জামায়াত নিয়ন্ত্রণে কঠোর পুলিশ
শুক্রবার জুমার নামাজের পর মিছিল থেকে সহিংসতার ঘটনায় জামায়াতে ইসলামীর নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ঢাকার চার থানায় পাঁচটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে চারটি মামলায় পুলিশের উপর হামলার অভিযোগ আনা হয়েছে। অন্যটি বিস্ফোরক আইনে। শনিবার (৩১ ডিসেম্বর) করা এসব মামলায় ৩০২ জনের নাম উল্লেখসহ মোট আট হাজার ২০২ জনকে আসামি করা হয়েছে।
গোয়েন্দা সংস্থা থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, নতুন বছরে নির্বাচনকে সামনে রেখে জামায়াত মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে পারে। তাদের দাবি, চলতি বছরে একটি রাজনৈতিক দলের আশ্রয়ে নাশকতায় ফিরতে পারে জামায়াত। রাজশাহীর পর ঢাকাতে পুলিশের উপর হামলা চালিয়ে উপস্থিতি জানান দিতে চাইছে সংগঠনটি।
ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, শুক্রবার (৩০ ডিসেম্বর) জুমার নামাজের পর রাজধানীর মৌচাকে জামায়াতের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডে বাধা দেওয়ায় পুলিশের উপর হামলা করে জামায়াত শিবিরের নেতা-কর্মীরা। এই হামলায় ১১ জন পুলিশ সদস্য আহত হন। তারা বর্তমানে রাজারবাগ পুলিশ লাইনস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ওই কর্মকর্তাদের দাবি, বোঝা যাচ্ছে নির্বাচনকে সামনে রেখে জামায়াত সক্রিয় হয়ে ওঠার চেষ্টা করছে।
এ হামলার ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে গোয়েন্দা পুলিশ বলছে, জামায়াত একটি সন্ত্রাসী দল। তারা আগুন সন্ত্রাসী কাজে যুক্ত হয়। তবে তারা যেকোনো বড় রাজনৈতক দলের সঙ্গে যুক্ত থাকতে চায়। নির্বাচনকে সামনে রেখে তারা ধীরে ধীরে চাঙ্গা হচ্ছে। একারণে তারা পুলিশের উপর হামলা করে তাদের অবস্থান জানান দেওয়ার চেষ্টা করছে।
রাজধানীর মালিবাগ এলাকায় পুলিশের ওপর অতর্কিত হামলা করে অন্তত ১০ পুলিশকে আহত করে। এর আগে গত ১৩ ডিসেম্বর রাজশাহীতে ঝটিকা মিছিল করে পুলিশের উপর হামলা করে। সম্প্রতি জামায়াতের আমির ড. শফিকুর রহমানের ছেলে রাফাত সাদিক সাইফুল্লাহকে জঙ্গিবাদে জড়ানোর অভিযোগে গ্রেপ্তার করে ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম। ছেলেকে জঙ্গিবাদে জড়ানোর তথ্য গোপন ও সহায়তার অভিযোগে তাকেও গ্রেপ্তার করা হয়। বর্তমানে জামায়াতের আমির জেলহাজতে রয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র সঙ্গে জামায়াত আমির ড. শফিকুর রহমানের ছেলে ডাক্তার রাফাত জড়িয়ে পড়েন। এর নেপথ্যে সংগঠনটিতে জড়িত অন্যদের নানাভাবে সহযোগিতা, এমনকি ব্যয়ভার বহন করেন জামায়াতে ইসলামীর আমির। রাফাতের নেতৃত্বেই সর্বপ্রথম সিলেট থেকে ১১ জন বান্দরবানে হিজরত করেন। সেখানে কুকিচিনে নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাতে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসেন। ডা. রাফাতের মতো বড় সহযোগী ও সংগঠক তাহিয়াত। তাহিয়াতের নেতৃত্বে অনেকে হিজরত করে। সে কুকিচিনে প্রশিক্ষণ অবস্থায় ছিল।
গত ১২ ডিসেম্বর রাতে জামায়াত আমির গ্রেপ্তার হলে পরের দিন ১৩ ডিসেম্বর সারাদেশে বিক্ষোভ মিছিলের ঘোষণা দেওয়া হয়। রাজশাহীতে পুলিশের উপর হামলা করে জামায়াত শিবির। রাজশাহীর নিউমার্কেট এলাকায় সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন পুলিশ আহত হয়।
এদিকে ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ থেকে বিএনপি ২৪ ডিসেম্বর ঢাকায় মিছিলের ডাক দেওয়ার পর জামায়াতও একই দিন ডাকে মিছিল। তবে সেদিন ঢাকায় আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন থাকায় কর্মসূচি পেছাতে বাধ্য হয় বিএনপি। পরে কর্মসূচি পেছায় জামায়াতও। বিএনপির সঙ্গে মিল রেখে ৩০ ডিসেম্বর মিছিলের ঘোষণা দেয় তারাও। তারা বায়তুল মোকাররম এলাকায় মিছিলের ঘোষণা দিলেও সেখানে না গিয়ে মগবাজার থেকে মিছিল শুরু করে। ঘটনাস্থল থেকে ১১ জামায়াত-শিবিরকর্মীকে গ্রেপ্তারও করে পুলিশ।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, জামায়াত-শিবির অতীতে যে নৈরাজ্য কর্মকাণ্ড চালিয়েছিল তা নতুন করে আর কোনোভাবেই ফিরতে দেওয়া হবে না। অতীতের কর্মকাণ্ডের ধারাবাহিকতার বহিঃপ্রকাশ পুলিশের উপর হামলা। আমরা কোনোভাবেই আর মেনে নেব না।
তিনি আরও বলেন, অনুমতি ছাড়াই মিছিল বের করে জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা পুলিশের উপর লাঠিসোটা নিয়ে আক্রমণ করে। এতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ পুলিশের ১১ জন সদস্য আহত হয়েছেন। পরে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দিয়ে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সিটিটিসি প্রধান মো. আসাদুজ্জামান বলেন, গ্রেপ্তার ডা. রাফাত আগে ছাত্রশিবির করতেন। যাদের আমরা গ্রেপ্তার করেছি তারা সবাই ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র ট্রেনিং ক্যাম্পে যাওয়ার জন্য হিজরত করেছিলেন। আবার তারা প্রত্যেকেই শিবিরের সাথী ছিলেন। রাফাতের সহযোগী আরিফও শিবিরের সাথী ছিলেন। যিনি নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’য় যোগ দেওয়ার আগে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সিলেট অঞ্চলের প্রধান সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করেছেন। নতুন জঙ্গি সংগঠনটির সঙ্গে জামায়াতের সরাসরি সংশ্লিষ্টতা ও সমর্থন রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেছেন, কোনোভাবে পুলিশের উপর হামলা ও দেশে আগুন সন্ত্রাসীদের জায়গা দেওয়া হবে না। জামায়াতকে যেকোনোভাবে আইনি প্রক্রিয়ায় দমন করবে পুলিশ। গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে তাদের কোনোভাবে ছাড় দেওয়া হবে না। এই ঘটনায় তদন্ত করা হচ্ছে।’
কেএম/এসএন