নিরুপায় হয়ে জুলুমও সহ্য করছে যাত্রীরা
বাসে উঠলেই সর্বনিম্ন ভাড়ার নামে যাত্রীদের কাছ থেকে ইচ্ছামতো টাকা তুলছেন কন্ডাক্টর। কোনো পরিবহনে ১০ টাকা আবার কোনোটার ভাড়া ১৫ টাকা। সরকার নির্ধারিত নিয়ম-নীতির বালাই নেই বাসচালক ও কন্ডাক্টরদের কাছে। যে যার মতো ভাড়া আদায় করছে বলে অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা। জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির পর বর্ধিত ভাড়া নিয়ে প্রথম দিকে প্রতিবাদ করা লোকগুলোই এখন মুখ বুজে সব জুলুম সহ্য করছেন বলে জানিয়েছেন।
যাত্রীরা মনে করেন, ভাড়া নিয়ে চিল্লাইয়া লাভ নাই। বেশি কথা বললে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেবে। আমাদের তো অফিস করতে হয়, দোকানে যেতে হয়। বাস না নিলে কিভাবে যাবো? এই প্রশ্ন অধিকাংশ যাত্রীর। তাদের দাবি, মিডিয়াতে বললেও কোনো লাভ নাই। কারণ বাস মালিকদের কাছে সরকার জিম্মি।
একজন যাত্রী বিআরটিসি বাসে বলছিলেন, সাধারণ মানুষের কথা শোনার বা বোঝার মানুষ নাই। সবাই যার যার স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত। ভাড়া না বাড়ালে বাস মালিকরা ধর্মঘট ডাকতে পারে। আমরা পাবলিক তো বাসে না চড়ে কর্মস্থলে যেতে পারি না। তাই আমাদের ধর্মঘট ডাক দেওয়া মানে নিজের জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করা।
মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজধানীর শ্যামলী কলেজগেট থেকে বিআরটিসি’র বাসে উঠেন ছালাম মন্ডল। তিনি নামবেন কাওরানবাজার। বাসে ওঠার আগে কলেজগেট বাস স্টপেজের সামনে কথা হয় ছালাম মন্ডলের সঙ্গে। তিনি ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, কাওরানবাজারে একটি দোকানে কাজ করি। সকাল ৮ টায় দোকান খুলতে হয়। বাস না পেলে দোকানে যেতে দেরি হয়। এজন্য মালিকের বকা শুনতে হয়। তাই সকাল সকাল বেড়িয়ে পড়ি।
বাস ভাড়া নিয়ে ছালাম মন্ডলে বলেন, আসাদগেট থেকে কাওরানবাজার কত কিলোমিটার? এই দূরত্বে বিআরটিসি ভাড়া নিচ্ছে ১৫ টাকা। প্রতিদিন ভাড়া নিয়ে বাসের ভেতর দুই-একজনের ঝগড়া শুনতে হয়। কলেজগেট থেকে উঠে আসাদগেটে নামলেও ১০ টাকা দিতে হয়। এ নিয়ে কথা বলতে গেলেই কন্ডাক্টররা বলে ওঠে সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকা। ভাড়া দিতে না পারলে উঠছেন কেন? নামেন। তাই এখন আর কিছু বলি না।
এরপর বাসে উঠে ফার্মগেট পর্যন্ত আসতেই খামাড়বাড়ি এলাকায় এক যাত্রীর সঙ্গে বাকবিতণ্ডা দেখতে পাই বিআরটিসি বাসের কন্ডাক্টরের। মধ্য বয়সী এক লোক ৫ টাকা দিয়ে খামাড়বাড়ি নামতে গেলেই বাসের কন্ডাক্টর বলেন, কোথা থেকে উঠেছেন? যাত্রী বলেন, আসাদগেট থেকে এরপর যাত্রীকে উদ্দেশ্য করে কন্ডাক্টর বলেন, সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকা দেন। গাড়িতে উঠে ধানাই-পানাই করেন টাকা বের করেন। এ সময় ওই যাত্রী অনুনয় করে বলেন, বাবা আমার কাছে টাকা নাই। এরপর লেগে যায় তর্কাতর্কি। কন্ডাক্টর বলেন, গাড়ি উঠলেই যত প্যাচাল। মুখে দাড়ি রাখছেন আর ভাড়া ফাঁকি দেন। এ কথা বলা মাত্রই যাত্রীও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। এভাবেই বাসের ভেতর কথা কাটাকাটি চলে।
এই চিত্র প্রতিদিনের। আরেক যাত্রী সৌরভ একটি বেরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তিনি যাবেন মতিঝিলে। সৌরভ ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, বাসচালক ও হেল্পারদের সঙ্গে কথা বলতে গেলেই ঝগড়া হয়। তাই নিজের সম্মান বাঁচাতে মুখ বুজে সব সহ্য করতে হয়। সরকার জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পর যেভাবে বাস ভাড়া বাড়িয়েছে কমার পর সেটাতো করেনি। তাই আমরা হাজার বলেও লাভ হবে না। লিখলেও কোনো লাভ হবে না। সরকার বাস মালিকদের কাছে জিম্মি। সাধারণ যাত্রীরা প্রতিবাদ করলেই বাস মালিকরা ধর্মঘট ডাক দেয়। আগে যেখানে মতিঝিলে ভাড়া ছিল ১৫ টাকা এখন সেই ভাড়া নিচ্ছে ২৫ টাকা। এসব বলে আসলে কোনো উপায় নেই। আমি কত কিলোমিটার পথ গেলাম কত ভাড়া সেটাই তো জানি না। ওরা যা চায় তাই দিতে হয়। বাসে তো কোনো টিকিট সিস্টেম নাই। বাইরের দেশে দূরত্ব অনুযায়ী টিকিট থাকে আমাদের এখানে সেই ব্যবস্থা নাই। তাই যা ইচ্ছে তাই নিচ্ছে। এগুলো আসলে দেখার কেউ নাই।
এসএম/এসআইএইচ