নতুন ড্যাপে ৫৭৪ কিলোমিটার নৌপথ করার প্রস্তাব
ফাইল ছবি
রাজধানীর হারিয়ে যাওয়া খালগুলো উদ্ধার করে নগরজুড়ে দীর্ঘ নৌপথ করতে চায় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা গেলে রাজধানী ঢাকায় তৈরি হবে কমপক্ষে ৫৭৪ কিলোমিটার নৌপথ।
নতুন বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায় (ড্যাপ) দীর্ঘ এই নৌপথ তৈরির কথা উল্লেখ করেছে রাজউক।
রাজউকের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নতুন ড্যাপে এমন ব্যবস্থা রাখা হয়েছে যাতে প্রত্যেকটি আবাসিক এলাকায় পানির সংস্পর্শ থাকে। এ কারণেই মূলত ৫৭৪ কিলোমিটার নৌপথসহ আরও কিছু পরিকল্পনা রয়েছে ড্যাপে।
তবে কাগজে-কলমে ঢাকার যে ৪৩টি খাল রয়েছে সেগুলোর অধিকাংশই ভরাট হয়ে গেছে। এই খালগুলো মূলত ঢাকা ওয়াসার অধীনে ছিল। সর্বশেষ এগুলো দুই সিটি করপোরেশনের অধীনে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। খাল উদ্ধারের বিষয়ে ড্যাপের পরিকল্পনায় যাই থাকুক না কেন, এক্ষেত্রে রাজউক মূলত দুই সিটি করপোরেশনসহ অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করবে।
ড্যাপের প্রকল্প পরিচালক নগর পরিকল্পনাবিদ আশরাফুল ইসলামও সম্প্রতি একটি সেমিনারে বলেন, ড্যাপ বাস্তবায়নে রাজউক সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদের সঙ্গে কাজ করবে।
জানা যায়, এসব খাল উদ্ধারে নানা ধরনের প্রস্তাবনা রয়েছে ড্যাপে। প্রস্তাবনাগুলোতে খালগুলোর যথাযথ সংরক্ষণ ও বহুমাত্রিক ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে।
এদিকে ঢাকা ওয়াসা থেকে খালগুলো বুঝে নেওয়ার পর ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি খাল উদ্ধারে পদক্ষেপ নেয় ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। এরই অংশ হিসেবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) রামচন্দ্রপুর-লাউতলা খাল উদ্ধার করে দুই পাড়ে গাছ লাগানো এবং পুনরায় যাতে দখল হয়ে না যায় সেজন্য দুই পাড়ে ওয়াকওয়ে নির্মাণ করার উদ্যোগ নিয়েছে। ইতোমধ্যে রামচন্দ্রপুর খাল উদ্ধার করে পানির প্রবাহ নিশ্চিতের চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ওয়াকওয়ে নির্মাণ বা গাছ লাগানোর কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি। এ ছাড়া খালটি উদ্ধার করা গেলেও খালের পরিবেশ বিশেষ করে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ এখনো শতভাগ নিশ্চিত হয়নি।
ময়লা আবর্জনা ও পলিথিনের কারণে খালের স্বাভাবিক গতি নষ্ট হচ্ছে। রক্ষণাবেক্ষণ ও দেখভালের অভাবে রামচন্দ্রপুর খালটি আবারও ভরাট এবং বেদখল হওয়ার শঙ্কা এলাকাবাসীর।
রাজধানীর কল্যাণপুর খাল উদ্ধার করে ৭৩ একর এলাকাজুড়ে প্রকৃতি নির্ভর বিনোদনকেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। ঢাকা ওয়াসার কাছ থেকে খালটি বুঝে পাওয়ার পর উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করে ডিএনসিসি। তবে উদ্ধার করতে গিয়ে নানা জটিলতা দেখতে পায় প্রতিষ্ঠানটি।
কল্যাণপুর খাল উদ্ধার করে নৌপথ করার ঘোষণা আগেই দিয়েছিলেন ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম। সেই লক্ষ্যে কাজও করছে ডিএনসিসি। তবে ঢাকার ৪৩টি খালের মধ্যে ২৬টিরই এখন আর অস্তিত্ব নেই। এগুলো ভরাট করে স্থাপনা হয়ে গেছে। বাকি যেগুলো আছে সেগুলোও দখল-দূষণে করুণ অবস্থা। এসব খাল উদ্ধার করে নৌপথ করার বিষয়টি কতটুকু সম্ভব সেটা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পরিবেশবাদীরা।
জানতে চাইলে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) সভাপতি আবু নাসের খান ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, প্রথমত খালগুলো উদ্ধার করা প্রয়োজন। এটা ফরজ। এখন কথা হলো যদি না করতে পারেন তাহলে কী হবে? তাহলে এখন যা হচ্ছে তাই হবে।
তিনি বলেন, ৪৩টি খালের বাইরেও আরও অনেক এলাকা যুক্ত হয়েছে। এই খালগুলো উদ্ধার করে নৌপথ করা হলে একদিকে যেমন বৃষ্টি হলে পানি ধরে রাখা যাবে। অন্যদিকে বন্যা-জলাবদ্ধতার হাত থেকেও নগরবাসী বাঁচতে পারব। পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্যও এটি করা দরকার।
এক প্রশ্নের জবাবে আবু নাসের খান বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবের কারণে অতিবৃষ্টি, খরা হচ্ছে। ইউরোপে এবার দেখা গেল, যেখানে গত ৫০০ বছরে খরা হয়নি সেখানে এবার খরা ও তাপদাহ হয়েছে। কাজেই আমাদেরও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় খাল-জলাশয় উদ্ধার করে সংরক্ষণ করতে হবে। না হলে সর্বনাশের দিকেই হাঁটতে থাকব।
এনএইচবি/এসজি