মানবপাচারকারী গ্রেপ্তারে গিয়ে র্যাব পেল ‘আধারকার্ড’
রাজধানী থেকে ৬ মানবপাচারকারী গ্রেপ্তারের পর তাদের হেফাজত থেকে আধারকার্ড ও প্যানকার্ড উদ্ধারের তথ্য জানিয়েছে র্যাব-৪। পার্শ্ববর্তী দেশে পাচারের ক্ষেত্রে দেশের আটটি জেলা থেকে নারীদের সংগ্রহ করা হয় বলেও তথ্য পেয়েছে সংস্থাটি।
বুধবার (২৯ ডিসেম্বর) রাজধানীর দারুস সালাম থেকে মানবপাচারকারী চক্রের ৩ নারীসহ ৬ সক্রিয় সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর বৃহস্পতিবার (৩০ ডিসেম্বর) এ তথ্য জানায় র্যাব-৪।
র্যাব জানায়, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে রাজধানীর দারুস সালাম থেকে মানবপাচারকারী চক্রের ৬ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হলেন-ঢাকার মো. সেকেন্দার হোসেন, যশোরের মো. আসাদুজ্জামান ওরফে আকাশ, যশোরের বুলবুলি বেগম এবং নেত্রকোনার রুবি আক্তার ও কলি আক্তার। এ সময় তাদের থেকে আধারকার্ড, প্যানকার্ড, মোবাইল এবং মানবপাচার সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র জব্দ করা হয়।
চক্রটি মূলত স্থল পথে সীমান্ত দিয়ে নারী পাচার করে থাকে। এক্ষেত্রে তারা পাচারের আগেই ওইসব নারীদের আধার কার্ড ও প্যান কার্ড সরবরাহ করে থাকে। তবে উদ্ধার হওয়া আধারকার্ড ও প্যানকার্ড আসল কি না তা জানাতে পারেনি সংস্থাটি।
আধার কার্ড ভারতের যেকোনো জায়গায় নিজের পরিচয় ও ঠিকানায় প্রমাণপত্র হিসাবে ব্যবহার হয়ে থাকে। আর পারমানেন্ট অ্যাকাউন্ট নম্বর (প্যান) কার্ড হল একটি ছবিসহ পরিচয়পত্র। যেকোনও আর্থিক লেনদেনকে সরকারি ভাবে নথিভুক্ত করতে প্যান কার্ড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে র্যাব জানায়, পার্শ্ববর্তী দেশে মানব পাচারকারী চক্রের মূলহোতা গ্রেপ্তারকৃত সেকেন্দার হোসেন ও তার সহযোগী আসাদুজ্জামান, নুর মোহাম্মদ এবং বুলবুলি বেগম। এই চক্রে তাদের সহযোগী হিসেবে দেশে আরো ৫-৭ জন সদস্য রয়েছে। তা ছাড়া পার্শ্ববর্তী দেশে তাদের বেশ কয়েকজন সহযোগী রয়েছে। ইতোমধ্যে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ভারতীয় নাগরিক লাইনম্যান দীপক ও খোকা ওরফে কংকাই এবং সহযোগী মারিয়া ও তামান্নাদের নাম পাওয়া যায়। তারা পার্শ্ববর্তী দেশে বিভিন্ন মার্কেট, সুপারশপ, বিউটি পার্লারসহ বিভিন্ন চাকুরীর প্রলোভন দেখিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশে পাচার করত। তাদের মূল টার্গেট ছিল দরিদ্র ও নিন্মমধ্যবিত্ত তরুণী। এই চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বিদেশে গমন প্রত্যাশী নিরীহ মানুষকে টার্গেট করে। এই চক্রটি ভুক্তভোগী নারীদের সীমান্তের অরক্ষিত অঞ্চল দিয়ে রাতের আধারে পার্শ্ববর্তী দেশে পাচার করে দেয়। মূলত যৌন বৃত্তিতে নিয়োজিত করার উদ্দেশ্যেই তাদের পাচার করা হত।
র্যাব-৪ জানায়, এই চক্রটি রাজাধানী ঢাকাসহ দেশের বেশ কয়েকটি এলাকায় সক্রিয় রয়েছে। তারা মূলত রংপুর, দিনাজপুর, ফেনী, কুমিল্লা, নবাবগঞ্জ, শরিয়তপুর, মাদারীপুর এবং ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে নারীদের সংগ্রহ করে পার্শ্ববর্তী দেশে উন্নত চাকরি দেওয়ার নামে অবৈধ পথে পাচার করে।
পার্শ্ববর্তী দেশের চক্রের সদস্যরা পাচার হয়ে যাওয়া নারীদের ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে দেন। পার্শ্ববর্তী দেশে মানব পাচারকারী চক্রের সদস্য দীপক খোকা ওরফে কংকাই মুম্বাইতে সেইফহোমে ভিকটিমদের আটক রাখার মূল দায়িত্ব পালন করে থাকে এবং এ কাজে সহযোগিতা করে মারিয়া ও তামান্না। এ চক্রটি এ পর্যন্ত শতাধিক ভিকটিমকে পার্শ্ববর্তী দেশে পাচার করেছে বলে জানা যায়।
পাচারের কৌশল জানাতে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে র্যাব জানায়, ভুক্তভোগীদেরকে অবৈধভাবে স্থলপথে সীমান্ত পারাপার করানো হত। তারা কয়েকটি ধাপে পাচরের কাজটি সম্পাদন করত। প্রথমত এ চক্রের মূলহোতা সেকেন্দার অল্প বয়সী তরুণীদেরকে পার্শ্ববর্তী দেশে ভাল বেতনের চাকুরীর প্রলোভন দেখাত। প্রলুব্ধ ভিকটিমদের পরবর্তীতে দেশীয় সীমান্তবর্তী এজেন্ট পলাতক আসামী সোহাগ ওরফে সাগরের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হত। পলাতক আসামী সোহাগ ভিকটিমদেরকে সীমান্তবর্তী সেইফ হাউজে অবস্থান করাত। সুবিধাজনক সময়ে লাইনম্যানের মাধ্যমে তাদেরকে বেনাপোল সীমান্ত এলাকা দিয়ে পার করে দিয়ে ভারতীয় দালাল দীপক ও খোকার কাছে বুঝিয়ে দিত। পাচারের ক্ষেত্রে অরক্ষিত অঞ্চল ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
এনএইচ/এমএমএ/