বিকাশের চাকরি ছেড়ে প্রতারক চক্র
দুইশ গ্রাহকের কোটি টাকা আত্মসাৎ
বিকাশের এসআর হিসেবে তিন বছর চাকরি করেন সুমন শিকদার। এরপর চাকরি ছেড়ে নামেন প্রতরণায়। সদস্য সংগ্রহ করে গড়ে তোলন একটি চক্র। পরের চার বছরে বিকাশের দু্ইশ এজেন্ট ও গ্রাহকের কাছ থেকে হাতিয়ে নেন কোটি টাকা।
বুধবার (২৬ জানুয়ারি) কারওয়ান বাজারে মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় র্যাব-৪।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দীর্ঘ অনুসন্ধানের পরে প্রতারক চক্রের তিন সদস্যকে ফরিদপুর ও মুন্সিগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হলেন, মুন্সিগঞ্জের সুমন শিকদার, ফরিদপুরের নুরুজ্জামান মাতুব্বর এবং সজিব মাতুব্বর (২১)। এসময় তাদের হেফাজত থেকে উদ্ধার করা হয় প্রতারনার কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন নামের ২৪ টি সিম ও ১৩টি মোবাইল।
র্যাব জানায়, সুমন শিকদার মুন্সিগঞ্জের স্থানীয় একটি স্কুল হতে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করে ১৯৯৬ সালে শ্রমিক ভিসায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবে যান। ২০০১ সালে সৌদি আরব থেকে দেশে ফেরত এসে মোবাইলের দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ শুরু করে। সে ২০০৫ সালে মোবাইলের দোকানের কাজ বাদ দিয়ে স্থানীয় একটি এনজিওতে কাজ শুরু করে। ২০১০ সালে এনজিও বন্ধ হয়ে গেলে পুনরায় সে মোবাইলের দোকানে কাজ শুরু করে। ২০১৪ সালে সে মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বিকাশ কোম্পানির এসআর হিসেবে কাজ শুরু করে। ২০১৭ সালে শেষের দিকে সে আর্থিক প্রলোভনে পরে এ প্রতারক চক্রের সঙ্গে যুক্ত হয়। সে প্রতারিত অর্থের কমিশনের বিনিময়ে এই প্রতারক চক্রের কাছে বিকাশ এজেন্টদের তথ্য সরবরাহ করত।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এই চক্রের আরেক সদস্য নুরুজ্জামান মাতুব্বর। ফরিদপুরের স্থানীয় একটি স্কুল হতে ৩য় শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। সে ২০০০ সালের শুরুতে জীবিকার তাগিদে ঢাকায় এসে স্যানিটারী মিস্ত্রির সহযোগী হিসেবে কাজ শুরু করে। ২০১৫ সালে ঢাকা থেকে তার নিজ এলাকা ফরিদপুরে গিয়ে কৃষি কাজ শুরু করে। পরবর্তীতে ২০১৮ সালে জনৈক মোস্তাকের মাধ্যমে ডিজিটাল প্রতারণার কাজে যোগ দেয়। ২০২১ সালে পুলিশ কর্তৃক ডিজিটাল প্রতারণার মামলায় গ্রেপ্তার হয়। গত ৩ মাস আগে জামিনে বের হয়ে পুনরায় এ প্রতারণার কাজে যোগ দেয়।
চক্রের আরেক সদস্য মো. সজিব মাতুব্বর। ফরিদপুরের স্থানীয় একটি স্কুল হতে তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করে বর্তমানে কাঠমিস্ত্রির সহযোগী হিসেবে কাজ শুরু করে। সে ২০১৭ সালে মোস্তাকের মাধ্যমে ডিজিটাল প্রতারণার কাজে যোগ দেয়। ২০২১ সালে প্রথমে র্যাব কর্তৃক মাদক মামলায় এবং পরবর্তীতে পুলিশ কর্তৃক ডিজিটাল প্রতারণার মামলায় গ্রেপ্তার হয়। গত ২ মাস আগে জামিনে বের হয়ে পুনরায় এ প্রতারণার কাজে যোগ দেয়।
জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে র্যাব-৪ এর অধিনায়ক মোজাম্মেল হক জানান, তারা তাদের অন্যান্য পলাতক সহযোগীদের যোগসাজশে এ পর্যন্ত প্রায় ২০০ জনেরও বেশি গ্রাহককে প্রতারিত করে আনুমানিক ১ কোটির উপর অর্থ আত্মসাৎ করেছে। তারা মোবাইল ব্যাংকিং প্রতারনার মাধ্যমে এজেন্টসহ জনসাধারণের কাছ থেকে বিপুল পরিমান অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। এই প্রতারক চক্রটি সাধারণত মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টদের টার্গেট করত। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তারা সাধারণ গ্রাহকদেরও প্রতারিত করেছে বলে স্বীকারোক্তি দিয়েছে। প্রতারক চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন মোবাইল সীম বিক্রেতার সঙ্গে পরস্পর যোগসাজসে অন্যের এনআইডি (রিক্সা চালক, ভ্যান চালক, খেটে খাওয়া মানুষ ও সহজ সরল মানুষদের এনআইডি) দিয়ে সীমকার্ড রেজিস্ট্রেশন করে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের সহজ সরল সাধারণ জনগনের কাছে অ্যাপস ব্যবহার করে নাম্বার ক্লোনিং করে নিজেকে মোবাইল ব্যাংকিং হেড অফিসের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে ফোন করে কৌশলে এজেন্টদের পিন কোড জেনে নিয়ে এজেন্টের অ্যাকাউন্টটি নিজের দখলে নেয়। তারপর নাম্বার ক্লোনিং করে সেই এলাকার এসআর এর কাছে উক্ত দোকানের পরিচয় দিয়ে চাওয়া হত মোটা অংকের টাকা যে টাকা অ্যাকাউন্টে আসা মাত্রই নিজের দখলে থাকা অ্যাকাউন্ট থেকে কৌশল হিসেবে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নাম্বারে স্থানান্তর করে দিত। তাদেরকে যাতে আইন শৃংঙ্খলা বাহিনী সনাক্ত করতে না পারে তার কৌশল হিসেবে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে টাকা পাঠিয়ে তার অধীনে থাকা এজেন্ট থেকে টাকা সংগ্রহ করতো। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এ গ্রুপের ২০-২৫ জন সদস্য রয়েছে বলে জানা যায়।
এনএইচ/