জংগল সলিমপুরে মশিউরের আস্তানায় র্যাবের শ্বাসরুদ্ধ অভিযান
চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড জংগল সলিমপুর এলাকায় মশিউরের আস্তানায় ব্যাপক অভিযান চালিয়েছে র্যাব। সেখান থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধারসহ ৫ জন চিহ্নিত দুর্ধর্ষ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই অভিযানে র্যাবকে ১২৯ রাউন্ড গুলি ছুড়তে হয়েছে।
র্যাব সদর সপ্তর থেকে রবিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে এ তথ্য জানিয়ে বার্তা দেয়া হয়। বলা হয়, শনিবার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাতভর অভিযান পরিচালনা করে র্যাব-৭।
র্যাব-৭ জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ছিন্নমূল জঙ্গল সলিমপুর এলাকায় শিবলুর সেমিপাকা টিনসেট ঘরে অভিযান চালানো হয়। এসময় সেখানে থাকা লোকজন এলোপাথারিভাবে দৌড়ে পালানোর চেস্টা করলে সেখান থেকে ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হলেন, রফিকুল ইসলাম মালু, মো. সিরাজুল ইসলাম, মো. হাসান, জামাল শেখ, মিজানুর রহমান কদর।
পরে তাদের নিয়ে অস্ত্র উদ্ধারের ব্যাপক অভিযান চালানো শুরু করতেই মশিউরের ছেলে সন্ত্রাসী শিবলুর নেতৃত্বে একদল অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী র্যাবকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে, লাঠি সোটা ও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে র্যাবের উপর অতর্কিত আক্রমন করে। র্যাবের কর্মকান্ডে বাধা প্রদানসহ গ্রেফতারকৃত আসামীদের ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে।
একপর্যায়ে সন্ত্রাসীরা র্যাবকে লক্ষ্য করে পাহাড়ি এলাকা থেকে গুলি বর্ষণ শুরু করে। এই পরিস্থিতিতে র্যাবও পাল্টা গুলি ছোঁড়ে। সন্ত্রাসীরা গুলি করতে করতে দুর্গম পাহাড়ের দিকে পালিয়ে যায়। নিজেদের জীবন ও অস্ত্র ও গোলাবারুদ রক্ষার্থে র্যাবও বিভিন্ন অস্ত্র দ্বারা ১২৯ রাউন্ড গুলি বর্ষণ করে। র্যাব এলাকাটিকে ঘিরে রাখে। পরবর্তীতে অধিক ফোর্স নিয়ে সন্ত্রাসীদের আস্তানায় ব্যাপক তল্লাশী শুরু হয়।
অভিযান চলাকালীন সময় র্যাব-৭ এর অধিনায়ক জঙ্গল ছলিমপুর অভিযানস্থলে ছুটে আসেন এবং অভিযানের নিবিড়ভাবে তদারক করেন। সন্ত্রাসীদের আক্রমন ও ইট পাটকেল ছোড়ায় কয়েক জন র্যাব সদস্য কিছুটা আঘাতপ্রাপ্ত হয়।
র্যাব-৭ জানায়, অভিযানকালীন সময় বিভিন্ন স্থান ও সন্ত্রাসীদের হেফাজত থেকে ১০ টি দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র, ১ টি বিদেশী আগ্নেয়াস্ত্র, ১ টি ধারালো ছোরা এবং মোট ২২ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। এছাড়াও তাদের আস্তানা থেকে মিলিটারী গেজেট, মিলিটারী পোশাক, মিলিটারী বাইনোকোলার ও অবৈধ ধাতব মুদ্রা উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত আগ্নেয়াস্ত্ররের ভিত্তিতে পৃথক তিনটি অস্ত্র মামলা ও র্যাবের উপর আক্রমন, সরকারী কর্তব্যে বাধা প্রদানের কারনে একটি র্যাব এসোল্ট মামলা ও মিলিটারী উপকরণ রাখা ও অবৈধভাবে ধাতব মুদ্রা রাখায় পৃথক পৃথক মামলা রুজু প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে র্যাব জানায়, তার দীর্ঘ দিন যাবৎ চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুন্ড থানাধীন জঙ্গল ছলিমপুর এলাকায় নিজেদের প্রভাব বিস্তার, চাঁদাবাজী, সরকারি জমি প্লট আকারে লোক জনের কাছে বিক্রয় করে টাকা আদায় করে। ওই এলাকায় গরীব বসতি লোক জনের কাছ থেকে বিদ্যুতের মিটার না দিয়ে মশিউরের নিজ মিটারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে বিদ্যুতের সরকারী মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি টাকা আদায় করত। এছাড়াও ওই এলাকায় ছিনতাই, চাঁদাবাজী এবং নিজেদের অপরাধকর্ম চালিয়ে যাওয়ার স্বার্থে মশিউর ও তার ছেলে শিবলু একটি সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তুলে।
গ্রেপ্তারের বিষয়ে র্যাব-৭ জানায়, রফিকুল ইসলাম মালুর বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম জেলার বায়েজিদ থানায় ১টি মামলা রয়েছে এবং সে এলাকায় মালু নামে পরিচিত। মো. সিরাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন থানায় ৫ টি অস্ত্র মামলা রয়েছে। মো. হাসানের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন থানায় ৭ টি মামলা রয়েছে। জামাল শেখের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন থানায় ১০ টি মামলা রয়েছে। মিজানুর রহমান কদরের চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন থানায় ১০ টিরও অধিক মামলা রয়েছে এবং সে এলাকায় অন্ধ জামাল ও বাবুর্চি জামাল নামে পরিচিত।
এনএইচ/