রাতের আঁধারে চলছে ভিক্টোরিয়া পার্কে খাবার দোকান নির্মাণ
ব্যস্ততার শহর ঢাকায় পার্কগুলো জনমানুষের স্বস্তির স্থান হিসেবেই পরিচিত। তবে পুরান ঢাকার এই স্বস্তির স্থানটি হচ্ছে বাহাদুরশাহ পার্ক। এই পার্কেই নির্মিত হচ্ছে সিটি করপোরেশন অনুমোদিত খাবারের দোকান। স্থানীয় জনগণের ব্যাপক বিরোধিতা থাকা সত্ত্বেও ঠেকানো যাচ্ছেনা নির্মাণ কাজ।
পার্কে খাবারের দোকান গুলোর নির্মাণ কাজ বন্ধ করার জন্যে সাধারণ জনগণের বিক্ষোভ, গণস্বাক্ষরসহ বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি উপেক্ষা করেই রাতের অন্ধকারে পার্কের মাঝে খাবার দোকান নির্মাণ কাজ চলছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ইজারা নেওয়া প্রতিষ্ঠান রাতেই আধারে কাজ করছে খাবার দোকান নির্মাণের। কাজ প্রায় শেষের দিকে, চলছে ঝালাই এর কাজ। যেখানে কাজ করা হচ্ছে সেখানে ছোট ব্যানার টাঙানো দেখা গেছে। যাতে লেখা আছে-ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কর্তৃক অনুমোদিত ও ইজারাকৃত ফুডভ্যান নির্মাণের কাজ চলছে।
পার্কের চারপাশে, ফুটপাতে অগণিত খাবার দোকান স্বত্বেও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) পার্কের ঠিক মাঝখানে দোকান বসানোর জন্য এক ব্যক্তিকে ইজারা দেবার পর থেকেই জনগণের মধ্যে ব্যাপক বিরোধিতা লক্ষ্য করা যায়। ইতোপূর্বে তারা পার্কের মাঝে খাবার দোকানের নির্মাণ ঠেকাতে বিক্ষোভ, গণস্বাক্ষরসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করলেও তা সফল না হওয়ায়, নির্মাণ কাজ চলা কালে বিক্ষুব্ধ জনগণ অর্ধ-নির্মিত কাঠামোগুলো ভেঙে ফেলে।
তাই দিনের আলোয় জনগণের আনাগোনা বেশি থাকায়, রাতের অন্ধকারেই চলছে দোকান নির্মাণ কাজ। কারণ, মানুষ কম থাকায় তাদেরকে প্রতিরোধের মুখে পড়তে হয় না এবং জনগণকে জবাবদিহি ও করতে হয় না।
জনগণের দাবি, পার্কের চারপাশে এত দোকান থাকতে উদ্দেশ্যেপ্রণোদিতভাবে পার্কের সৌন্দর্য্য নষ্ট করার উদ্দেশ্যেই চলছে এই নির্মাণ কাজ। এভাবে পার্ক দখল হয়ে গেলে তাদের আর কোথাও যাওয়ার জায়গা থাকবে না। তাই, অনতিবিলম্বে এই নির্মাণ কাজ বন্ধ করে পার্কের সৌন্দর্য্য বর্ধনের প্রকল্প হাতে নেওয়া উচিত।
এদিকে, এমন ঐতিহাসিক স্থাপনার মধ্যে স্থায়ীভাবে খাবারের দোকান নির্মাণ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে সমালোচনা করছেন।
এ ছাড়া, বাহাদুর শাহ পার্ক পুরান ঢাকার খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থানে অবস্থিত। এটি ঢাকার সদরঘাট এলাকায় ঢুকেই লক্ষ্মীবাজারের ঠিক মাথায় অবস্থিত। এর চারপাশ ঘিরে রয়েছে সাতটি রাস্তার সমাহার। চারপাশে রয়েছে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, সেন্ট থমাস চার্চ ও ঢাকায় প্রথম পানি সরবরাহ করার জন্য তৈরি ট্যাংক।
এ পার্কের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে রয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, উত্তর পশ্চিম দিকে রয়েছে ঢাকার জজকোর্ট। আরও অনেক জনগুরুত্বপূর্ণ সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যমনি হয়ে অবস্থান করছে কালের সাক্ষী এই বাহাদুর শাহ পার্ক বা আন্টাঘর ময়দান। বর্তমানের এই বাহাদুর শাহ পার্ক বাংলার সংগ্রামী ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী।
ফলে এখানে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের আনাগোনা হয়। এতে এমনিতেই পরিবেশ ভালো নেই। তারমধ্যে পার্কটির ঠিক মাঝখানে একটি রান্নাঘরসহ খাবারের দোকান হলে পরিবেশ আরও নষ্ট হয়ে পড়বে এমন আশঙ্কা করে স্থানীয়রা বিরোধিতা করছেন বলে দাবি করেছেন।
সর্বমোট ৮৫ কাঠারও বেশি আয়তনের পার্কটিতে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগলেও দিনে দিনে অনিরাপদ হয়ে উঠছে দর্শনার্থীদের জন্য। আগে লোহার গ্রিল দিয়ে পুরো পার্ক আটকানো থাকলেও এখন পুরোটা খোলা। এই সুযোগে পার্কে আসা মানুষদের প্রায়ই পড়তে হয় ছিনতাইকারীদের কবলে। শুধু তাই নয়, সংস্কারকাজ শেষ হওয়ার পর থেকেই এই পার্কে বেড়েছে নানা ধরনের অপরাধ। অনেকটা অপরাধীদের অভয়াশ্রমে পরিণত হয়েছে এই পার্কটি। স্মৃতিসৌধের উপরে চলে মাদকের আড্ডা ৷ মাদকাসক্ত অনেক পথশিশু ও কিশোরদের আবাস্থলে পরিণত হয়েছে এই পার্কটি। মাদক ব্যবসার মূল কেন্দ্র হিসেবেও ব্যবহার করছে কয়েকটি সিন্ডিকেট।
বর্তমানে আশপাশে ভ্রাম্যমাণ হকাররা খাবারের পসরা সাজিয়ে বসায় এমনিতেই পার্কের চারপাশের সৌন্দর্য নষ্ট হওয়ার পথে।
ঐতিহ্যবাহী পার্কটি ২০২০ সালে সাজানো হয় নতুন আঙ্গিকে। বিপুল অঙ্কের টাকা খরচ করে সংস্কারের মাধ্যমে এর আধুনিকায়ন করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। এখন সেখানে বসানো হচ্ছে স্থায়ী খাবার দোকান।
পার্কে খাবার দোকান নির্মাণের প্রতিবাদ জানিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা সুমন নন্দী বলেন, এমনেই পার্ক ছোট, হাঁটা চলার জায়গা কম। তার মধ্যে যদি দোকান দেয়, হাঁটা চলা তো বাদ দিলাম, বসার জায়গা ও থাকবে না। পার্কের ভেতরে দোকান দেওয়ার দরকারটা কী? প্রয়োজনে বাইরে দোকান দিলেও তো হয়।
এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আসিফ বলেন, আমাদের ক্যাম্পাস ছোট হওয়ায় আমরা বন্ধু বান্ধব মিলে মাঝে মধ্যেই পার্কেই আড্ডা দেই। কিন্তু এভাবে ঐতিহাসিক একটা পার্কের ভেতরে দোকান দিলে পার্কের সৌন্দর্য্য যেমন নষ্ট হবে, আড্ডা দেওয়ার মতো জায়গা বা পরিবেশ কোনটাই থাকবে না। সকালে এত মানুষ ব্যায়াম করতে আসে, তারাও তো ব্যায়াম করতে পারবে না। চারপাশে এত দোকান থাকতে নতুন দোকান না দেওয়াই ভালো।
কর্মরত শ্রমিক ও দোকানের দায়িত্বরতদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে বিষয়টি এড়িয়ে ঢাকাপ্রকাশ প্রতিবেদককে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সঙ্গে কথা বলতে বলেন।
এ বিষয়ে জানতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিনকে একাধিক বার ফোন দেওয়া হলেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এমএমএ/