কক্সবাজারে ধর্ষণের শিকার নারী
প্রাণরক্ষার খাতিরে চিঠিতে যা লেখা ছিল তাই বলেছি
কক্সবাজারে নারী পর্যটক ধর্ষণের ঘটনায় দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন ভুক্তভোগী নারী৷ পুলিশ নয়, বিচার বিভাগীয় তদন্ত চান তিনি।
তিনি বলেছেন, ‘আমার সঙ্গে যে ঘটনা ঘটেছে তা যেন অন্য কারও সঙ্গে আর না ঘটে সেটাই চাই৷’ সোমবার (২৭ ডিসেম্বর) দুপুরে মুঠোফোনে এসব কথা বলেন কক্সবাজারে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার ওই নারী এবং মামলার বাদী তার স্বামী।
চার দিন কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশ তত্ত্বাবধানে থাকার দাবি করে তারা বলেন, ‘আমরা এখন ঢাকাতে আছি। রবিবার রাতে ট্যুরিস্ট পুলিশ আমাদের গ্রীন লাইনের বাসে তুলে দেয়।'
মামলার এজাহার ও আদালতের ভিকটিমের স্বীকারোক্তির গড়মিলের বিষয়ে জানতে চাইলে বাদী বলেন, ‘২৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় কক্সবাজার সদর থানায় একদল যুবক আমার হাতে একটি চিঠি ধরিয়ে দেয়। চিঠিতে যা লেখা আছে সে অনুযায়ী না চললে আমাদের জানে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়। জীবন বাঁচাতেই আমার স্ত্রী আদালতে মিথ্যা জবানবন্দি দিয়েছে।’
এ সময় তারা কক্সবাজারে তিনমাস থাকার বিষয়টি স্বীকার করলেও তার স্ত্রী কোনো অবৈধ কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না বলে দাবি করেন।
ধর্ষণের শিকার ওই নারী এ সময় বলেন, ‘২৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় কক্সবাজার থানার সামনে আমার স্বামীকে হাতে লেখা একটি চিঠি ধরিয়ে দেয় অপরিচিত একদল যুবক। চিঠিতে লেখা কথা অনুযায়ী কথা না বললে সবাইকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয় তারা। এরপর আমি স্বামী-সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে আদালতে মিথ্যা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিলাম।’
এ সময় তিনি আরও বলেন, ‘আমার স্বামীও আমার উপর চাপ দিয়েছিলেন চিঠিতে লেখা কথা অনুযায়ী কথা বলতে। নইলে আমাকে তালাক দেবেন।’
ধর্ষণের মূল হোতা আশিকের সঙ্গে তার পূর্ব পরিচয় ছিল না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রকৃত অর্থে আশিকের সঙ্গে আমার পূর্ব পরিচয় ছিল না। আশিকের নেতৃত্বে প্রথমে ঝুপড়ি চায়ের দোকানের পেছনে এবং পরবর্তীতে হোটেল জিয়া গেস্ট ইনে দলবদ্ধ ধর্ষণ করে কয়েকজন। এ সময় আশিকসহ অন্যরা আমাকে বর্বর নির্যাতন ও মারধর করে। পরনের কাপড়-চোপড় ছিঁড়ে ফেলে।’
মূল হোতা আশিকসহ সবার সুষ্ঠু বিচার দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমরা চাই আমাদের সঙ্গে যে ঘটনা ঘটেছে তা যেন অন্য কারও সঙ্গে আর না ঘটে। যেন সৈকতে ভ্রমণ করতে এসে অন্য কারও এই পরিণতি না হয়।’
ভুক্তভোগীর স্বামী মামলার বাদী বলেন, ‘২৩ ডিসেম্বর থেকে টানা চারদিন আমরা ট্যুরিস্ট পুলিশের তত্ত্বাবধানে। এ সময় কারও সঙ্গে আমাদের কথা বলতে দেওয়া হয়নি। খাবার-দাবার ঠিকভাবে দেওয়া হলেও এই চারদিন একবারও গোসল করা হয়নি। তাই আমরা চেয়েছিলাম, যেভাবে হোক কথাবার্তা বলে কক্সবাজার ত্যাগ করি। এখন ঢাকায় পৌঁছেছি, সবকিছু প্রকাশ করা হবে। প্রকৃত ঘটনা থানায় দায়ের করা মামলাতেই লিপিবদ্ধ আছে।’
৯৯৯-এ কল দেওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মামলার বাদী বলেন, ‘একবার নয়, তিন দফায় ৯৯৯ এ কল দিলেও সহযোগিতা পাইনি। পরে র্যাবকে কল দিই। র্যাব ঘটনাস্থলে পৌঁছে আমাদের উদ্ধার করে।’
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, ‘বেলা আড়াইটা পর্যন্ত র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার আশিককে ট্যুরিস্ট পুলিশের হাতে হস্তান্তর করা হয়নি। মামলার বাদী ও ভিকটিম রবিবার রাতের বাসে ঢাকায় ফিরে গেছেন।’
এ প্রসঙ্গে র্যাব-১৫ কক্সবাজার ক্যাম্প অধিনায়ক মেজর মেহেদী হাসান বলেন, ‘আশিককে ঢাকা থেকে কক্সবাজার আনা হচ্ছে। হাতে এলে মামলার তদন্তকারী ট্যুরিস্ট পুলিশের কর্মকর্তার কাছে হস্তান্তর করা হবে।’
ভিকটিম ও মামলার বাদীর বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, আমরা নিয়মতান্ত্রিকভাবে তদন্তের কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।
টিএ/এএন