চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি, মণ্ডপে মণ্ডপে যাচ্ছে প্রতিমা
মহালয়ার মধ্য দিয়ে পিতৃপক্ষের অবসানের পর শুরু হয় দেবীপক্ষের পাঁচ দিনব্যাপী সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। এরই মধ্যে রঙ তুলির কাজ শেষ করেছেন প্রায় সকল প্রতিমা শিল্পী। প্রতিমাগুলো এখন মন্ডপে নিয়ে যাচ্ছে অনেকেই।
প্রায় চার শ বছরের অধিক সময় নানান সংস্কৃতি ও স্থাপনার জন্য বিখ্যাত রাজধানী ঢাকা। এ শহরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জায়গা পুরান ঢাকা। প্রতি উৎসবেই যেন নিজেকে জানান দেয় নতুন রূপে। মাটির প্রলেপে শিল্পীর তুলির ছোঁয়াতে পূর্ণতা পেয়েছে দেবী দুর্গা প্রতিমা। ঢাকার নানান রাস্তায় আলোক্সজ্জা করছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। লাল-নীল বাতি ও বাহারী কাপড়ের গেট জানান দিচ্ছে পূজার আগমন।
করোনা নিষেধাজ্ঞা না থাকায় এবারের আমেজ যেন বাধাহীন। ঢাকার বিভিন্ন স্থানের পূজা উদযাপন কমিটিসহ অন্যান্য সংগঠনের নেই দম ফেলার অবকাশ। সারারাত জেগে কাজ করে প্রতিমা শিল্পীরা নিজেদের সর্বোচ্চ কারিগরি দক্ষতা দিয়ে ফুটিয়ে তুলছেন বাহারি কারুকাজ।
পুরান ঢাকার সূত্রাপুর, কাঠেরপুল, একরামপুর, শাঁখারীবাজার, তাঁতীবাজার, লক্ষ্মীবাজার, শ্যামবাজার, পাটুয়াটুলি, প্যারীদাস রোড, কলতাবাজার, মুরগিটোলা, মদনমোহন দাস লেন, গোয়ারনগর, বাংলাবাজার জমিদারবাড়ি, গেন্ডারিয়া, ডালপট্টি, কুলুটোলাসহ বিভিন্ন এলাকায় শেষ হয়েছে প্রতিমা নির্মাণের কাজ৷ মণ্ডপে মণ্ডপে যাচ্ছে এসব প্রতিমা।
এবার ঢাকায় ২৪১টি মন্দিরে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে মহানগর দক্ষিণে ১৫৪টি ও উত্তরে ৮৭টি। সবচেয়ে বেশি পূজা অনুষ্ঠিত হবে পুরান ঢাকার সূত্রাপুর থানায়। এখানে মোট পূজার সংখ্যা ২৫টি।
এ বছর পুরান ঢাকায় নবকল্লোল পূজা কমিটি, শ্রীশ্রী শিব মন্দির, প্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাব, সংঘমিত্র পূজা কমিটি, শ্রীশ্রী রাধা মাধব জিউ দেব মন্দির, নতুন কুঁড়ি পূজা কমিটি, নববাণী পূজা কমিটি, রমাকান্ত নন্দীলেন পূজা কমিটিসহ আরও বেশ কিছু ক্লাব পূজা আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছে। তবে শিবমন্দির, তাঁতী বাজার, সঙ্গ মিত্র, প্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাব, গোয়ালনগর ঘাট, জুলন বাড়ীতে বড় পূজার আয়োজন করা হচ্ছে।
দুর্গোৎসব দুর্গাপূজার প্রধান উপকরণ হচ্ছে মা দুর্গার প্রতিমা। এ ছাড়াও লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, অসুরসহ বিভিন্ন দেব-দেবীর মূর্তি। দেবী দুর্গা ও তার বাহন সিংহের প্রতিমাসহ তৈরি করা হয়েছে যাকে বধের জন্য দেবীর আগমন সেই মহিষাসুরের প্রতিমা। একই সঙ্গে তৈরি হয়েছে দেবী লক্ষ্মী, সরস্বতী, দেবতা কার্তিক, গণেশ, এবং তাদের বাহন পেঁচা, রাজহাঁস, ইঁদুর আর ময়ূর।
প্রতিমা শিল্পী হরিদাস বলেন, ‘গত দেড় মাস ধরে প্রতিমা তৈরি করেছি। গতকাল কাজ শেষ। অন্য বছরের চেয়ে এবার দুর্গার আশীর্বাদে ভালোই অর্ডার পেয়েছি। বছরে এমনিতে ১৫-২০টি মূর্তি বানাই। এ বছর ৩৬টি বানিয়েছি। আগে একাই সব করতাম। এবার সঙ্গে দু’জন সহকারীও নিয়েছি। তাই কাজ তাড়াতাড়ি শেষ হয়েছে।’
দীর্ঘ ত্রিশ বছর ধরে প্রতিমা তৈরি করে আসছেন আরেক শিল্পী ধীরেন্দ্র নাথ। তিনি বলেন, এতদিনের ভীষণ কাজের চাপ আজকে কিছুটা হালকা মনে হচ্ছে। প্রতিমা তৈরি শেষ করে রঙ দিয়ে আজকেই ডেলিভারি দেওয়া শুরু করব। এ বছর মোটামুটি ভালো কাজ পেয়েছি। গত বছর করোনায় তেমন সুবিধা করতে পারিনি।’
প্রসঙ্গত, ইউনেস্কোর তালিকায় স্থান পেয়েছে বাঙালির প্রধান উৎসব দুর্গাপূজা। ইউনেস্কোর ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেজ অব হিউম্যানিটি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে দুর্গাপূজাকে। ফ্রান্স, বেলজিয়াম, সুইজারল্যান্ড, ব্রাজিল, বলিভিয়ার মতো বিশ্বের মাত্র ৬ দেশের উৎসব এখনো পর্যন্ত ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পেয়েছে। এবার সেই তালিকায় যোগ হয়েছে দুর্গাপূজা।
এমএমএ/