ড্যাপে নগর সরকারের কথা নিয়ে এসেছে রাজউক, তবে…
ঢাকা শহরের সমন্বিত উন্নয়নের জন্য ‘নগর সরকার’ প্রতিষ্ঠার কথা বিভিন্ন সময়ে উঠে আসছিল সিটি করপোরেশন মেয়রদের পক্ষ থেকে। ১৯৯৬ সালে ঢাকার নির্বাচিত মেয়র মোহাম্মদ হানিফ, চট্টগ্রামের মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী নগর সরকারের দাবি উত্থাপন করেন তৎকালীন সরকারপ্রধানের কাছে।
ঢাকা নগরীকে একটা শৃঙ্খলায় নিয়ে আসতে নগর সরকারের কোনো বিকল্প নেই- এমনটা বলছেন নগর সরকার নিয়ে কাজ করেন এমন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু কোনো কিছুতেই নগর সরকার প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে কোনোরকম তৎপরতা চোখে পড়েনি।
তবে এবার নগর সরকারের বিষয়টি খোদ রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) পক্ষ থেকেও তুলে আনা হয়েছে। বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায় (ড্যাপ) নগর সরকার প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করেছে রাজউক। তবে রাজউক তাদের সুপারিশে একটা কিন্তু জুড়ে দিয়ে বলেছে, সমন্বয়ক হিসেবে মূল ভূমিকায় থাকবে রাজউক।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) এক প্রকাশনার তথ্য অনুযায়ী ঢাকা নগরীর সেবার সঙ্গে যুক্ত এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৫২টি। এগুলোর মধ্যে সিটি করপোরেশন, রাজউক, ঢাকা ওয়াসা, ডেসা, ডেসকো, তিতাস, বিটিসিএলের মতো প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব প্রতিষ্ঠানকে এক ছাতার নিচে এনে মেয়রের নেতৃত্বে একটি নগর সরকার প্রতিষ্ঠা করলে রাজধানীর সমন্বিত উন্নয়ন সম্ভব হতো। এই ব্যবস্থা লন্ডন, নিউইয়র্কের মতো বড় বড় শহরে রয়েছে। এসব শহরে মেয়রদের ব্যাপক ক্ষমতা রয়েছে। নগরীর অন্যান্য সেবা সংস্থাও মেয়রের অধীনে থেকেই কাজ করে।
সম্প্রতি ড্যাপেও নগর সরকার প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করে বলা হয়েছে, ড্যাপকে কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করতে হলে নগর সরকার প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে। যদিও ড্যাপের সুপারিশে সমন্বয়ের ভূমিকা রাজউক পালন করবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ড্যাপের প্রকল্প পরিচালক আশরাফুল ইসলাম বলছেন, রাজউক এককভাবে ড্যাপ বাস্তবায়ন করতে পারবে না। সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদগুলো এবং এর সঙ্গে সম্পৃক্ত অন্যান্য সংস্থার কার্যকর সমন্বয় হলেই কেবল ড্যাপ কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব। আর সমন্বয়ক হিসেবে রাজউককেই মূল ভূমিকা পালন করতে হবে।
সিটি গভর্নমেন্ট বা নগর সরকারের সংজ্ঞা প্রসঙ্গে দ্যা ফ্রি ডিকশনারিতে বলা হয়েছে, কোনো একটি শহরের স্থানীয় বিষয় নিয়ে যে প্রশাসন কাজ করে তাকে নগর সরকার বলে। এই প্রশাসন স্থানীয় অধিবাসীরা ভোট দিয়ে নির্বাচিত করে। এটাকে মিউনিসিপাল গভর্নমেন্টও বলা হয়।
নগর সরকারের কাজ হলো স্থানীয় প্রবিধানগুলো প্রস্তুত করে সিদ্ধান্ত ও প্রবিধানগুলোকে বাস্তবায়ন ও প্রয়োগ করা৷
নগর সরকার প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. তোফায়েল আহমেদ ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, যারা নগর সরকারের কথা বলছেন তারাই স্পষ্ট করতে পারছেন না আসলে নগর সরকার বলতে তারা কি বোঝাচ্ছেন। প্রথমত নগর সরকার প্রতিষ্ঠা করার সুপারিশ যারা করছেন তাদের এই সরকার সম্পর্কে ধারণা দিতে হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, ঢাকাকে সেবাদানকারী এতগুলো প্রতিষ্ঠানকে এক ছাতার নিচে আনার কথা যারা বলছেন তারা ঠিক বলছেন না। এটা ঢাকা শহরের ক্ষেত্রে সম্ভব নয়। কেউ কারও অধীনে যেতে চাইবে না।
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের খান ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, এমন সরকার লন্ডন বা নিউইয়র্কের মতো শহরে আছে। তবে এসব শহর তো শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে রূপান্তর হয়েছে। ঢাকা শহরে হলেও ভালো হয়। তবে এখানে নানা কারণে এটি খুব কঠিন হবে। তবে করতে পারলে ভালো হতো।
এক প্রশ্নের জবাবে আবু নাসের খান বলেন, নগর সরকার প্রতিষ্ঠার চেয়েও জরুরি উন্নয়ন পরিকল্পনা অংশগ্রহণমূলক করা। উন্নয়ন পরিকল্পনায় ধনীদের প্লট-ফ্ল্যাট দেওয়া হচ্ছে। ধনীদের জন্য রাস্তা-ফ্লাইওভার তৈরি করা হচ্ছে। অথচ দরিদ্রদের জন্য কোনো ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে না। রাজউকের উত্তরা, পূর্বাচলসহ বিভিন্ন প্রকল্পে মন্ত্রী, এমপি, নেতাসহ ধনী পেশাজীবীদের প্লট দেওয়া হয়েছে।
পবা চেয়ারম্যান আরও বলেন, অথচ এই শহরে দরিদ্র মানুষের সংখ্যায় বেশি। তাদের জন্যও ছোট ছোট বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে পারত সরকার। তাহলেই উন্নয়নটা টেকসই হতো। এই বিষয়টি নীতিনির্ধারকরা মাথায় না নিলে ঢাকা শহরের বিপদ আরও বাড়বে।
এনএইচবি/এসজি