আমার বাংলাদেশ হাসপাতাল
দুই আইসিইউ’র অনুমতি নিয়ে চালানো হতো ৬টি
দুইটি নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) চালানোর অনুমতি নিয়ে ৬টি আইসিইউ পরিচালনা করতো আমার বাংলাদেশ হাসপাতাল। বিল পরিশোধ করতে না পারায় যমজ শিশুসহ স্বজনদের বের করে দেওয়ার অভিযোগে হাসপাতালের মালিককে গ্রেপ্তারের পর এসব তথ্য জানায় র্যাব।
শুক্রবার (৭ জানুয়ারি) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে আমার বাংলাদেশ হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু করেন গোলাম সরোয়ার। হাসপাতালটিতে ২টি আইসিইউর অনুমতি রয়েছে। কিন্তু সেখানে ৬টি আইসিইউ পাওয়া গেছে।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, হাসপাতালটির অনুমোদনে সার্বক্ষণিক ৩ জন চিকিৎসক এবং ৬ জন নার্স থাকার কথা। কিন্তু তারা ১ জন সাধারণ এমবিবিএস চিকিৎসক এবং ১ জন নার্স দিয়ে হাসপাতাল পরিচালনা করতো। যে চিকিৎসক দায়িত্ব পালন করতেন তিনি আইসিইউ পরিচালনা করার মতো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নন।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে মঈন জানান, ‘গোলাম সারোয়ার ১৯৮২ সালে প্রাণিবিদ্যা বিভাগ থেকে মাস্টার্স করেন। পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে তিনি ঢাকা ট্রমা, বাংলাদেশ ট্রমা, মমতাজ মেমোরিয়াল, আরাব ডায়গনাস্টিক, মোহাম্মাদীয়া ডায়াগনস্টিকসহ মোট ৬টি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার করেন। মূলত কোনো হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলেই তিনি সেটি বন্ধ করে নতুন আরেকটি হাসপাতাল চালু করতেন।’
তিনি আরও জানান, ‘বৃহস্পতিবার (৬ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় বিল পরিশোধ না করায় বের করে দেওয়া হয় যমজ শিশুসহ তাদের স্বজনকে। পরে রাত সাড়ে ৭টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে এলে আহমেদ (৬ মাস) নামে এক শিশুকে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। আরেক শিশু আব্দুল্লাহকে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।’
ভুক্তভোগী মা আয়েশা বেগম বলেন, ‘গত শনিবার (১ জানুয়ারি) বাচ্চা দুটি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের দুজনকে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ভর্তি করি। সেখানে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (এনআইসিইউ) না থাকায় রবিবার (২ জানুয়ারি) দালালরা কম টাকায় ভালো চিকিৎসার কথা বলে শ্যামলীর আমার বাংলাদেশ হাসপাতালে নিয়ে যায়। ওই হাসপাতালে তিন দিনে ১ লাখ ২৬ হাজার টাকা বিল আসে। আমি গরীব মানুষ, এত টাকা দিতে পারবো না জানালে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাকে মারধর করে। তাদের পায়ে ধরলে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে। ৪০ হাজার টাকা দেওয়ার পর অসুস্থ বাচ্চাসহ আমাকে হাসপাতাল থেকে বের করে দেয়। পরে ফার্মেসির ওষুধের টাকা নেওয়ার জন্য শাহিন নামের একজনকে আমার সঙ্গে ঢাকা মেডিকেলে পাঠায়। আসার পথে আমার ছেলে আহমেদ মারা যায়।’
আয়েশা বেগম আরও বলেন, ‘আমার স্বামী বিদেশে থেকে অনেক কষ্টে টাকা পাঠিয়েছেন। তারা ভুয়া বিল করে আমার কাছ থেকে টাকা দাবি করেন। আমার একটা ছেলেকে হারিয়েছি। আরেক সন্তান আব্দুল্লাহকে ঢামেক হাসপাতালে পুলিশ ভর্তি করিয়ে দিয়েছে। তার অবস্থাও ভালো নয়। আমার সঙ্গে কেউ নেই, আমি একা। আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই।’
এনএইচ/এএন