মাঠ-পার্ক কেটে প্লট বানানো হয়েছে রাজউক প্রকল্পে!
বাসযোগ্যতা হারাচ্ছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) আবাসন প্রকল্পগুলো। চাহিদা বেশি থাকায় প্রকল্পগুলোতে খেলার মাঠ, পার্কসহ কমন স্পেসগুলো কেটে প্লট বানানো হয়েছে। মানুষও বসাবস করে ধারণক্ষমতার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি।
প্রায় দুই যুগ আগে প্রকল্পগুলোর কাজ শুরু হয়। এখনো শেষ হয়নি। তবে রাজউক অধিকাংশ গ্রাহককে প্লট বরাদ্দ দিয়েছে। এসব প্লটে গ্রাহকরা ইতিমধ্যে বাড়ি নির্মাণ করে থাকছেন। কিন্তু এসব বাড়ি নির্মাণে যথাযথ মান অনুসরণ করা হচেছ না বলে অভিযোগ উঠেছে।
১০ লাখ মানুষের থাকার উপযোগী করে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের নকশা করেছিল রাজউক। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা প্রকল্পটি আন্তর্জাতিক মানের দাবি করলেও বাস্তবতা হলো, রাজউক তাদের নিজেদের মানই অনুসরণ করেনি। এই প্রকল্পটিতে অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রকল্পগুলোর শুরুতে রাজউক স্ট্যান্ডার্ড অনুসরণ করেছিল। কিন্তু পরে পার্ক ও খোলা জায়গা কমিয়ে প্লটের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। খেলার মাঠ কেটেও প্লট করা হয়েছে।
শুধু পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পই নয়, ঝিলমিল আবাসিক প্রকল্প, উত্তরা (তৃতীয় পর্যায়) প্রকল্প এবং উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্পেরও একই অবস্থা। এ ছাড়া, উত্তরা প্রকল্পের প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে মান বজায় রাখা হয়নি।
ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান এ প্রসঙ্গে ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, উত্তরা আবাসিক প্রকল্পে ১৫ হাজার প্লট আছে। ১৬২০ বর্গফুটের প্রতিটি ফ্ল্যাটে ছয়জন করে বসবাস করলে সেখানে প্রায় এক লাখ মানুষ বসবাস করবে। কিন্তু প্রকল্পটিতে একটি মাত্র ইংলিশ মিডিয়াম প্রাইমারি স্কুল আছে। এখানে কমপক্ষে ১৬টি প্রাইমারি স্কুল ও ১০ টি হাইস্কুল থাকার কথা।
আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, রাজউকের আবাসন প্রকল্পগুলোতে এ ধরনের অনেক সমস্যা রয়েছে। রাখা হয়নি প্রয়োজনীয় সংখ্যক স্কুল, কলেজ বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। পার্ক, খোলা জায়গা ও খেলার মাঠের অভাব রয়েছে।
রাজউকের পূর্বাচল প্রকল্পেই প্লটের সংখ্যা বাড়াতে ৫ দফা নকশা কাটছাট করা হয়েছে। চতুর্থবার কাটছাট করার পর হাইকোর্ট নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল আর কাটছাট না করার। কিন্তু আদালতের সেই নির্দেশ উপেক্ষা করেই পঞ্চম দফা মূল নকশা কাটছাট করেছে রাজউক।
নগর পরিকল্পনাবিদরা বলেন, পরিকল্পিত আবাসিক এলাকার জন্য রাজউকের একটি মানদণ্ড রয়েছে। ৫০ একর জমিতে সাড়ে ১২ হাজার মানুষ বাস করবে। প্রতিটি ইউনিটে দেড় একর জমিতে তিনটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দুটি উচ্চ বিদ্যালয়, দুটি পার্ক এবং একটি জলাধার থাকবে। তিনটি খেলার মাঠ, দুটি কমিউনিটি সেন্টার এবং দুটি কমিউনিটি ক্লাব থাকবে।
জানা যায়, পূর্বাচল প্রকল্পের শুরুতে ১৮২টি নার্সারি ও প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়। কিন্তু মানদণ্ড অনুযায়ী থাকার কথা ২৪০টি। ৩৬০টি মাধ্যমিক স্কুল ও কলেজ থাকতে হবে। কিন্তু রাখা হয়েছে ২৯৯টি। ১২০টি পার্ক থাকার কথা থাকলেও এখানে আছে মাত্র ৬১টি। মানদণ্ড অনুযায়ী ৭২০ একর জলাশয় থাকার কথা ছিল। কিন্তু আছে ২৬০ একর।
উত্তরা তৃতীয় পর্যায়ের প্রকল্পে সাত লাখ লোকের থাকার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। এর আয়তন ২০০৬ একর। কিন্তু মান অনুযায়ী যে সুবিধা পাওয়ার কথা ছিল তার অর্ধেকও এই প্রকল্পে নেই।
উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্পে ১৫ হাজার অ্যাপার্টমেন্টের পরিকল্পনা রয়েছে। ২১৪ একরের এই প্রকল্পে ইতিমধ্যে সাড়ে ৬ হাজার অ্যাপার্টমেন্ট তৈরি করা হয়েছে। প্রকল্পের মধ্যে একটি মাত্র স্কুল রয়েছে।
৩৬১ একর ঝিলমিল আবাসিক প্রকল্পটি করা হয় তিন লাখ মানুষের বাসযোগ্যতা মাথায় রেখে। এই প্রকল্পের ২৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকার কথা থাকলেও আছে মাত্র ১২টি। মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজ রয়েছে মাত্র দুটি।
রাজউকের বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনার (ড্যাপ) প্রকল্প পরিচালক আশরাফুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, প্রকল্পগুলো গড়ে তোলার পর ধীরে ধীরে জনবসতি বৃদ্ধি পায়। যদি পূর্বাচলে ১০ লাখ মানুষ বাস করত, তাহলে ঠিক ছিল।
এনএইচবি/এমএমএ/