ফ্লাইওভারের নিচ দিয়ে যাওয়ায় যাত্রী কম ‘ঢাকা নগর পরিবহনে’
গুলিস্তানের মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের নিচ দিয়ে চলাচল করায় যাত্রী কম পাচ্ছে সরকারের ফ্রাঞ্চাইজি বাস সার্ভিস ‘ঢাকা নগর পরিবহন’। যাত্রী এবং কর্মীরা বলছেন, ফ্লাইওভারের উপর দিয়ে চলাচলের ব্যবস্থা করলে যাত্রী বাড়ত।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যাত্রীরা যানজট এড়াতে এই রুটে বিভিন্ন প্রাইভেট কোম্পানির বাসে যাতয়াত করছে। ফলে এখন যে যাত্রী পাওয়া যায় তার চেয়ে অনেক বেশি যাত্রী পাওয়া যেত যদি রুট একটু সংশোধন করে ফ্লাইওভারের উপর দিয়ে চলাচলের ব্যবস্থা করা হতো।
আজ মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ঢাকা নগর পরিবহনের কয়েকটি কাউন্টার ঘুরেও এমন চিত্রই দেখা গেল। ১০ মিনিট পর বাস আসার কথা। কিন্তু দেখা গেল তার কম সময়েই বাস আসছে। যাত্রী নির্বিঘ্নে টিকিট কেটে বাসে উঠছে। তবে সবগুলো বাসেই দেখা গেল সিটের সংখ্যার চেয়ে যাত্রী সংখ্যা অনেক কম। এতে যাত্রীদের মধ্যে সন্তুষ্টিও দেখা গেল।
শাহবাগ কাউন্টারের একজন যাত্রী রনজু ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, এই বাসটা অনেক ভালো সেবা দেয়। ঢাকায় যেটা কল্পনাই করা যায় না সেটা এখানে আপনি দেখবেন। ফাঁকা বাস। আরাম করে বসে গন্তব্যে যাওয়া যায়। তবে ফ্লাইওভারের উপর দিয়ে গেলে সময় বাঁচত। নিচে তো অনেক যানজট।
শাহবাগ মোড়েই মেঘলা পরিবহনের কাউন্টারের যাত্রী রফিকুল ইসলামকে প্রশ্ন করা হলো ঢাকা নগর পরিবহন তো অনেক ভালো সার্ভিস। তা সত্ত্বেও কেন আপনি মেঘলা পরিবহনকে বেছে নিচ্ছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে রফিকুল ইসলাম বলেন, অবশ্যই ঢাকা নগর পরিবহন ভালো সার্ভিস। আমিও অনেক দিন ওই বাসে করে গন্তব্যে গিয়েছি। আমি এই রুটের নিয়মিত যাত্রী। কিন্তু এক সময় দেখলাম বাসটি মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের নিচ দিয়ে যাওয়ায় যানজটের কবলে পড়ছে। তাই সময়ও লাগছে অনেক বেশি।।
অন্যদিকে মেঘলা বা অন্য যেসব কোম্পানির বাস রয়েছে সেগুলো ফ্লাইওভারের উপর দিয়ে যাওয়ায় অন্তত এক ঘণ্টা সময় বাঁচে এমনটা জানিয়ে রফিকুল বলেন, এ কারণেই আমার মতো অনেক যাত্রী ঢাকা নগর পরিবহন ভালো হওয়া সত্ত্বেও সেবটা নিচ্ছে না।
শাহবাগ কাউন্টারের মাস্টার জহিরুল ইসলাম ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, আপনি ঠিকই শুনেছেন। মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের উপর দিয়ে গেলে যাত্রী বাড়ত। নিচে যানজটের কারণে প্রাইভেট যেসব কোম্পানির বাস ফ্লাইওভারের উপর দিয়ে যায় সেসব বাসে যাত্রী বেশি।
একই কথা বললেন প্রেসক্লাবের সামনের কাউন্টারের মাস্টার নাঈম হোসেন। ঢাকাপ্রকাশ-কে তিনি বলেন, আমি তো উল্টো দিকে কাউন্টারের মাস্টার। তবে আমি আমার সহকর্মীদের কাছ থেকে শুনেছি যে ফ্লাইওভারের নিচ দিয়ে যাওয়ার কারণে যাত্রী কম হয়।
নাইম হোসেন বলেন, তবে আমার কাউন্টারের অবস্থান যেহেতু ফ্লাইওভার পার হয়ে আসার পর তাই এদিকে সেই সমস্যা নাই। তাই আমার প্রান্তে পর্যাপ্ত যাত্রী আছে।
২০২১ সালের ২৬ ডিসেম্বর রাজধানী ঢাকার গণপরিবহনে শৃঙ্খলা আনতে চালু করা হয় 'ঢাকা নগর পরিবহন'। প্রাথমিকভাবে একটি রুটে ৫০টি বাস দিয়ে এ কার্যক্রম শুরু হয়।
কেরানীগঞ্জের ঘাটারচর থেকে মতিঝিল হয়ে নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর পর্যন্ত চলছে এই ৫০টি বাস। আরও তিনটি রুটে এই বাস সার্ভিস চালু হবে। আগামী ১৩ অক্টোবর থেকে ২টি রুটে বাস সার্ভিস চালু হবে। অন্য একটি রুটে বাস নামানোর সময় নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত।
২০১৬ সালে ঢাকার গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরাতে ৬টি কোম্পানির অধীনে ঢাকার সব বাস চালুর উদ্যোগ নেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) সাবেক মেয়র আনিসুল হক । ৬টি কোম্পানির বাস ৬ রঙের হবে। কিন্তু তার মৃত্যুর পর এ উদ্যোগে ভাটা পড়ে। তারপর অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়। পরিবহন মালিকদের সিন্ডিকেট বাধা হয়ে দাঁড়ায়। ঢাকার দুই মেয়র সরাসরিই বিভিন্ন সময় অভিযোগ করেছেন যে পরিবহন মালিকদের অসহযোগিতার কারণে ঢাকা নগর পরিবহনের রুটগুলোতে বাস নামাতে সময় লাগছে।
আরইউ/এসআইএইচ