মিরপুরে প্রধান সড়কের অর্ধেক হকারদের দখলে!
রাজধানীর ব্যস্ততম মিরপুর এলাকার ফুটপাতসহ প্রধান সড়কের অর্ধেকটা দখল করে চলছে হকারদের রমরমা ব্যবসা। মাসে কোটি টাকার চাঁদাবাজিও হচ্ছে। ফুটপাত ছাড়িয়ে প্রায় চার লেনের চওড়া রাস্তার দুই লেনই দখল করে ব্যবসা করছেন হকারা।
এখান থেকে মাসে কোটি টাকার লেনদেন করছেন হকার নেতারা। ফুটপাতের একাধিক ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে বলেন, প্রসাশনসহ সরকার দলীয় নেতা -কর্মীরা এসব টাকা ভাগ করে খাচ্ছেন। ফুটপাতের পজিশন নিতে প্রথমে দিতে ৪০-৫০ হাজার টাকা। আবার প্রতিদিন দিতে হয় ৩-৪ শ টাকা। এ ছাড়া, আরও অনেককে ম্যানেজ করতে হয়।
তারা শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদাতের নামে টাকা উঠায়। এতে করে শুধু পথচারীই নয়, চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে যানবাহনগুলোকেও। বিশেষ করে মিরপুর-১ নম্বর গোলচত্বর থেকে শাহ আলী মাজার যেতে বিশাল চওড়া রাস্তার অর্ধেকের বেশি দখলে থাকে হকারদের। ক্রেতা-বিক্রেতা একাকার হয়ে যায় প্রধান সড়কেই। একই অবস্থা দারুস সালাম ও চিড়িয়াখানা রোড, মিরপুর নিউমার্কেট, মুক্তবাংলা মাার্কেট, মুক্তিযোদ্ধা মার্কেট সিটি করপোরেশন মার্কেট, শাহ আলী কলেজ মার্কেটের সামনের রাস্তারও।
হক প্লাজা, কো-অপারেটিভ মার্কেট, ক্যাপিটাল মার্কেট, মুক্তি প্লাজা, প্রিন্স প্লাজার ও বাগদার শপিং কম্পে্লক্স মার্কেটের সামনের অবস্থাও প্রায় একই। তবে এসব এলাকার রাস্তা দখল এবং ফুটপাতের অবস্থা বেগতিক। অভিযোগ রয়েছে, প্রশাাসনকে ম্যানেজ করে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে রাস্তাকে পজিশন বিক্রি করা হয়েছে। ফলে যেখানে বসে নিশ্চিন্তে ব্যবসা করছেন হকাররা। এসব হকারদের কারণে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন মার্কেটের ব্যবসায়ীরাও।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ ফুটপাত, রাস্তা দখল করে হকার বসিয়ে স্থানীয় নেতারা প্রতিদিন কয়েক লাখ টাকা চাঁদাবাজি করছে। যার ভাগ প্রশাসনের বিভিন্ন মহলেও পৌঁছে যাচ্ছে। এমনকি সরকার দলীয় নেতা-কর্মীরাও বাদ নেই। কিন্তু এ কারণে মূল মার্কেটের ব্যবসা কমে যাচ্ছে।
অভিযোগ রয়েছে মুক্তিযোদ্ধা মার্কেট, হক প্লাজা, ক্যাপিটাল মার্কেট, কো-অপারেটিভ মার্কেট, মুক্তি প্লাজাসহ শাহ আলী মার্কেটের আশপাশের চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ করছেন খলিল মিয়া, মো. হান্নান, হিরু মিয়া, আকবার ও নুরু মিয়াসহ কয়েকজন। তারা নিজেরাও দোকান বসিয়েছে।
তারা বলেন, সবাই এসে আমাদেরকে ধরেন । আমরা বাধ্য হয়ে মোটা অস্কের টাকা নিয়ে হকারদেরকে বসতে দেই। তাদের নিয়ন্ত্রিত বাহিনীর সদস্যরা শুধু ফুটপাতই নয়, রাস্তা দখল করে পজিশন বিক্রি করছে হকারদের কাছে। সকাল থেকেই রাস্তা ও ফুটপাত দখল হয়ে যায়। রাস্তায় দেখা দেয় তীব্র যানজট। লেগুনার চালক আলম মিয়া বলেন, ঢাকায় এত চওড়া রাস্তা খুবই কম এলাকাতেই আছে। কিন্তু চওড়া হলে কী হবে। হকারদের কারণে আমরা তার সুফল ভোগ করতে পারি না। সব যায়গায় ফুটপাত দখল করলেও এখানে রাস্তাই দখল করে বসে আছে। থানা পুলিশ, ট্রাফিক পুলিশ সব দেখছে। কিন্তু কেউ কিছুই বলছে না। মার্কেটের কয়েক জন ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করে বলেন, হকারদের এ উৎপাতে আশপাশের মার্কেটগুলোর ব্যবসায়ীরা সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। রাস্তা, ফুটপাথ বন্ধ থাকার কারণে ক্রেতারা মার্কেটে আসতে পারেন না। যার কারণে তাদের বিক্রিও তেমন হয় না। এসব বিষয়ে কোনো কথা বলতে গেলে দখলদার সন্ত্রাসীরা নানা ধরনের হুমকি দিতে শুরু করে। শুধু তাই নয়, মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দিয়ে থাকে।
রাস্তায় পজিশন নেওয়া ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম ও লোকমান বলেন, মোটা অঙ্কের টাকা চাঁদা দিয়ে বসার জায়গাটুকু পেয়েছি। তার পরও প্রতিদিন তাকে ৩০০ টাকা করে চাঁদা দিতে হয়। বিক্রি হোক বা না হোক এই চাঁদা তাকে দিতেই হবে। এটা এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে। কিন্তু এর বাইরে যখন চাঁদা দিতে হয় তখন ব্যবসায়ীদের পুঁজি ভেঙে খাওয়া ছাড়া কোনো পথ থাকে না।
তিনি বলেন, ফুটপাতে খুবই কম লাভে পণ্য বিক্রি করতে হয়। এখন প্রচুর দোকান থাকায় খুব বেশি লাভও হয় না। তার মধ্যে থানা, পুলিশ, লাইনম্যান, ঝাড়ুদার, সোর্স এবং এলাকার বিভিন্ন সংগঠনের নেতাদের আলাদা আলাদা করে টাকা দিতে হয়। কেউ দিন হিসেবে আবার কেউ সপ্তাহ হিসেবে এসব টাকা নিয়ে থাকে। আর যাদের কাছ থেকে জায়গা বা পজিশন নিয়েছি তাদের তো আলাদাভাবে চাঁদা দিয়ে জায়গা রক্ষা করতে হয়।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, মাঝে মধ্যেই সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়। কিন্তু তাতে লাভ হয় না।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, যদি প্রসাশনের লোকজন এসব অনৈতিক কাজে জড়িত থাকেন তাহলে তো আর উচ্ছেদ করেও কোনো লাভ হচ্ছে না। একদিকে উচ্ছেদ হচ্ছে আবার কিছুক্ষণ পরে হকাররা আবার দোকান বসাচ্ছে। তাই পুলিশের পক্ষ থেকে কার্যকরি পদক্ষেপ নেওয়া হলে উচ্ছেদের পর নতুন করে হকার বসতে পারবে না।
মিরপুর জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন মোল্লাহ জানান, অতি তাড়াতাড়ি মিরপুর এলাকার ফুটপাথ ও রাস্তা দখল থেকে হকারদের উচ্ছেদ করে দখলমুক্ত করা হবে।
এএইচ/এমএমএ/