থানায় মৃত্যু: মামলা না করে মরদেহ নেবে না পরিবার
রাজধানীর হাতিরঝিল থানা হেফাজতে এক তরুণের মৃত্যুর ঘটনায় হত্যা মামলা না করে মরদেহ নেবেন না বলে জানিয়েছেন নিহতের স্ত্রী ও সম্বন্ধী। রবিবার (২১ আগস্ট) মামলা করার জন্য গেলেও আদালতের সময় শেষ হওয়ায় মামলা করা যায়নি বলে জানিয়েছেন নিহতের সম্বন্ধী মোশাররফ হোসেন।
পুলিশ জানিয়েছে গত শুক্রবার রাতে হাতিরঝিল থানা হাজতে ওই তরুণ আত্মহত্যা করেন। তবে নিহতের স্ত্রী ও সম্বন্ধীর দাবি, তাকে হত্যা করা হয়েছে।
নিহত সুমন শেখের স্ত্রীর বড় ভাই (সম্বন্ধী) মোশাররফ হোসেন বলেন, আমার ভগ্নিপতিকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা আদালতে মামলা করব। মামলা না করা পর্যন্ত হাসপাতাল থেকে আমরা মরদেহ নেব না।
মোশাররফ জানান, এই ঘটনায় যেন বিক্ষোভ না হয় সেজন্য পুলিশ তাদেরকে গোপনে মরদেহ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যেতে বলেছিল। তাতে তারা রাজি না হয়ে বলেছেন মামলা দায়েরের পর তারা মরদেহে বুঝে নেবেন।
তবে পুলিশ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের পর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।
মামলা না করে স্বামীর মরদেহ নেবেন না বলে জানিয়েছেন নিহতের স্ত্রী জান্নাত আক্তারও। শিশুসন্তান রাকিবকে (৬) কোলে নিয়ে রবিবার আদালতে গিয়েছিলেন তিনি মামলা করতে। তিনিও জানালেন মামলা না করে মরদেহ তারা গ্রহণ করবেন না।
পুলিশের দাবি চুরির মামলার আসামি সুমন থানা হাজতের ভেতর আত্মহত্যা করেছেন। আর পরিবারের দাবি, সুমনকে থানা হেফাজতে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ স্বজন ও এলাকাবাসী শনিবার হাতিরঝিল থানার সামনে বিক্ষোভ করেন। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) হেমায়েত হোসেন ও কনস্টেবল মো. জাকারিয়াকে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। পুলিশ ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে।
মামলা করতে গিয়ে আদালত এলাকায় জান্নাত বলেন, দেশে বিচার আছে, চুরি করলে বিচার হবে। থানা হেফাজতে তাকে হত্যা করা হলো কেন? ইউনিলিভারের পিওরইট কোম্পানি ও পুলিশ আমার স্বামীকে হত্যা করেছে। আমার কাছে পুলিশ পাঁচ লাখ টাকা দাবি করেছিল। টাকা না দেওয়ায় তাকে হত্যা করা হয়েছে।
নিহতের পরিবার জানায়, সুমন শেখ রাজধানীর রামপুরায় ইউনিলিভারের পানি বিশুদ্ধকরণ যন্ত্র পিওরইটের বিপণন কার্যালয়ে ছয় বছর ধরে চাকরি করতেন। তার মাসিক বেতন ছিল ১২ হাজার টাকা। গত শুক্রবার রাতে বাসা থেকে পুলিশ তাকে মারতে মারতে তুলে নিয়ে যায়। আটকের খবর পেয়ে রাতেই সুমনের পরিবার থানায় যায়। এ সময় তাদের জানানো হয়, শনিবার সকালে সুমনকে আদালতে পাঠানো হবে। সকালে পরিবারের সদস্যরা থানায় গেলে পুলিশ সুমনের মৃত্যুর কথা জানায়।
পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) আজিমুল হক শনিবার রাতে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, গত ১৫ আগস্ট ইউনিলিভারের পিওরইট কোম্পানি থেকে ৫৩ লাখ টাকা চুরি হয়। এ ঘটনায় মামলার পর আল-আমিন, সোহেল রানা ও অনিক হোসেনকে গ্রেপ্তার করে হাতিরঝিল থানা। তারা এখন কারাগারে।
জিজ্ঞাসাবাদে ওই তিনজনের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ও চুরির ঘটনায় সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে সুমন শেখকে শনাক্ত করা হয়। পরে শুক্রবার বিকালে রামপুরা মহানগর এলাকার বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ সময় তার বাসা থেকে নগদ ৩ লাখ ১৩ হাজার ৭০০ টাকা উদ্ধার করা হয়। পরে তাকে নিয়ে অভিযান চালানো হয়। অভিযান শেষে রাত ১১টার দিকে তাকে থানা হেফাজতে রাখা হয়।
তিনি আরও বলেন, শনিবার সকালে সুমন শেখকে আদালতে পাঠানোর কথা ছিল। কিন্তু শুক্রবার দিনগত রাত ৩টা ৩২ মিনিটে পরনে থাকা ট্রাউজার দিয়ে লোহার গ্রিলের সঙ্গে গলায় ফাঁস দেয় সে। যা সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে। ফুটেজটি নিহতের স্ত্রীসহ স্বজনদেরও দেখানো হয়েছে।
তবে নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে সুমনকে মারধর করে হত্যার যে অভিযোগ করা হচ্ছে, এ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার বলেন, এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি।
এমএ/এমএমএ/