ধব্যপুর গ্রামের দোকান থেকে নুডুলস ও জর্দার কৌটা কিনে বাড়ি ফেরার পথে তাকবীর নির্জন জায়গায় ভিকটিমকে মামা চকলেটের লোভ দেখিয়ে ভুলিয়ে তাদের বাড়ির মাটির ঘরে নিয়ে যায় এবং সেখানে লিজাকে গলা টিপে হত্যা করে। হত্যার পর লাশ সে তার পরিবারের সহায়তায় বস্তাবন্দি করে গোয়ালঘরে লুকিয়ে রাখে।
ঘটনা বর্ণনা দিয়ে পিবিআই'র হবিগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার আল মামুন শিকদার বলেন, শিশু লিজাকে হত্যার ৪ দিন পর তার মৃতদেহ থেকে দূর্গন্ধ বের হলে তাকবীর তার পরিবারের লোকজন ও আসামী বাহার উদ্দিনের সহায়তায় রাতের আঁধারে লিজার মৃত দেহ আইলাবই গ্রামের একটি বাঁশ ঝাড়ের ভিতরে ফেলে দেয়।
এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত আসামিদের আদালতে সোপর্দ করা হলে তারা নিজেদের দোষ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেয়। গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
এমএইচ/এএস