‘ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী হিসেবেও কাজ করতেন তারা’
রাজধানী আদাবরের সন্ত্রাসী গ্রুপে ‘বিডিএসকে’ গ্যাংয়ের প্রধান হৃদয় ওরফে হিটার হৃদয়সহ ৮ জন সদস্যকে দেশি ও বিদেশি অস্ত্রসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ও ফরিদপুর থেকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। শনিবার (২৮ জানুয়ারি) তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা হলেন- শ্রীনাথ মণ্ডল ওরফে হৃদয় ওরফে হিটার হৃদয়, মোঃ রবিন ইসলাম ওরফে এসএমসি রবিন মো. রাসেল কালো রাসেল, মো. আলামিন ওরফে ডিশ আলামি, মোঃ লোমান ওরফে ঘাড় ত্যাড়া লোমান, মো. আশিক ওরফে হিরো আশিক, মো. জোবায়ের ইসলাম ওরফে চিকনা জোবায়ের ও মো. সুমন ওরফে বাইট্টা সুমন।
তাদের ধরার পর র্যাব জানায়, তারা সবাই বিভিন্ন গ্রুপের সদস্য, ব্যক্তি স্বার্থ হাসিলের জন্য তারা ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী হিসেবেও কাজ করতো। র্যাব বলছে, গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের দেয়া তথ্যমতে মোহাম্মদপুরে তাদের আস্তানায় অভিযান পরিচালনা করে ১টি বিদেশি পিস্তল, ২টি চাপাতি, ১টি রামদা, ১টি চাইনিজ কুড়াল, ৪টি চাকু (বড় ও ছোট), ২টি হাঁসুয়া, ১টি কাঁচি এবং ১টি লোহার রড উদ্ধার করা হয়।
র্যাব জানায়, গত ৭ জানুয়ারি রাজধানীর আদাবর থানাধীন তিন রাস্তার মোড় এলাকায় একজন ভিকটিমকে জখম করে তার কাছে থাকা মোবাইল ও নগদ অর্থ ছিনতাইকারীরা নিয়ে যায়। পরবর্তীকালে ঐ ভিকটিম’কে স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করে একটি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায়। একইভাবে কিছুদিন পূর্বে একই এলাকার এক কলেজ শিক্ষার্থীর নিকট থেকেও একই কায়দায় ছিনতাইকারীরা মোটা অঙ্কের অর্থ ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এরপর র্যাব ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে। যেখানে দেখা যায় যে, ৮-১০ জনের একটি সন্ত্রাসী দল ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত ছিল। এরই প্রেক্ষিতে র্যাব গোয়েন্দা কার্যক্রম শুরু করে এবং জানতে পারে যে, ‘বিডিএসকে (ব্রেভ ডেঞ্জার স্ট্রং কিং)’ গ্রুপের প্রধান হৃদয় ওরফে হিটার হৃদয়ের নেতৃত্বে ছিনতাইয়ের ঘটনাগুলো সংঘটিত হয়েছে। যার প্রেক্ষিতে র্যাব ওই গ্রপের সদস্যসহ ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত অন্যান্য সদস্যদেরও গ্রেপ্তারের লক্ষে অভিযান পরিচালনা করে।
রবিবার (২৯ জানুয়ারি) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, তারা ‘বিডিএসকে (ব্রেভ ডেঞ্জার স্ট্রং কিং)’ গ্যাং এর সক্রিয় সদস্য। তাদের গ্রপের প্রায় ২০/২৫ জন সদস্য রয়েছে। ওই দলের গ্যাং লিডার হৃদয় ওরফে হিটার হৃদয়। তার নেতৃত্বে বিগত ২/৩ বছর পূর্বে গ্যাংটি গঠন করা হয়।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, এই গ্রুপের সদস্যরা পূর্বে সবুজ বাংলা গ্রুপ, টপ টেন গ্রুপ, ও ভাই-বন্ধু গ্রুপের এর অন্তর্ভুক্ত ছিল। আসামিরা মোহাম্মদপুর, আদাবর, বেড়িবাধ ও ঢাকা উদ্যান এলাকায় চুরি-ডাকাতি, চাঁদাবাজি, ছিনতাইসহ অন্যান্য সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। তারা বিভিন্ন সময় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ঢাকা উদ্যান, আদাবর, শ্যামলী, মোহাম্মদপুরসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় মারামারিসহ বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করতেন।
মঈন আরও বলেন, তারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ব্যক্তির স্বার্থের জন্য ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী হিসেবেও কাজ করতেন। এ ছাড়া, তারা মাদক সেবনসহ এলাকাসমূহে মাদক ব্যবসার সাঙ্গে জড়িত ছিল। এই গ্যাং এর সদস্যরা রাস্তাঘাটে ইভটিজিং, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপ্রীতিকর ভিডিও শেয়ারসহ বিভিন্ন কুরুচিপূর্ণ কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত। এ ছাড়া, আসামিরা ছিনতাইয়ের ঘটনার সঙ্গেও তাদের জড়িত থাকার বিষয়ে তথ্য পাওয়া গেছে। গ্রেপ্তারকৃতদের অধিকাংশের নামে মাদক, চুরি-ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজি ও মারামারিসহ রাজধানীর বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।
আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান র্যাবের এই কর্মকর্তা।
কেএম/এমএমএ/