লাখ টাকার বান্ডিলের দাম ১৫ হাজার টাকা!
এক লাখ টাকার নোটের একটি বান্ডিলের দাম মাত্র ১৫ হাজার টাকা! বিষয়টি বিস্ময়কর শোনালেও এভাবেই টাকা বিক্রি করতেন জাল টাকা তৈরি চক্রের অন্যতম হোতা মো. ছগির হোসেন।
রাজধানীর পল্লবী থেকে ১ কোটি ২০ লাখ টাকার জাল নোটসহ মো. ছগির হোসেন ও তার দুই সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। তাদের কাছে থাকা জাল নোট তৈরির সরঞ্জামাদিও জব্দ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৪ জানুয়ারি) সকালে কারওয়ান বাজারের মিডিয়া সেন্টারে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় র্যাব।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, গত ২৮ নভেম্বর র্যাব-৪ এর একটি আভিযানিক দল মিরপুর মডেল থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ২৮ লাখ ৫৩ হাজার টাকা মূল্য মানের জাল নোটসহ নোট তৈরি ও বিক্রেতা চক্রের সক্রিয় চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এ চক্রের মূলহোতা ও অন্যান্য সহযোগীদের সম্পর্কে জানা যায়। এরপর গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায় র্যাব।
এরই ধারাবাহিকতায় গত সোমবার (৩ জানুয়ারি) রাতে রাজধানীর পল্লবীতে অভিযান চালিয়ে সংঘবদ্ধ জাল নোট তৈরি চক্রের মূল হোতা মো. ছগির হোসেন, সহযোগী মোছা. সেলিনা আক্তার পাখি ও মো. রুহুল আমিনকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় তাদের হেফাজত থেকে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা মূল্যমানের জাল নোট, পাঁচটি মোবাইল ফোন, দুটি ল্যাপটপ, একটি সিপিইউ, একটি মনিটর, তিনটি প্রিন্টার, একটি হ্যান্ড এয়ারড্রয়ারসহ জাল নোট তৈরির বিপুল পরিমান সরঞ্জামাদি জব্দ করা হয় বলে জানান র্যাবের এ কর্মকর্তা।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, তারা দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা ও বরিশালে জাল নোট তৈরি করে বিভিন্ন লোকদের কাছে স্বল্প মূল্যে বিক্রি করছে চক্রটির মূলহোতা ছগির হোসেন ও তার সহযোগীরা। তারা বরিশাল ও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় এ জাল নোটের ব্যবসা করে। এ চক্রের সঙ্গে ১৫-২০ জন সদস্য জড়িত রয়েছে।
র্যাব জানায়, ছগির হোসেন ১৯৮৭ সালে বরগুনা থেকে ঢাকায় এসে প্রথমে একটি হোটেল বয়ের কাজ নেন। পরে ভ্যানে ফেরি করে গার্মেন্টস পণ্য বিক্রি করতেন। গার্মেন্টস পণ্য বিক্রির সময় তার সঙ্গে ইদ্রিস নামে একজনের পরিচয় হয়। পরিচয়ের সুবাদে তাদের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। ইদ্রিসের মাধ্যমে তার জাল নোট তৈরির হাতেখড়ি হয়। প্রথমে তিনি জাল নোট বিক্রি ও নোট তৈরির বিষয় রপ্ত করেন। ২০১৭ সালে জাল নোটসহ ইদ্রিস ও ছগির আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়। ১ বছর জেল খেটে আবার ২০১৮ সালে জাল নোট তৈরি শুরু করেন তারা। তৈরি জাল নোটগুলো রুহুল আমিন, সেলিনা ও আরও ৭/৮ জনের মাধ্যমে বিক্রি করে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ১ লাখ জাল নোট ১০-১৫ হাজার টাকার বিনিময়ে বিক্রি করতেন ছগির।করোনাকালীন মাঝে মাঝে ছগির নিজেও এ জাল নোট স্থানীয় বাজারে ব্যবহার করতেন। কয়েকবার তিনি সাধারণ জনগণের হাতে ধরাও পড়েছিলেন। আসামিরা সাধারণত কোনো মেলায়, ঈদে পশুর হাটে ও অধিক জনসমাগম এলাকায় তারা জাল নোট বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে ব্যবহার করতেন। বর্তমানে বাণিজ্য মেলা ও শীতকালীন প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিভিন্ন উৎসব ও মেলাকে কেন্দ্র করে বিপুল পরিমাণ জাল টাকা তারা তৈরির পরিকল্পনা করে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে গ্রেপ্তার ছগির জাল নোট প্রিন্টিংয়ের সময় কাগজের অব্যবহৃত ও নষ্ট অংশগুলো পুড়িয়ে ফেলতেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যাতে তাকে ধরতে না পারে সেজন্য ছগির ঘন ঘন বাসা পরিবর্তন করতেন।
এনএইচ/এসএন