বাতাসে ‘বিষ’ ছড়াচ্ছে ঢাকার গণপরিবহন!
আনফিট বা মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহনের কালো ধোঁয়ায় বিষাক্ত হয়ে উঠেছে ঢাকার বাতাস। সম্প্রতি বায়ু দূষণের বৈশ্বিক পরিমাপে ঢাকা টানা শীর্ষে অবস্থান করার পর আনফিট যানবাহনের কালো ধোঁয়া দূষণের বিষয়টি আবার সামনে এসেছে।
বিশ্বে বাতাসের দূষণ নিয়ে যেসব সংস্থা কাজ করে সেগুলোর মধ্যে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক সংস্থা এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) অন্যতম। এই একিউআইয়ের হিসেবে মাঝে মাঝেই টানা পাঁচদিন বা সাতদিন ধরে শীর্ষে থাকে বাংলাদেশ। শীর্ষে না থাকলেও ঢাকায় বাতাসের যে কোয়ালিটি তা কোনোভাবেই স্বাস্থ্যকর নয় বলেও সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই শহরের নিঃশ্বাসেই যেন বিষ মিশে আছে। এককভাবে মেয়াদোত্তীর্ণ বা আনফিট যানবাহন যে পরিমাণ কালো ধোঁয়া বাতাসে ছাড়ছে তাতেই বায়ুর অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়ছে। কিন্তু দেখার যেন কেউ নাই।
বিশেষজ্ঞরা এক্ষেত্রে আইনের কঠোর প্রয়োগ ও জনসচেতনতার কথা বলছেন। তবে আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রেও যেন রয়েছে শিথিলতা। এককভাবে ঢাকার এই বায়ুদূষণে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কেউ কেউ পরিবেশ অধিদপ্তরকে দায়ী করলেও এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তপক্ষের (বিআরটিএ) দায়ও রয়েছে অনেক। কারণ বিআরটিএ- এর কারণে আনফিট বা মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহন সড়কে চলতে পারছে।
জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তরের একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, গাড়ির কালো ধোঁয়ায় পরিবেশ দূষণ হয়। তবে আমরা নিয়মিতই কিন্তু এসব যানবাহনকে জরিমানা করি।
সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথার বলার ক্ষেত্রে তার কর্তৃপক্ষের অনুমতি না থাকায় নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই ম্যাজিস্ট্রেট আরও জানান, পরিবেশ অধিদপ্তর বিআরটিএকে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চিঠিও দিয়েছে। কিছুদিন আগে বিআরটিএ চেয়ারম্যানের সঙ্গে পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের মিটিংও হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চেয়ে বিআরটিএ চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদারকে ফোন দিয়েও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান মনে করেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের উপর দায় বর্তায় এটা যেমন সঠিক, তেমনি এই দায় বিআরটিএও এড়াতে পারে না। বরং বিআরটিএ-এর দায় আরও বেশি।
ঢাকা শহরে বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বাসগুলোর দেখতে যেমন ভঙ্গুর তেমনি ছাড়ছেও কালো ধোঁয়া। মনে হচ্ছে যেন একেকটি গাড়িতে ধোঁয়া নির্গমন পাইপ ইটভাটার পাইপের মতো।
সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, এর আগে বিভিন্ন সময় এসব আনফিট বাসের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছে বিআরটিএ। কিন্তু সমিতিগুলোর ‘চাপে’ সেসব অভিযান বন্ধও করতে হয়েছে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক স্থপতি ইকবাল হাবিব ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, বায়ুদূষণ এবং শব্দদূষণের মাধ্যমে একটা বিকলাঙ্গ প্রজন্ম তৈরি করা হচ্ছে। আমি মনে করি, চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তর, ট্রাফিক পুলিশ ও সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্টরা মিলে দূষণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে। ট্রাফিক পুলিশের উচিত, অন্তত নিজেদের সদস্যদের স্বার্থে শব্দদূষণ প্রতিরোধে পদক্ষেপ নেওয়া।
বায়ু দূষণ নিয়ে ২০১৯ সালের মার্চ মাসে পরিবেশ অধিদপ্তর ও বিশ্বব্যাংকের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করে, ঢাকার বায়ু দূষণের তিনটি প্রধান উৎস হলো ইটভাটা, যানবাহনের ধোঁয়া ও নির্মাণ সাইটের ধুলা। আর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মতে, বায়ু দূষণের কারণে বাংলাদেশে প্রতি বছর ৮০ হাজার মানুষ মারা যাচ্ছেন।
জানা যায়, ঢাকায় যারা বসবাস করেন তাদের অনেকেই হাঁপানী, স্ট্রোক ও শ্বাসকষ্টসহ নানারকম রোগে ভুগছেন। বায়ু দূষণের ফলে মানুষের আয়ুও কমে যাচ্ছে। প্রভাব পড়ছে জিডিপির উপর। বিশ্বব্যাংক বলছেন, বায়ু দূষণের ফলে বাংলাদেশের জিডিপি কমছে।
এনএইচবি/এমএমএ/