তিনি 'জিনের বাদশা'
‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারকাতুহ। বাবাজি ভালো আছো, আমি ভালো আছি। পাক পবিত্র ওলি-আউলিয়াদের মাজার থেকে বলছি। আল্লাহ তোমার কপালে অনেক সম্পদ লিখে রেখেছে বাবাজি। তুমি নামাজ আদায় করো। আর আমরা আগামীকাল রাতে তোমার জন্য দোয়ার আয়োজন করেছি, তুমি কিছু হাদিয়া দিয়ে অংশ নিলে মহান আল্লাহ খুশী হবেন।‘
এভাবে জিনের বাদশা সেজে গভীর রাতে ফোন করে সাধারণ মানুষকে বোকা বানিয়ে গত ৬ মাসে গাইবান্ধার আব্দুল গফফার হাতিয়ে নিয়েছেন অন্তত ৫০ লাখ টাকা।
বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে জিনের বাদশা সেজে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর এসব তথ্য জানায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
মঙ্গলবার (৮ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি সদরদপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এভাবে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার কৌশল জানায় কথিত তিন জিনের বাদশা।
গ্রেপ্তাররা হলেন- আব্দুল গফফার (৩০), মো. লুৎফর রহমান (২৬) ও মো. শামীম (২৬)। এর মধ্যে আব্দুল গফফার ও লুৎফর রহমান আপন দুই ভাই।
সিআইডি জানায়, চক্রটি গাইবান্ধার বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মসহ কেবল নেটওয়ার্কের লোকাল চ্যানেলে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে জটিল ও কঠিন রোগে আক্রান্ত অসুস্থ মানুষকে সুস্থ করা, বিদেশে যাওয়ার সুব্যবস্থা, দাম্পত্য কলহ দূর করা, বিবাহের বাধা দূর করা, চাকরিতে প্রমোশন, কম দামে স্বর্ণ ক্রয়, বদ জ্বীনকে বিতাড়িত করা, খন্নাস জিনকে পাতিল বন্দী করা ইত্যাদী সমস্যা সমাধানের জন্য বিজ্ঞাপন প্রদান করত।
সমস্যা সমাধানের জন্য বিভিন্ন মানুষ যোগাযোগ করলে ভিন্ন কণ্ঠে কথা বলে নিরীহ মানুষকে ফাঁদে ফেলে এবং পরবর্তীকালে তাদের কথা অনুযায়ী কাজ না করলে প্রিয়জনের ক্ষতির ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায় করে আত্মসাৎ করত। জিনের বাদশা সেজে এই প্রতারক চক্রটি দেশের বিভিন্ন স্থানে দীর্ঘদিন যাবৎ সক্রিয় ছিল।
সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর জানান, প্রতারক চক্রের মূল উৎপাটনের লক্ষ্যে সম্ভাব্য সকল তথ্য সংগ্রহ করে দেশব্যাপী অভিযান পরিচালনা করা হয়। এলআইসির একটি চৌকস টিম গাইবান্ধা জেলায় অভিযান পরিচালনা করে কথিত ‘জিনের বাদশা’ চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, তারা জিনের বাদশা সেজে প্রতারণা করে বিভিন্ন লোকজনের অসহায়ত্বের সুযোগে তাদের সর্বশান্ত করার বিষয়টি স্বীকার করে। তারা গভীর রাতে জিনের বাদশা ও পীর দরবেশ সেজে বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে বিকাশ, নগদ, রকেটের মাধ্যমে শতাধিক ভুক্তভোগীর কাছ থেকে গত ৬ মাসে ৫০ লাখ টাকারও বেশি আত্মসাৎ করেছে।
এনএইচ/টিটি