রাজউক ৪ বছরেও প্রকাশ করেনি অবৈধ ভবনের তালিকা
চার বছরেও আলোর মুখ দেখেনি রাজধানীর বহুল আলোচিত এক হাজার ৮১৮টি বহুতল ভবনের তালিকা। এ সব ভবনের তালিকা তৈরি করা গেলেও প্রভাবশালীদের চাপের মুখে সেই তালিকা আর প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি বলেই দাবি সংশ্লিষ্টদের।
অথচ ১৫ দিনের মধ্যে রাজধানীর ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা প্রকাশ করার কথা ছিল। কিন্তু গত ৪ বছর চলে গেলেও ১৫ দিন আর শেষ হয়নি!
রাজধানীর বনানীতে এফআর টাওয়ারে আগুন লাগার পর ২০১৯ সালের মার্চে এক হাজার ৮১৮টি বহুতল ভবনের তালিকা করেছিল রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। এ সব ভবন নির্মাণ করা হয় রাজউকের নকশা অমান্য করে।
তৎকলীন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম তখন বলেছিলেন, ১৫ দিনের মধ্যে তালিকা প্রকাশ করা হবে। কিন্ত তালিকা তৈরি করার পরও প্রভাবশালীদের চাপে সেই তালিকা আর প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। বরং মাত্র কয়েকমাসের মাথায় মন্ত্রীর দপ্তরই বদল হয়ে যায়।
২০২০ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারিতে শ ম রেজাউল করিমের জায়গায় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান শরীফ আহমেদ। এরপর কেটে গেছে আরও তিন বছর। কিন্তু অবৈধ বহুতল ভবনের তালিকা তিনিও প্রকাশ করতে পারেননি।
এ ব্যাপারে প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করে কথা বলা সম্ভব হয়নি। রাজউক চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান ভুইয়ার সঙ্গেও ফোনে যোগাযোগ করে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
রাজউকের সংশ্লিষ্টরা জানান, বনানীতে আগুন লাগার পর রাজউকের করা এই তালিকা প্রকাশ করার ব্যাপারে সরকারের সদিচ্ছা ছিল। কিন্তু ভবনগুলোর মালিক এমনসব ব্যক্তি, যারা সমাজের খুবই প্রভাবশালী। একারণেই মূলত তালিকাটা হিমঘরে চলে গেছে।
জানা গেছে, এফআর টাওয়ার অগ্নিকাণ্ডের পর সেই সময় রাজউকের ২৪টি টিম কাজ করে নকশা বহির্ভূত বহুতল ভবনের তালিকা প্রণয়ন করে। ওইসব টিমের সংশ্লিষ্ট কয়েকজন ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, এক হাজার ৮১৮টি ভবনের মধ্যে কোনো কোনোটা পুরোটাই অবৈধ, কোনোটার আংশিক অবৈধ আবার কোনাটার নিচের পার্কিংয়ের জায়গা দখল করে ভাড়া দেওয়া হয়েছে।
তালিকার ভবনগুলোর মধ্যে কমন যে সমস্যা সেটি হলো অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থার অপ্রতুলতা। বনানীর এফআর টাওয়ারেরও উপরের দুটি তলা অবৈধভাবে নির্মাণ করা হয়েছিল এবং ভবনে অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা ছিল না বললেই চলে।
সেই সময় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তালিকা প্রকাশের পর মালিকদের সময় বেঁধে দেওয়া হবে। এরপর যেসব ভবন নীতিমালায় না আসবে তাদের ভবন ভেঙে দেওয়া হবে।
এ প্রসঙ্গে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) সভাপতি আবু নাসের খান ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, এ ভবনগুলো যাদের তারা এতই প্রভাবশালী যে রাষ্ট্র ও সমাজ চালায় তারা। তারা মন্ত্রীকেও পরিবর্তন করে দিতে পারে। একারণেই এই তালিকা প্রকাশ করা যায়নি বলে মনে করি।
এক প্রশ্নের জবাবে আবু নাসের খান বলেন, হংকং, সিঙ্গাপুরসহ যেসব দেশে বেশি বহুতল ভবন আছে সেসব দেশে স্যুয়ারেজ লাইন, রাস্তা, ইউটিলিটিসহ সুবিধা নিশ্চিত করা হয়। আমাদের দেশে এ সব নিশ্চিত না করেই বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়। ভবিষ্যতে যাতে এ সব না হয় সেদিকেই দৃষ্টি দিতে হবে।
এনএইচবি/আরএ/