নির্বাচন সামনে রেখে তৎপর হচ্ছে জঙ্গিরা!
আগামী দ্বাদশ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশে ইসলামি জঙ্গিদের তৎপরতা বাড়ছে। জঙ্গিরা রাজনৈতিকভাবেও ব্যবহার হতে পারে বলে মনে করছে সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা। অপরাধ ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশে নির্বাচন এলেই দেশে জঙ্গিবাদের তৎপরতা বেড়ে যায়। এই সময়টায় কতিপয় রাজনৈতিক মহলও জঙ্গিদের ব্যবহারের চেষ্টা করে।
গোয়েন্দারা সূত্রগুলো বলছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দেশে জঙ্গি তৎপরতা বেড়ে যেতে পারে। এর কারণ হিসেবে তারা বলছেন, অনেক জঙ্গি বর্তমান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারির বাইরে। বিশেষ করে যারা জামিনে মুক্ত হয়ে আত্মগোপন করেছে বা নিজেদের আড়াল করে রেখেছে। সাম্প্রতিক সময়ে জঙ্গিদের প্রশিক্ষণসহ নানামুখী তৎপরতাও বেড়েছে। সর্বশেষ গত নভেম্বর মাসে ঢাকার আদালত থেকে জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনাও উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন জঙ্গিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা গ্রেপ্তার করছে।
গোয়ন্দা সূত্রগুলো বলছেন, জঙ্গিদের এই অপতৎপরতা বৃদ্ধির পাশাপাশি আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি রাজনৈতিক মহলও বিভিন্ন সুবিধা দিয়ে জঙ্গিদের সক্রিয় হতে ভূমিকা রাখতে পারে।
র্যাব-পুলিশের তথ্য বলছে, একটি রাজনৈতিক মহল জঙ্গিদের ব্যবহার করার চেষ্টায় আছে। বেশ কয়েকটি মামলার তদন্ত করতে গিয়ে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
সূত্র বলছে, জঙ্গিদের হামলা করার সক্ষমতা আগের থেকে অনেকটা বেড়েছে যার। ইতোমধ্যে তারা বিভিন্নভাবে তাদের সক্ষমতা জানান দিয়েছে।
জানতে চাইলে র্যাব মহাপরিচালক (ডিজি) এম খুরশীদ হোসেন বলেছেন, ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে এবং বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিছু জঙ্গিবাদী সংগঠনের নেতারা নানা ইসলামিক কাউন্সেলিং করে সাধারণ তরুণ তরুণীদের জঙ্গিবাদে আসক্ত করছে। তিনি বলেন, কেউ যেন ধর্মকে ব্যবহার না করে, ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে বিপথগামী করতে না পারে সে জন্য ইসলাম সম্পর্কে সবাইকে কমবেশি জানতে হবে।
র্যাব ডিজি আরও বলেন, সবাইকে ডিজিটাল মিডিয়া ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্ক হতে হবে। সেই সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে পরিবারকে। পরিবার এবং সমাজ সচেতন হলে এ সব অপরাধ অনেকটা কমে আসবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) মো. আব্দুর রশীদ বলেন, জঙ্গিরা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে বিশেষ করে তরুণ-তরুণীদের টার্গেট করে তাদের জঙ্গিবাদের উদ্বুদ্ধ করছে। জঙ্গিদের নজরে না রাখলে তারা যেকোনো সময় যেকোনো স্থানে হামলা করার চেষ্টায় করবে। হয়তো আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তারা যে কোনো একটা রাজনৈতিক চক্রের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বিভিন্ন ধরনের হামলার ঘটনা বা নাশকতা করার কৌশল করতে পারে।
গোয়েন্দা তথ্য বলছে, আমাদের দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অস্থির করে তুলতে যে সকল জঙ্গি কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে, তার নেপথ্যে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ মদদ দিচ্ছে দেশের একটি রাজনৈতিক দল।
জঙ্গিদের এ সব বিষয় নিয়ে অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশে এবং দেশের বাইরে থেকে দেশের অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অস্থির করে তুলতে সংঘবদ্ধ হচ্ছে জঙ্গি চক্র। তারা দেশে এবং দেশের বাইরে অবস্থান করে এই জঙ্গি তৎপরতা চালাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের দাবি, এখনো জঙ্গিবাদের সর্বনাশা অপতৎপরতা থেকে বাংলাদেশ মুক্ত নয়।
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার মতাদর্শে অনুপ্রাণিত ৬ হিজরতকারীকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)।
ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি) বলছে, গ্রেপ্তারকৃত জঙ্গিরা প্রশিক্ষণ শেষে দেশে সশস্ত্র জিহাদের পরিকল্পনা করেছিল। অনলাইনে জিহাদি পোস্ট ও ভিডিও দেখে তারা জিহাদের জন্য অনুপ্রাণিত হয়।
জানতে চাইলে সিটিটিসির প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, আমাদের কাছে তথ্য আছে জঙ্গিরা প্রশিক্ষণ শেষে দেশে সশস্ত্র জিহাদের পরিকল্পনা করছে।
সিটিটিসির প্রধান আরও বলেন, গ্রেপ্তারকৃত জঙ্গিরা জানায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও অনলাইনভিত্তিক অ্যাপে যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে তারা দল গঠন করে। তারা টেকনাফে স্থানীয় সহযোগীদের সঙ্গে প্রশিক্ষণ নিয়েছিল। তাদের অন্যান্য সহযোগীদের গ্রেপ্তার করতে অভিযান চলমান রয়েছে।
নির্বাচন আসলে জঙ্গি তৎপরতা বেড়ে যায় কেনো এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জঙ্গিরা নির্বাচনের আগে বা এই সময়ে অনেকটা সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করে। তাছাড়া তারা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার চেষ্টা করে। তবে জঙ্গিদের নজরে রাখা হয়েছে।
এনএইচবি/আরএ/