ফোন নম্বর চেনালো ডাকাত দল
এগারো সংখ্যার একটি ফোন নম্বর। এই ফোন নম্বরটি মিলিয়ে দিলো আলোচিত বাস ডাকাতির মামলার আসামিদের। তদন্তের একপর্যায়ে দুর্ধষ ওই ডাকাত দলের সন্ধান পেয়ে যায় পুলিশ। পরবর্তীতে আলোচিত সেই বাস ডাকাতির ঘটনায় একে একে ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঘটনার সময় বিভিন্ন যাত্রীদের মোবাইল ফোনের বিকাশ একাউন্ট থেকে পিন নাম্বার নিয়ে টাকা তুলে নেয় ডাকাত দলের সদস্যরা। ওই বিষয়টি সামনে নিয়ে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। এরপর তারা ঢাকার একটি বিকাশ এজেন্ট একাউন্ট শনাক্ত করে। ওই এজেন্ট থেকে ডাকাত দলের সদস্যরা টাকা উত্তোলন করেন বলে নিশ্চিত হয় গোয়েন্দারা। পরে পুলিশ ওই দোকানের সন্ধানে নামে। একপর্যায়ে সেখান থেকে একটি সিসি ক্যামরা ধরে একে একে ১৪ ডাকাতকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ।
ধারনা করা হচ্ছে তারাও এ ঘটনার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। ইতোমধ্যে তারা নজরদারি রয়েছেন। যেকোন সময় তাদের গ্রেপ্তার করা হবে বলে তদন্ত তদারক সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে রিমান্ডে থাকা ৮ ডাকাত চাঞ্চ্যকর তথ্য দিচ্ছে। তারা এর আগেও একাধিক ডাকাতির ঘটনা ঘটিয়েছে বলে স্বীকার করেছে। বিশেষ করে রাজধানীর উপকণ্ঠ এলাকায় তাদের সদস্যরা বেশি সক্রিয় বলে তদন্তে উঠে আসছে। রাত গভীর হলেই চক্রের সদস্যরা প্রায়ই বাস নিয়ে ডাকাতিতে নেমে পড়ে। তাদের নামে টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ ও শিবালয় থানায় একাধিক ডাকাতি মামলার সন্ধান পাওয়া গেছে।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের তেজগাঁও জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার শাহাদাত হোসেন সুমা জানান, গ্রেপ্তার ডাকাত দলের সদস্যদের নামে মানিকগঞ্জ, শিবালয় ও টাঙ্গাইলের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলার প্রমাণ পাওয়া গেছে। সেখানেও তারা মহাসড়কে ডাকাতি করেছে বলে জানা গেছে। তারা সবাই পেশাদার ডাকাত। এর আগে তারা একাধিকবার গ্রেপ্তার হলেও জামিনে মুক্তি পেয়ে আবারও একই পেশায় ফিরে গেছেন।
এরআগে, গত ২০ জানুয়ারি ডাকাত দলের সদস্যরা আমিনবাজার থেকে আর.কে.আর পরিবহনের একটি বাসকে ভাড়ার কথা বলে সাভারের গেন্ডা এলাকায় নিয়ে যায়। সেখান থেকে তারা প্রথমে বাসের চালক ও হেলপারকে জিম্মি করে বাসটির নিয়ন্ত্রণ নেয়। পরে বাসটি নিয়ে ঢাকা মহানগর এলাকার বিভিন্ন সড়কে ঘুরতে থাকে।
টার্গেট করে যাত্রী উঠিয়ে পরবর্তীতে অস্ত্রের মুখে তাদের জিম্মি করে। এরপর হাত-মুখ বেঁধে তাদের সঙ্গে থাকা নগদ টাকা, মোবাইল ফোন ও মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনিয়ে নিয়ে তাদের নির্জন স্থানে নামিয়ে দেয়। ভুক্তভোগীদের মধ্যে টাঙ্গাইল ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. শফিকুল ইসলাম সজীবও ছিলেন। তিনি প্রাণে বেঁচে ফিরলেও চোখ বেঁধে রাতভর তাকে বেদম পেটান ডাকাত দলের সদস্যরা। এ ঘটনার পর তিনি থানায় গিয়ে মামলা করতে না পেরে ফেইসবুকে একটি পোস্ট দেন। মুহুর্তেই তা ভাইরাল হয়ে যায়। এরপর আইজিপির নির্দেশে মামলার তদন্তে নামে ঢাকা মেহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।
গ্রেপ্তাররা হলেন- দিলিপ ওরফে সোহেল, আলামিন, নাইম, বিপ্লব, সজিব, আজাদ, জহিরুল ও আল আমীন-২। তাদের কাছ থেকে চাপাতি, ছোরা, লোহার রড, চোখ বাঁধার গামছা, ১০টি মোবাইল ফোনসেট, দুটি খেলননা পিস্তল উদ্ধার করা হয়।
তদন্ত তদারক কর্মকর্তারা বলেন, প্রাথমিক অবস্থায় এই চক্রে ১৪ জনের সম্পৃক্ততার তথ্য পাওয়া গেছে। তারা সবাই সাভার, গেন্ডা, মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইল ও গাজীপুর এলাকার পেশাদার ডাকাত বলে চিহ্নিত। তারা বেশিরভাগ সময় এসব এলাকায় ডাকাতি করলেও মাঝেমধ্যে তারা ঢাকায় এসে এ ধরনের ঘটনা ঘটায়। বিশেষ করে তারা ঢাকার ভেতর পণ্যবাহী ট্রাক ও কাভার্ডভ্যানে ডাকাতি করলেও এবারই প্রথম বাস নিয়ে ডাকাতিতে নেমে পড়ে। তাদের ধারনা ছিলো ঘটনা ঘটিয়ে পার পেয়ে যাবে। ভয়ে কেউ মুখ খুলবে না। কিন্তু পুলিশের তৎপরতায় তারা গ্রেপ্তার হয়। এ ঘটনায় পলাতক সদস্যরাও বিভিন্নভাবে ডাকাতিতে জড়িত ছিলো বলে রিমান্ডে থাকা ডাকাত সদস্যরা তথ্য দিচ্ছেন।
জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, কোনো অপরাধ সংঘটিত হওয়ার আগেই অপরাধীরা নিরাপদ এলাকা বেছে নেয়। বাসটি যখন ১২ ঘণ্টা ঘুরছিল এবং ডাকাতি হচ্ছিল তখন বাসটিকে নজরদারিতে আনা হয়নি। রাস্তায় ৫০০টি গাড়ির ভেতর একটিতে ডাকাতি চললে নজরে আসার সুযোগ থাকে না। যখনই এরকম কয়েকটি ঘটনা ঘটে তখনই আমরা তৎপরতা শুরু করি। তারপর এসব ঘটনা আবার কমে যায়। এখানে আমরা কারও অবহেলার বিষয়টি বলতে চাচ্ছি না। আমরা যদি ঠিকভাবে এগুলো নজরদারিতে রাখি, তাহলে অটোমেটিক্যালি এসব ঘটনা কমে যাবে।
তিনি বলেন, আমরা যখনই কোনো ডাকাত চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তার করি, দেখা যায় মামলার বিচারের দীর্ঘসূত্রতার কারণে তারা আবার জামিনে বের হয়ে একই পেশায় যুক্ত হয়। তাদের গ্রেফতার করতে যত সময় লাগে, তারচেয়েও কম সময়ে তারা জামিনে বের হয়ে যায়।
এনএইচ/এএস