ভারতীয় জাল রুপি পাচারে সরকারি গাড়িচালক!
ভারতীয় জাল রুপি পাচারকারী চক্রের চারজনকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ বলছে, এদের মধ্যে একজন সরকারি গাড়িচালক। তার নাম আমান উল্লাহ ভূঁইয়া। তিনি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সুনামগঞ্জ জেলা শাখার সরকারি গাড়িচালক।
বুধবার (৯ ফেব্রুয়ারি) ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে ডিবি (গোয়েন্দা) পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হাফিজ আক্তার এসব তথ্য জানান।
গ্রেপ্তার অন্যরা হলেন- কাজল রেখা, ইয়াসিন আরাফাত কেরামত ও নোমানুর রহমান খান। গ্রেপ্তারের সময় তাদের হেফাজত থেকে ১৫ লাখ ভারতীয় রুপির জাল সুপার নোট এবং মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) হাফিজ আক্তার বলেন, চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিক মহলে ভারতীয় জাল রুপি সুপার নোট পাচার করে আসছেন। এ সুপার নোট হুবহু দেখতে রুপির মতো। যার কারণে অনেকে প্রথমে আসল রুপি চিনতে পারে না। দীর্ঘদিন ধরে কৌশলে তারা পাচার করে আসছিলেন।
হাফিজ আক্তার বলেন, গত বছরের নভেম্বর মাসে খিলক্ষেত থানায় দায়ের করা ৭ কোটি ৩৫ লাখ ভারতীয় জাল রুপি পাচার সংক্রান্ত মামলা গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের কাছে হস্তান্তর হলে গুলশান বিভাগ তদন্ত শুরু করে। এ মামলার তদন্তে প্রাপ্ত তথ্যের মাধ্যমে গত ৭ ফেব্রুয়ারি গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের একাধিক টিম পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোড এলাকা থেকে নোমানুর রহমান খানকে গ্রেপ্তার করে।
ডিবি জানায়, গ্রেপ্তার নোমান জানায় পাকিস্তানে অবস্থানকারী তার ভাই মো. ফজলুর রহমান ওরফে ফরিদ বিভিন্ন সময়ে পাকিস্তান থেকে আকাশ ও সমুদ্রপথে বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী ও ভারতীয় জাল রুপির সুপার নোট (৫০০/১০০০) বিভিন্ন ব্যক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশে পাঠায় আসে।
তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে পাচার করা জাল রুপির বড় একটি চালানের এক অংশসহ তার ভাই সাইদুর রহমান, ইম্পোর্টার তালেব, সমন্বয়কারী ফাতেমা আক্তার ও অন্যরা এর আগেও গ্রেপ্তার হয়েছেন। এরপর বাকি অংশ হাজারীবাগে অবস্থানকারী কাজল ও আমানের হেফাজতে রাখা হয়।
গ্রেফতার নোমানের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর হাজারীবাগ এলাকায় অভিযান চালিয়ে ২১ নম্বর মনেশ্বর রোড থেকে ইয়াসির আরাফাত ওরফে কেরামত ও আমান উল্লাহ ভূঁইয়াকে আটক করা হয়। এসময় তাদের কাছ থেকে ৬ লাখ করে মোট ১২ লাখ জাল রুপি উদ্ধার করা হয়।
হাফিজ বলেন, গ্রেপ্তারদের তথ্যের ভিত্তিতে কাজল রেখার বাসায় অভিযান চালিয়ে আরও ৩ লাখ ভারতীয় জাল রুপি উদ্ধারসহ তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তাররা জানায়, তারা দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তান থেকে আন্তর্জাতিক চক্রের মাধ্যমে ভারতীয় জাল রুপির সুপার নোট কৌশলে সংগ্রহ করেন। এরপর বিভিন্ন পণ্যের ভেতর, ব্যক্তি বা কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ এলাকা দিয়ে পাচার করে আসছিলেন।
তিনি আরো বলেন, মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার একটি পরিবারের সদস্যরা এ চক্রের কেন্দ্রে রয়েছেন। এ পরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্য ফজলুর রহমান পাকিস্তানের করাচিতে থাকেন। পাকিস্তান কেন্দ্রিক মাফিয়াদের কাছ থেকে উন্নতমানের জাল রুপি সংগ্রহ করে কখনো শুঁটকি মাছ, কখনো মোজাইক পাথর ও অন্যান্য নির্মাণ সামগ্রীর বস্তার মধ্যে সমুদ্রপথে বাংলাদেশ পাঠান তিনি। এ কাজে তাকে সহযোগিতা করতেন তার ভাই সাইদুর রহমান রহমান, নোমানুর রহমান ও ভগ্নিপতি শফিকুর রহমান। আমদানিকারকদের সঙ্গে মিলে পাকিস্তানের করাচি বন্দর থেকে শ্রীলঙ্কা হয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনারের মাধ্যমে আনা হতো।
হাফিজ আক্তার বলেন, পরে জাল রুপি খালাস করে গোডাউনে মজুদ করা, বিভিন্ন মাধ্যমে তা ডিলারদের মধ্যে বিতরণ করা এবং বিক্রয়লব্ধ জাল রুপি বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে সংগ্রহ করে হুন্ডিতে করে পাকিস্তানের পাচার করা হতো।
পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, গ্রেপ্তার আমান উল্লাহ ভূঁইয়া মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সুনামগঞ্জ জেলা শাখার সরকারি গাড়িচালক। গ্রেপ্তার কাজলরেখা সরকারি গাড়ি চালক আমান উল্লাহ ভূঁইয়ার দ্বিতীয় স্ত্রী। গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে হাজারীবাগ থানায় একটি মামলা রুজু হয়েছে।
এমএইচ/এসএন