কে হচ্ছেন ডিএমপি কমিশনার
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলামের চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে চলতি বছরের ৩০ অক্টোবর। ওইদিন তিনি অবসরে যাবেন। তার চাকরির বয়স শেষ হওয়ার পর গেল বছরের ২৮ অক্টোবর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে বলা হয়, সরকারিভাবে অতিরিক্ত আইজিপি মোহা. শফিকুল ইসলামকে ডিএমপি কমিশনার হিসেবে আরও এক বছর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হলো।
এরপর থেকে তিনি দায়িত্ব পালন করে আসছেন। শফিকুল ইসলামের চুক্তির মেয়াদ প্রায় শেষের পথে। ঢাকা মহানগর পুলিশের গুরুত্বপর্ণ এই পদে কে আসছেন এ নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে মহানগর পুলিশের মধ্যে।
ইতোমধ্যেই ডিএমপি কমিশনারের এই পদের উত্তরসূরি কে হচ্ছেন, তা নিয়ে শুরু হয়েছে গুঞ্জন, চলছে রাজনৈতিক আলোচনাও। এই পদের উত্তরসূরি হওয়ার জন্য নিজেদের দায়িত্ব বাড়িয়ে আরও সোচ্চারভাবে কাজ করছেন বেশ কিছু পুলিশ কর্মকর্তা।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, কমিশনারের এ পদের জন্য বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার যোগ্যতা যাচাই-বাছাই শেষ করেছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। তবে যাকেই ঢাকা মহানগর পুলিশের পরবর্তী কমিশনার করা হোক না কেন, সবার আগে বিবেচনায় নেওয়া হবে তার সততা, যোগ্যতা, জবাবদিহিতার বিষয়টি।
পুলিশের বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ডিএমপির পরবর্তী কমিশনার হতে পুলিশের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা আলোচনায় ছিলেন-সরকারের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তাকে বিভিন্ন দপ্তরের প্রধান করে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। শুধু মাত্র ডিএমপি কমিশানার পদটি খালি রয়েছে যার দায়িত্ব দেওয়া হবে আগামি মাসের ২৮ অক্টোবর বা ২৯ অক্টোবর। এবং ৩০ অক্টোবর এপদের যোগ্য ব্যক্তিকে দায়িত্ব দিয়ে নিয়োগ দিবেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
সরকারের বিভিন্ন দপ্তর ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অনেকেই বলছেন, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার পদে আলোচনার শীর্ষে রয়েছে-গোপালগঞ্জ জেলার দুই কৃতি সন্তান। তারা হলেন-পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) প্রধান মনিরুল ইসলাম ও অতিরিক্ত আইজি হাবিবুর রহমান।
জানা যায়, পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) প্রধান মনিরুল ইসলাম ১৫তম বিসিএস কর্মকর্তা এবং হাবিবুর রহমান ১৭তম বিসিএস কর্মকর্তা। পুলিশ কমিশনার হওয়ার জন্য দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে আছেন এই দুই কর্মকর্তা।
আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ও জঙ্গি দমনে মনিরুল ইসলাম অসাধারণ নৈপুণ্য দেখিয়েছেন। হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার পর জঙ্গিবাদ নিয়ে রীতিমতো গবেষণা করেন তিনি। জঙ্গি নিয়ন্ত্রণ ও আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারে তার অর্জন উল্লেখযোগ্য। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে তার বিশেষ গ্রহণযোগ্যতাও রয়েছে।
তিনি বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার ও কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) এর প্রধান ছিলেন। ঢাকা মহানগর পুলিশের সিটিটিসি ইউনিট গঠনেও মূল ভূমিকা পালন করেছিলেন।
এদিকে কাজের পাশাপাশি সামাজিক ও অপারেশনাল কাজের মাধ্যমে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন-ঢাকা অতিরিক্ত আইজি হাবিবুর রহমান। ডিএমপি কমিশনার পদে পুলিশের ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে তার নামও আলোচনায় রয়েছে। ইতোপূর্বে তিনি পুলিশ সদর দপ্তরে উপ মহাপরিদর্শক (প্রশাসন-ডিসিপ্লিন) হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন।
হাবিবুর রহমান সততা, সাহস, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার জন্য তিনবার বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম) এবং দু’বার রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদকে (পিপিএম) ভূষিত হয়েছেন।
পেশাগত ও মানবিক কাজের বাইরে সফল ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এবং এশিয়ান কাবাডি ফেডারেশনের সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন পুলিশের এই কর্মকর্তা। পুলিশের সেবার পাশাপাশি মানুষের সেবা করার জন্য গড়েছেন ‘উত্তরণ ফাউন্ডেশন’ নামে একটি সেবামুখী প্রতিষ্ঠান। এ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, ডিএমপি কমিশনার পদের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা তালিকায় রয়েছেন। ইতোমধ্যে এ পদের জন্য বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার যোগ্যতা যাচাই-বাছাই করছে মন্ত্রণালয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র থেকে জানা যায়, ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির পক্ষ থেকে যে ৭০ জন পুলিশ কর্মকর্তার প্রত্যাহার চেয়ে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল, ওই তালিকায় মনিরুল ইসলামের নামও রয়েছে।
তবে এ বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য দিলেও আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো পুলিশ কর্মকর্তা কথা বলতে রাজি হননি।
জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তর ও ঢাকা মহানগর পুলিশের জনসংযোগ বিভাগের নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, অতিরিক্ত আইজিপির সমমর্যাদা হলো ডিএমপি কমিশনারের পদটি। এটি দেশের পরিপ্রেক্ষিতে গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল পদ। দক্ষ ও যোগ্যরাই এই পদের দায়িত্ব পাবেন। তবে এ পদে নিয়োগ দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট মহল ও মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ভূমিকা থাকে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘সরকার আমাকে কী দেখে বা ভেবে ডিএমপি কমিশনার পদে নিয়োগ দিয়েছেন সেটা আমি বলতে পারব না। কমিশনার নিয়োগের বিষয়টি হলো সরকারি সিদ্ধান্ত। এই বিষয়ে আপাতত আর তেমন কিছু বলতে পারছি না।’
কেএম/এমএমএ/