রাজধানীতে ভয়াবহ যানজটে ভোগান্তিতে যাত্রীরা
রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে আজ সকাল থেকেই তীব্র যানজট লেগে আছে। প্রতিদিন ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে ঢাকার যানজট। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। রবিবার (১১ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এসব চিত্র দেখা গেছে।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সকাল থেকেই রাজধানীর সড়কগুলোতে যানজটের কারণে দুর্ভোগে পড়েন কর্মজীবী মানুষ। সন্ধ্যা পর্যন্ত এ যানজট আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করছেন পরিবহনের চালক ও সহকারীরা। তারা বলছেন, সপ্তাহের শুরুর দিন হওয়ায় অনেকে গ্রামের বাড়ি থেকে এসে অফিস করছেন। যার ফলে রাস্তায় মানুষের চাপ বাড়ে ও যানজট সৃষ্টি হয়।
অনেকেই বলছেন, প্রতি দিনই যানজট বাড়ছে, কমছে না। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি, মেট্রোরেল নির্মাণ, এলিভেটর এক্সপ্রেসওয়েসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের কাজে যানবাহন চলাচল বিঘ্ন হচ্ছে। এ ছাড়াও রাস্তায় ধীরগতির যানবাহন, উল্টোপথে গাড়ি চলাসহ নানা কারণে যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হচ্ছে।
এদিকে, বিমানবন্দর সড়ক, ডিআইটি সড়ক, খিলগাঁও রেলগেট, বাসাবো, মানিকনগর, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, গুলিস্তান, ফকিরাপুল, পল্টন, শাহবাগ, কাকরাইল, বাংলামটর, কারওয়ানবাজার, বনানী, মহাখালী, মিরপুর, ফার্মগেট, কাওরান বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় তীব্র যানজট দেখা গেছে।
প্রতিটি মোড় অতিক্রম করতে যানবাহনগুলোকে তিন থেকে চারটি সিগন্যালের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে। যানবাহন নিয়ন্ত্রণে সকাল থেকেই ট্রাফিক পুলিশকে দেখা গেছে হিমশিম খেতে।
নগরীতে গণপরিবহন, ব্যক্তিগত যানবাহনের পাশাপাশি সিএনজি অটোরিকশা, মোটরসাইকেলের চলাচলও বেড়েছে। এদিকে সড়কে বিভিন্ন পয়েন্টে যাত্রী তোলার জন্য গণপরিবহনগুলো সড়কের অনেকটা জায়গা জুড়ে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। যাত্রী-পথচারীদের তাড়াও বেড়েছে সব মিলিয়ে রাজধানীর সড়কগুলোতে আজ তীব্র যানজট যার কারণে ক্ষুদ্ধ পথচারীরা।
রাজধানীর প্রবেশদ্বার আব্দুল্লাহপুর মোড়ে রয়েছে গণপরিবহণের তীব্র চাপ। এই মোড়ে সারি সারি বাস সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। সেই সঙ্গে আব্দুল্লাপুর মোড়ের শেষ প্রান্তে সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে দূরপাল্লার গণপরিবহনগুলোকে।
কারওয়ান বাজারে আবির হোসেন নামে এক পথচারী বলেন, যানজট প্রতিদিনের সমস্যা। রাজধানীতে থাকতে হলে যানজটকে সঙ্গে নিয়েই থাকতে হবে। কারণ যে পরিমাণে গাড়ি সড়কে বেড়েছে তার যাত্রীদের তুলনায় অনেক বেশি এবং এসব গাড়ি একসঙ্গে চলাচলে পর্যাপ্ত সড়ক নেই। যেটুকু আছে সেখানেও সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ চলছে বছরের পর বছর।
তিনি বলেন, এখনও রাজধানীর বিভিন্ন সড়কের পাশে ব্যক্তিগত গাড়ি পার্কিং করে রাখা হচ্ছে। অথচ অধিকাংশ ভবনের ভেতরে সঠিক পার্কিংয়ের ব্যবস্থা নেই। এতেও যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
উত্তরা থেকে শাহবাগে আসা মনির হোসেন বলেন, এত যানজট ভালো লাগে না, দিনের অনেকটা সময় রাস্তায় শেষ হচ্ছে। অফিস করতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। প্রতিদিন সকাল থেকে একই যুদ্ধ করতে হচ্ছে। যানজটের সঙ্গে যুদ্ধ করতে করতে হাঁপিয়ে উঠেছি।
আজিমপুরে কথা হয় নজরুল ইসলাম নামে এক পথচারীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আজ রাস্তায় প্রচুর যানজট।’ নিউ মার্কেটে কথা হয় হোসেন মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘রাস্তায় ভয়াবহ যানজট, রাস্তায় বের হলে গাড়িতে বসে থাকতে থাকতে কিছু আর ভালো লাগে না।
এদিকে যানজটের বিষয়ে একাধিক ট্রাফিক পুলিশের সদস্যদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, প্রতিদিনই রাস্তায় যানজট থাকে। সরকারিভাবে কিছু পদক্ষেপ না নিলে যানজট নিরসন করা সম্ভব না। পুলিশের ট্রাফিক সদস্যরা বলছে, যানবাহন চালকেরা সঠিক নিয়ম মেনে চলাচল করে না। এতে সড়কে নানা ধরনের জটিলতার সৃষ্টি হয়। তা ছাড়া সড়কে চলাচলে যাত্রী-পথচারী ও যানবাহনের চালক কেউই আইন মেনে চলে না। তাই যানজট সমস্যা কমছে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ট্রাফিক) প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. মুনিবুর রহমান বলেন, রবিবারে একটু রাজধানীতে যানজট দেখা যায়। কিছু কিছু রাস্তার কাজ চলছে এবং ছোট হয়ে আছে। মেট্রোরেলের কাজ চলছে যার কারণে মনে হয় যানজট। তিনি বলেন, আমাদের ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা যানজট নিরসনে যথেষ্ট দায়িত্ব নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। ট্রাফিক পুলিশ চাই না, যে রাস্তায় যানজট তৈরি হোক। তারা সব সময় রাস্তায় দাঁড়িয়ে থেকে মানুষকে সেবা দিয়ে যাচ্ছে।
কেএম/এসএন