মাদক নিরাময় কেন্দ্রই যখন মাদকের আঁখড়া!
মাদকসেবীদের সুস্থ্য স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে কাজ করে থাকে মাদক নিরাময় কেন্দ্র। কিন্তু এক চিত্রনায়কের সন্ধানে গাজীপুরের একটি নিরাময় কেন্দ্রে অভিযান চালিয়ে র্যাব বলছে সেখানে নিয়মিত মাদক সেবন করা হতো। এমনকি ওই নিরাময় কেন্দ্র থেকে ইয়াবা উদ্ধারের কথাও জানানো হয়।
বুধবার (৫ জানুয়ারি) গাজীপুরে এই অভিযান চালানোর পর রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বছিলায় র্যাব-২ এর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
র্যাবের মুখপাত্র বলেন, ১ জানুয়ারি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সমিতির পক্ষ থেকে র্যাবের কাছে অভিযোগ করা হয়, অনিক আহমেদ অভি নামে এক চিত্রনায়ক দীর্ঘদিন ধরে কার্যক্রমে অনুপস্থিত। পরে জানা যায়, তাকে ভাওয়াল মাদকাসক্তি পুনর্বাসন কেন্দ্রে আটকে রেখে নির্যাতন করা হচ্ছে। ওই তথ্যের ভিত্তিতে পুনর্বাসন কেন্দ্রটিতে অভিযান চালিয়ে অনিক আহমেদ অভিসহ ২৮ জনকে উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তার করা হয় নিরাময় কেন্দ্রের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফিরোজা নাজনীন বাঁধন, মনোয়ার হোসেন সিপন, মো. রায়হান খান, দিপংকর শাহ দিপু ও জাকির হোসেনকে। অভিযানে ৪২০ পিছ ইয়াবা, নির্যাতনের কাজে ব্যবহৃত লাঠি, স্টিলের পাইপ, হাতকড়া, রশি, খেলনা পিস্তল জব্দ করা হয়। র্যাবের অভিযানের পর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা প্রতিষ্ঠানটি বন্ধও করে দিয়েছেন।
বাঁধনকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে র্যাবের এই মুখপাত্র বলেন, ২০০৯ সালে পুনর্বাসন কেন্দ্রটি অনুমোদন ছাড়াই প্রতিষ্ঠা করা হয়। ২০১৩-২০১৪ সালে সাময়িক অনুমোদন পায়। এখানে মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের আড়ালে মাদক ব্যবসা, রোগীদের নির্যাতন, প্রয়োজনের অতিরিক্ত সময় ভর্তি রেখে অর্থ আদায় ও অনৈতিক কার্যক্রম চলত। নিরাময় কেন্দ্রে দুজন চিকিৎসক থাকার কথা বললেও র্যাবের অভিযানের সময় কাউকে পাওয়া যায়নি। যে ২৮ জন রোগী পাওয়া যায়, তারা র্যাবকে জানান, বাঁধন প্রতি রোগীর কাছ থেকে মাসিক চার্জ হিসেবে ১০ থেকে ৩০ হাজার টাকা আদায় করতেন।
মঈন বলেন, করোনাভাইরাস মহামারীকালে চলচ্চিত্রের কার্যক্রম স্থবির থাকায় অর্থনৈতিক টানাপড়েনের কারণে চিত্রনায়ক অভি মানসিকভাবে কিছুটা বিষাদগ্রস্ত হয়ে পড়েন। পরে তার আচরণে কিছুটা অস্বাভাবিকতা দেখা গেলে গত মার্চে তার মা চিকিৎসার জন্য সেখানে নিয়ে যান। বাধঁনের কথামতো অনিককে তার মা সেখানে ভর্তি করান এবং চিকিৎসা জন্য ৩ লাখ টাকা পরিশোধ করেন। পরবর্তীতে প্রতি মাসে ৪০ হাজার টাকা করে দিতেন। বাঁধনের গ্রামের বাড়ি লালমনিরহাটে। একটি ভুঁইফোড় পত্রিকার সাংবাদিক পরিচয়ে তিনি প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করতেন বলে জানিয়েছে র্যাব।
এনএইচ/এএস