বছরজুড়ে যেসব ঘটনা ছিল আলোচনায়
চলতি বছরের ৯ মার্চ ইউক্রেনে রকেট হামলায় বাংলাদেশি নাবিক থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুর রহমান নিহত হন। এরপর নিহত ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুর রহমান আরিফের মরদেহ ১৫ মার্চ দেশে আসে। ঘটনাটি দেশব্যাপী ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসে।
একই মাসের ২৪ মার্চ রাত পৌনে ১০টার দিকে মতিঝিল এজিবি কলোনি কাঁচা বাজারসংলগ্ন রেস্টুরেন্ট থেকে বাসায় ফেরার পথে শাজাহানপুর আমতলা ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের সামনে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপু ও কলেজছাত্রী প্রীতি। তিনি রাজনৈতিক হত্যার শিকার হন বলে স্বজনদের দাবি। টিপুর গাড়িচালক মুন্না গুলিবিদ্ধ হন। এ ঘটনায় পরের দিন টিপুর স্ত্রী ফারজানা ইসলাম ডলি মামলা করেন। মামলায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করা হয়। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বেশ কয়েকজন আসামিকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হন। বর্তমানে মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে। এ হত্যাকাণ্ডে দেশে আলোচনা সমালোচনার ঝড় ওঠে সারাদেশে।
এ ছাড়াও আলোচিত ঘটনার মধ্যে ২৬ মার্চ রাজধানীর সবুজবাগের একটি বাসায় দুই শিশু সন্তানের মুখ বেঁধে তাদের মাকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। নিহত নারীর নাম মুক্তা আক্তার। পুলিশ জানায়- শীতাতাপনিয়ন্ত্রিত যন্ত্র (এসি) ঠিক থাকার পরেও সার্ভিসিংয়ের কথা বলে বাসায় প্রবেশ করে বাপ্পী ও তার সহযোগীরা। বাসায় ঢুকেই আলমারিতে থাকা টাকা-পয়সা লুট করতে হামলা চালায় তারা। এতে বাধা দিলে দুই শিশুর মুখ বেঁধে তাদের সামনেই মাকে গলা কেটে হত্যা করে ঘাতকেরা। এই ঘটনায় মূল আসামিসহ তার সহযোগীদের গ্রেপ্তার করে মতিঝিল বিভাগ পুলিশ।
২৭ মার্চ ভোরে রাজধানীর মিরপুরের কাজীপাড়ায় মেট্রোরেলের নির্মাণাধীন স্টেশনের নিচে ছুরিকাঘাতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে খুন হন দন্তচিকিৎসক আহমেদ মাহী বুলবুল। এই ঘটনায় ৫ জনকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। পরে ডিবি পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তা মুহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন ঢাকার সিএমএম আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
চলতি বছরের (১৮ এপ্রিল) রাতে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ী ও কর্মচারীদের সংঘর্ষ হয়। এই সংর্ঘষে আহত হয়ে পরের দিন নাহিদ হাসান (১৮) নামে এক যুবক আইসিইউতে থাকা অবস্থায় তিনি মারা যান। পরে জানা যায় নিহত এলিফ্যান্ট রোডের বাটা সিগন্যাল এলাকায় একটি কুরিয়ার সার্ভিসে চাকরি করতেন। অন্যদিনে শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষের ঘটনায় দোকান কর্মচারী মুরসালিন নিহত হন। মুরসালিনকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় তিনজনকে শনাক্ত করেছে পুলিশ। এই ঘটনায় বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এটিও ছিল আলোচিত ঘটনার মধ্যে একটি।
বেসরকারি টেলিভিশন ডিবিসি নিউজের সিনিয়র প্রোডাকশন এক্সিকিউটিভ আবদুল বারীর মৃত্যু হয় ৯ জুন। এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়- গণমাধ্যমকর্মী বারী হত্যার কূল-কিনারা পাচ্ছেন না গোয়েন্দারা। এই মামলার তদন্তের বেশ কিছুদিন পরে ডিবি পুলিশ জানায়, বারী নিজেই নিজের গলাকেটে আত্মহত্যা করেছেন। যদিও এটাকে হত্যা হিসেবে দাবি করেন বারীর আত্মীয় স্বজন ও সহকর্মীরা।
১৯ আগস্ট রাজধানীর পশ্চিম রামপুরার বাসা থেকে সুমন শেখকে গ্রেপ্তার করে হাতিরঝিল থানা পুলিশ। গ্রেপ্তারের পর সুমন শেখ ওরফে রুম্মন শেখের মৃত্যু হয়। পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয় তাকে পুলিশ হত্যা করেছে। বিচার চেয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে বিভিন্নভাবে আন্দোলন করে ওই এলাকার সাধারণ মানুষ। পরিবার ও সাধারণ মানুষের অভিযোগ, তাকে হত্যা করা হয়েছে। তবে পুলিশ বলছে- আত্মহত্যা করেছেন সুমন। এই ঘটনাটি দেশ ব্যাপী আলোচিত হয়। পরে নানা প্রশ্নের মুখোমুখি হয় সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ।
অন্যদিকে রাজধানীর মিরপুর ১৪ নম্বরে ডেন্টাল কলেজের সামনে বাসের ধাক্কায় সাবিনা ইয়াসমিন (৩১) নামের এক নারীর মৃত্যু হয়। দুই সন্তানকে স্কুলে নেওয়ার পথে বাসচাপায় তিনি মারা যান। তবে এই ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর এ ঘটনাটি নাড়া দিয়েছিল সারাদেশের মানুষকে।
একই বছরের ৭ নভেম্বর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র ফারদিন নূর পরশের মরদেহ উদ্ধার করে নৌ পুলিশ। মরদেহ ময়নাতদন্তের পর চিকিৎসক দাবি করেন-তিনি হত্যার শিকার হয়েছেন। পরিবার ও তার সহপাঠীরা আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের ও বিচারের দাবি জানান। এই ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দুই ধরনের বক্তব্যে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভিন্ন আলোচনা সমালোচনার জন্ম হয়। এরপর গেল ১৪ ডিসেম্বর পুলিশ জানায়- ফারদিন নূর পরশ নিজেই আত্মহত্যা করেছে। র্যাব জানায় ফারদিন স্বেচ্ছায় মৃত্যুবরণ করেছে। এরপর পরিবারের পক্ষে থেকে ফারদিনের বাবা কাজী নূর উদ্দিন রানা বলেন, পুলিশ-র্যাবের তথ্য আমাদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য নয়।
এদিকে ১২ নভেম্বর শনিবার আওয়ামী লীগ নেতা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কৃষি খামারি দুরন্ত বিপ্লবকে মাথায় ও বুকে আঘাত করে হত্যা করা হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানান ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক মফিজুল উদ্দিন প্রধান। তার ধারণা সমান কোনো বস্তু দিয়ে মাথায় আঘাত করা হয়েছে। মাথার পেছনে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, দুরন্ত বিপ্লবকে হত্যা করা হয়েছে। পরে পলিট ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের কাছে মামলাটি হস্তান্তরের পর জানা যায়- দুরন্ত বিপ্লব বুড়িগঙ্গায় ডুবে মারা গেছেন। তাকে হত্যা করা হয়নি। একটি লঞ্চের ধাক্কায় নৌকাডুবে পানিতে তলিয়ে যান তিনি। পরে এই ঘটনায় মর্নিং সান-৫ লঞ্চের ৬ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করে আদালতে হস্তান্তর করে পুলিশ। এই ঘটনাটিও বেশ আলোচনা সমালোচনার জন্ম দিয়েছে জনমনে।
চলতি বছরের (২০ নভেম্বর) পুলিশের উপর হামলা ও পুলিশের চোখে স্প্রে করে প্রকাশক দীপন হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গি আসামিকে আদালত প্রাঙ্গণ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যায় তাদের অন্যান্য জঙ্গি বন্ধুরা। পরে এই ঘটনায় রাজধানীসহ সারাদেশে রেড অ্যালার্ট জারি হলেও এখনো মূল অপরাধীরা গ্রেপ্তার হয়। তবে এই ঘটনায় অপরাধীদের সহযোগিতা করার জন্য মেহেদী হাসান অমিকে (২৪) গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
এ ছাড়াও চলতি বছরের ২ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) এলাকায় ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক সহযোগী অধ্যাপকের গাড়ির নিচে চাপা পড়ে এক নারীকে এক কিলোমিটার টেনে নেওয়ার ঘটনা ঘটে। ওই নারীকে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
এসময় গাড়িচালক গণপিটুনির শিকার হন। আহত গাড়িচালক আজহার জাফর শাহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক সহকারী অধ্যাপক। নিহতের নাম রুবিনা আক্তার (৪৫) রাজধানীর হাজারীবাগের সেকশন এলাকার বাসিন্দা তিনি। তাকে মোটরসাইকেলের পেছনে করে তেজগাঁও থেকে বাড়ির দিকেই যাচ্ছিলেন তার দেবর নুরুল আমিন।
কেএম/এসএন