পুরান ঢাকায় দেয়ালজুড়ে বিশ্বকাপের উন্মাদনা
খেলা নিয়ে উচ্ছ্বাস উন্মাদনায় বাঙালি বরাবরই শীর্ষে। আর ফুটবল বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে বাঙালির এই উন্মাদনা ছড়িয়ে পড়েছে পুরান ঢাকার অলিগলিতে। সূত্রাপুরের হেমেন্দ্রদাস রোড থেকে পূর্ণচন্দ্র ব্যানার্জি লেন পর্যন্ত দেয়ালে দেয়ালে প্রিয় তারকা ও দেশের পতাকার চিত্র যেন জানান দিচ্ছে ফুটবল নিয়ে বাঙালির আবেগকে।
ফুটবল বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে পুরান ঢাকা সেজেছে নতুন সাজে। পুরান ঢাকার প্রায় সব অলিতে গলিতে, বাসার জানালা ও ছাদে বসেছে রঙের মেলা। প্রিয় দেশকে সমর্থন করতে সর্বত্রই দেখা মিলছে সেই দেশের পতাকা। ফুটবল বিশ্বকাপের এই রঙ পূর্ণতা পেল শিংটোলা তরুণ জাগরণ সংঘের ব্যতিক্রমী দেয়াল চিত্রকর্মের উদ্যোগে।
লিওনেল মেসি, নেইমার, ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, ডিয়েগো ম্যারাডোনা, পেলের চিত্রকর্ম কিংবা ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, পর্তুগাল, জার্মানির পতাকা কী নেই এই দেয়াল চিত্রে। সর্বত্রই যেন বিশ্বকাপের উন্মাদনা। আর এই দেয়াল চিত্র স্থানীয় বাসিন্দা ও দর্শনার্থীদের জন্য নিয়ে এসেছে বিশ্বকাপের এক নতুন আমেজ।
সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে এই সব কিংবদন্তি ও বিশ্বকাপ খেলা দেশের পতাকার মাঝে স্থান পেয়েছে বাংলাদেশের পতাকা ও বাংলাদেশের অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়ার চিত্রকর্ম। যা জানান দিচ্ছে বিশ্বকাপ না খেলেও বাংলাদেশ ও বাংলাদেশি খেলোয়াড়দের প্রতি তরুণ সমাজের আস্থা ও সম্মান।
জানা যায়, দেয়াল চিত্রের খরচ যোগাতে বাড়ি বাড়ি ও দোকানপাটগুলোতে গিয়ে অর্থ সংগ্রহ করেন শিংটোলা তরুণ জাগরণ সংঘের সদস্যরা। সেই অর্থ দিয়ে প্রয়োজনীয় রঙ সামগ্রী কিনে নিজেরাই বিভিন্ন খেলোয়াড় ও দেশের পতাকা অঙ্কন করেন।
শিংটোলা তরুণ জাগরণ সংঘের প্রতিষ্ঠাতা প্লাবন খান বলেন, ‘ফুটবল বিশ্বকাপ ৪ বছর পর এসেছে। সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়ছে উন্মাদনা। আমরা একেকজন একেকটি দল সাপোর্ট করি কিন্তু এই উদ্যোগে সবাই এক হয়েই কাজ করেছি। তাই তো বিশ্বকাপ ফুটবলকে আমরা দেয়ালচিত্রে ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছি।’
সূত্রাপুরের হেমেন্দ্রদাস রোড থেকে পূর্ণচন্দ্র ব্যানার্জি লেনের এই দেয়াল চিত্র দেখতে প্রতিদিন শত শত দর্শনার্থী ভিড় করছেন। কেউ নিজ সমর্থিত দলের পতাকার সঙ্গে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন, কেউবা প্রিয় খেলোয়াড়ের সঙ্গে বিভিন্ন ভঙ্গিমায় ছবি তুলছেন।
দর্শনার্থী আশিক ইকবাল বলেন, আমি কিছু বছর ধরে ঢাকায় থাকি, বিশ্বকাপ ফুটবলে ঢাকায় থাকা এই প্রথম। কিন্তু এই ধরনের চিত্রকর্ম টিভিতে প্রায়ই দেখা যায়। আজকে নিজে সামনাসামনি দেখে ও ছবি তুলতে পেরে বেশ আনন্দিত লাগছে।
স্থানীয় বাসিন্দা বিকাশ নন্দী বলেন, পুরান ঢাকা মানেই ভিন্ন কিছু, বিশ্বকাপ ফুটবল কেন বাদ যাবে। আগে ফুটবল খেলা শুরু হলেই আমাদের পাগলামি বেড়ে যেত। প্রতিবারই ভিন্ন কিছু করার চেষ্টা করতাম, এখন বয়সের ভাড়ে সেই পাগলামিটা করতে পারি না, তবে আমাদের স্থানীয় ছেলেরা সেই পাগলামিটা বাঁচিয়ে রেখেছে, এটাই পুরান ঢাকার ঐতিহ্য।
উল্লেখ্য, দেয়ালচিত্রে স্থান পাওয়া মেসি ও নেইমারের পাশাপাশি ও ঘাড়ে হাত দেওয়া ছবি যেন জানান দিচ্ছে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ভুলে ফুটবল বিশ্বকাপ বয়ে আনে সম্প্রীতি এবং গড়ে তোলে ভাতৃত্ববোধ।
এসজি